Ads Golpo.Best Kobita.Best

search

কুয়াশা - ১ | পর্ব - ৪


চার পাঁচ দিন পার হয়ে গেছে। শহীদের শোবার ঘরে পা থেকে গলা পর্যন্ত ভালো করে আলোয়ান মুড়ি দিয়ে শহীদ আর কামাল রেডিয়ো শুনছে। কলকাতায় তানসেন সঙ্গীত সম্মেলন হচ্ছে-তারই রীলে শুনছে দুজন। উচ্চাঙ্গ সঙ্গীত শুনবার অত্যন্ত আগ্ৰহ উভয়েরই। মনের এই দিকটায় দুজনের অস্তৃত মিল। রবিশঙ্করের সেতার হচ্ছে। ললিত রাগে আলাপ চলছে। অপূর্ব সুন্দর বাজাচ্ছে। ঠিক মনের কথাটা সুর হয়ে বেরিয়ে আসছে যেন। শহীদ মনে মনে আওড়ায় তড়পত হু য্যয়সে জল বিন মীন। তন্ময় হয়ে গিয়েছে দুজন।

রাত সাড়ে-বারোটার দিকে বাজনা প্রায় শেষ হয়ে এলো। অতি দ্রুত লয়ে ঝালা চলছে, ঝালার মধ্যে ছোটো ছোটো গমক তান। তবলা প্ৰাণপণে বাজাচ্ছে, এ-ও যে সে নয়, চতুরলাল তবলুচি।

ঠিক এমনি সময়ে ক্রিং ক্রিং করে ড্রইংরুমে ফোন বেজে উঠলো। সমস্ত মুখটা বিরক্তিতে বিকৃত করে শহীদ উঠে গেল। ফোন বেজেই চলেছে। রাগ লাগে শহীদের।

শহীদ যখন ফিরে এলো তখন একটা লম্বা তেহাই দিয়ে শেষ হলো বাজনা। রেডিয়ো বন্ধ করে দিয়ে কামাল জিজ্ঞেস করলো, কিসের ফোন রে?



লোকমান সাহেব ফোন করেছিলেন। আবার আরেকখানে চুরি। মানুষও একজন গায়েব। ব্যাটারা পেলো কি বল দেখি? আমাকে যেতে বলছিলেন লোকমান সাহেব-আমি বলে দিলাম যাবো না।

যাবি না কেন?

কোনও লাভ নেই। কোনও সূত্র পাওয়া যাবে না সেখানে গিয়ে। শুধু শুধু হয়রানি এই শীতের রাতে।

কার বাড়িতে হামলা হলো এবার?

রোকনপুরের ডক্টর ইখতিয়ার আহমেদের বাড়িতে। ভদ্রলোক এম. আর. সি.পি.। ঠিক একই ভাবে শিক বাকিয়ে চোর ঢুকেছিল। নিখোঁজ হয়েছে ডাক্তারের বারো বছরের ছেলে।

কিন্তু কি আশ্চর্য! বার বার চোর অবলীলাক্রমে নিজের কাজ সারছে, কোনওকিছুই করা যাচ্ছে না। এর কি কোনও প্রতিকার নেই?

কি জানি। কিছুই তো বুঝতে পারছি না।

আমার কিন্তু একটা ব্যাপারে সন্দেহ হয়। তোকে এতোদিন বলিনি। একটা ক্ষীণ আশার রেখা হয়তো পাবি। এই দেখ দুইটা দিনের খবরের কাটিং। প্ৰথম নিখোঁজের ঠিক তিন দিন পর এটা বেরিয়েছিল। আর দ্বিতীয় নিখোঁজের তিনদিন পর এই-টা। একই ভাবে দুদুটো মৃতদেহ পাওয়া যাওয়ায় গোয়ালন্দে বেশ চাঞ্চল্যের সৃষ্টি হয়েছে। এবার তিনদিন পর যদি আরেকটা মৃত্যু সংবাদ পাওয়া যায় তাহলেই নিশ্চিন্ত মনে আমরা কোয়ালন্দ রওনা হতে পারি, কি বলিস?

কামালের গভীর চিন্তানিত মুখের দিকে তাকিয়ে শহীদ হেসে ফেললো। বললো, আমরা রওনা হতে পারি মানে? আমি গোয়েন্দা মানুষ আমি যেতে পারি, কিন্তু তুই যাবি কোন দুঃখে?



ব্যঙ্গ করছিস, না দর্প করছিস বুঝতে পারছি না। কি ভেবেছিস? তোর পিছন পিছন খামোকাই ঘুরছি নাকি? আমি যাবো না মানে? একশো বার যাবো, যাবোই তো।

না, তুই আবার এসব গোয়েন্দাগিরি তেমন পছন্দ করিস না কিনা তাই বলছিলাম। যাকগে, যে খবরটার কথা তুই বলছিস, সেটা আমারও নজরে পড়েছে। আমি হক সাহেব আর অক্ষয় ব্যানার্জীর শরীরে কি কি চিহ্ন ছিলো, প্রথমে তাই জেনেছি। তারপর রাজবাড়ি হাসপাতালে ট্রাঙ্ককল করেছি। মজার ব্যাপার হচ্ছে, জানতে পেলাম প্রথম জনের ডান হাতের বুড়ো আঙুল কেটে ফেলা হয়েছিল, আর দ্বিতীয় জনের ডান পায়ের হাঁটুর কাছ থেকে খানিকটা মাংস কাটা ছিলো। হারুনের কাছ থেকে জানতে পারি তার কাকার ডান হাতের বুড়ো আঙুলের উপর মন্ত এক আঁচিল ছিলো। আর অক্ষয় বাবুর চাকরের কাছ থেকে জানতে পারি, প্রায় দেড় বছর যাবত তিনি হাঁটুর কাছে একটা দাদ হওয়ায় খুব কষ্ট পাচ্ছিলেন। অনেক পয়সা খরচ করেও সেটা সারানো যাচ্ছিলো না। এখন বুঝতেই পারছিস, আমাদের সন্দেহ শতকরা নম্বই ভাগ যুক্তিযুক্ত হয়েছে।

তাহলে চল না, আমরা গোয়ালন্দ রওনা হয়ে যাই।

দেখা যাক। আয় আপাততঃ শুয়ে পড়ি, রাত অনেক হয়েছে।

দুজনেই বিছানায় ঢুকে পড়েছে, এমন সময় কামালের চোখে পড়লো মাথার দিককার জানলার গরাদ ধরে একজন লোক দাঁড়িয়ে আছে। সার্সির ওপারে লোকটার মুখ অত্যন্ত ভয়ঙ্কর। চমকে লাফিয়ে উঠে বসলো কামাল। চিৎকার করে উঠলো, কে ওখানে?

স্যাৎ করে সরে গেল মুখটা। বালিশের তলা থেকে রিভলবারটা নিয়ে বিদ্যুৎগতিতে জানালার পাশে এসে দাঁড়ালো শহীদ। জানালাটা খুলতেই দড়াম করে একটা পাথর এসে লাগলো শহীদের কপালে। উঃ করে একটা আর্তনাদ–শহীদ ঘুরে পড়ে গেল মাটিতে। কামাল ছুটে এসে ধরলো শহীদকে। বাইরে একটা মোটর স্টার্ট নেয়ার শব্দ পাওয়া গেল। কামাল চেয়ে দেখলো একটা গাড়ির পিছনের লালবাতