Ads Golpo.Best Kobita.Best

search

কুয়াশা - ১ | পর্ব - ৯


বিছানায় শুয়ে শহীদ ভাবতে লাগলো রফিকুল ইসলামের কথা। ভদ্রলোক যে রকম সরোদ বাজায় সে স্ট্যান্ডার্ডে উঠতে হলে অন্ততঃ দশ বছরের কঠোর সাধনা চাই। একজন লোক, এতো যার সাধনা, সে আত্মপ্রকাশ করে না কেন? এতোবড় সাধক, মানুষের চোখে পড়লো না! কতো বড় প্রতিভাবান হলে কারো কাছে না শিখে এমন বাজানো সম্ভব! পৃথিবীতে কেউ জানবে না কতো বড় একজন শিল্পী অপ্রকাশিত রইলো।

বেলা প্রায় এগারোটায় শহীদের ঘুম ভাঙলো। মাঝে হরিদাস একবার দরজায় টোকা দিয়েছিল। ওকে বিরক্ত করতে মানা করে দিয়ে আবার ঘুমিয়েছে।

বিকেলে আশরাফ চৌধুরী এলো। সাথে সাথেই রফিকুল ইসলাম এসে ঢুকলো ঘরে। ওদের বসিয়ে সে চাকরকে ডেকে চা-বিস্কিট আনতে হকুম দিলো।

আশরাফ চৌধুরী অতি সাবধানে। দলিল, পরচা, নক্সা, ইত্যাদি বের করে টেবিলের উপর রাখলো। অতি বিচক্ষণের মতো শহীদ সে সব পরীক্ষা করে নানান রকম বৈষয়িক প্রশ্ন করলো। টুকে নিলো খাজনা কতো, টাকা বাকি আছে কিনা, জমি বরগা দিয়েছে কিনা, দাগ নম্বর কতো ইত্যাদি আরও কতো কি তথ্য। রফিকুল ইসলাম টেবিল থেকে একটা বই তুলে নিয়ে পাতা উল্টাতে লাগলো। শহীদ মনে মনে বললো, ভাগ্যিস বইটাতে নাম লিখিনি এখন পর্যন্ত!



আশরাফ সাহেবের দিকে ফিরে শহীদ বললো, আমার নায়েবকে চিঠি লিখে দেবো সে টাকা নিয়ে আসবে তারপর যা হয় একটা ব্যবস্থা করবো। আপনি এর মধ্যে চিন্তা করে দেখুন কিছু কমাতে পারেন কি না। আর আমিও এদিক ওদিক আরও কিছু খোঁজখবর করে দেখি কোথায় সুবিধা হয়।

তা তো বটেই। এখন পর্যন্ত জায়গাটা আপনি দেখেনইনি। এখনই আপনার কাছ থেকে কোনো মতামত আশা করা যায় না।

এমন সময় রফিকুল ইসলাম বললো, কতখানি জমি কিনছেন আপনি? আমি কয়েকটা জমির খোঁজ দিতে পারি। ঐ তো মদনপুরের রহিমুদ্দিন ভূইয়া জমি বিক্রি করবে। এখানকার জমিদার নারাণ বাবু তার এষ্টেট গোটাই বিক্রি করে ইঙিয়া চলে যাবেন। গড়াই নদীর ওপারে কয়েকজন…

আপনি নাম ঠিকানাগুলো আমাকে লিখে দিন দয়া করে, নইলে আমার মনে থাকবে না বাধা দিয়ে বলে শহীদ। বলে বাক্স থেকে একটা নোটবুক বের করে দিলো রফিক সাহেবের হাতে। নাম-ঠিকানা কয়টা লিখে নোট বইটা শহীদের হাতে দিয়ে বললো, এদের সবার কাছেই আমার নাম বললে এরা খুব খাতির করবেন, দামের দিক দিয়েও হয়তো সুবিধা হতে পারে।



লেখাটার উপর একবার চোখ বুলিয়ে নিয়ে শহীদ বললো, আমি এদের সাথে দেখা করবো। সম্ভব হলে কালই।

আশরাফ চৌধুরী চা খেয়েই উঠে গেলেন শহীদের একটা গোপন ইঙ্গিতে। শহীদ রফিক সাহেবকে বললো, চলুন না নদীর ধারে একটু বেড়িয়ে আসি? আমার পেটে আবার একটু গ্যাসট্রিক গোছের আছে কিনা, নদীর বাতাসটায় খুব উপকার হয়।

চলুন। উঠে দাঁড়ায় রফিকুল ইসলাম।

দুজনে একটা পাথরের উপর গিয়ে বসলো। কিছুক্ষণ চুপচাপ থেকে রফিকুল ইসলাম বললো, রবীন্দ্রনাথের শিলাইদহ এখান থেকে কতদূর জানেন?

না। কত দূর?

মাত্র চার পাঁচ মাইল।

তাই নাকি, চলুন না, একদিন দেখে আসি?

চলুন কাল পরশু কোনো একদিন। আমার একটা লঞ্চ আছে, তাতেই যাওয়া যাবে, কি বলেন?

আপনার লঞ্চ আছে নাকি? কোথায়?

এখন সেটা গোয়ালন্দে, কাল এসে পৌঁছবে। এই সামনেই সেটা নোঙ্গর করে রাখি। আমার বিজনেসের জন্যে খুবই কাজে লাগে।

কিসের ব্যবসা করেন আপনি? জিজ্ঞেস করে শহীদ।

কিছু জামি আছে, তাতে আখ চাষ করি। আখের কল আছে তাতে গুড় তৈরি করি। অনেক আখ বাইরে থেকেও কিনতে হয়। সে গুড় ঢাকায় চালান করি। এছাড়া আরো কতগুলো প্রাইভেট বিজনেসও আছে—পারমিটের ব্যাপার।

গুড়ের ব্যবসায়ে লাভ কি রকম?

প্রচুর লাভ। ইনভেষ্টমেন্টের দ্বিগুণ। আপনাদের ওদিকে আখ কেমন হয় বলুন। তো? আমাদের ওদিকে আখের চাষ বিশেষ নেই, কিন্তু জমি আখের জন্যে খুব suitable. আর সস্তাও খুব, দুশ করে বিঘা আবাদী জমি। মাঝে মাঝে একশোও হয়, পঞ্চাশেও নামে।

বাঃ খুব সস্তা তো। ওদিকে ছেড়ে এদিকে জমি কিনতে চান কেন?



একটু রহস্যময় হাসি হেসে শহীদ বললো, ব্যাপার কি জানেন, আমি আসলে নারায়ণ বাবুর এস্টেট বিক্রির খবর পেয়েই এসেছি। কাউকে বলিনি। জানেনই তো, আমাদের সাথে সাথেই টাকা থাকে, ব্যাঙ্কে কিছু রাখি না, এই বিদেশ বিভূঁহয়ে চোর ডাকাত পড়তে কতক্ষণ?

আপনি সাথে করে সব টাকা এনেছেন বুঝি?

আপনি খেপেছেন। তাই সম্ভব? একটা বন্দোবস্ত হলে নায়েবকে টেলিগ্রাম করবো। সে-ই নিয়ে আসবে সব টাকা।

আপনার স্ত্রী কি রায়পুরাতেই আছেন নাকি অন্য কোথাও?

মুখটা গভীর হয়ে গেল শহীদের। বললো, আমি আজ দশ বছর ধরে বিপত্নীক। আর বিয়ে-থা করিনি। একটা৷ মেয়ে ছিলো, দুবছর হলো বিয়ে দিয়েছিলাম, সে-ও মাস ছয়েক হলো একটা বাচ্চা রেখে মারা গেছে।

কিছুক্ষণ দুজনেই চুপচাপ। শহীদ বললো, আপনি বিয়ে করেননি বুঝি এখনও?

না। ইচ্ছেও নেই।

আপনি কি মনে করেন না জীবনটা ফুরিয়ে যাবার আগে ভোগ করে নেয়াই সমীচীন?

নিশ্চয়ই। জোরের সাথেই বলে রফিকুল ইসলাম, আপনার কথা ঠিক। কিন্তু সবার ভোগ তো সমান নয় অনাথ বাবু। আমিও ভোগ করছি জীবনটা। নইলে বাচি কি করে; তবে আমার ভোগে নারীর দরকার হয় না।

শহীদ আর কথা বাড়ায় না। তার কোন একটু শীত শীত করছে। সে বললো, এখন ওঠা যাক, রফিক সাহেব।

আপনি যান। আমি সন্ধ্যার পর বাসায় ফিরবো। এই আমার নিয়ম। রোজ বিকেলে বসি, সঙ্ক্যের পর উঠি। পকেট থেকে একটা বোতল বের করে কিছু হুইস্কি গলায় ঢাললো সে। আসবেন আজ?

আসবো। আপনি বিরক্ত না হলে ঠিকই হাজিরা দেবো আপনার বাসায়।

Facebook Twitter WhatsApp Email
Categories: কুয়াশা - ০১


পূর্ববর্তী :
Previous post:« ০৮. রাত দেড়টা
পরবর্তী :
Next post:১০. কামালের চিঠি এলো »
LEAVE A REPLY
Your email address will not be published. Required fields are marked *

COMMENT


NAME *


EMAIL *


WEBSITE




Search for:

0 Response to "কুয়াশা - ১ | পর্ব - ৯"

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন

মোট পৃষ্ঠাদর্শন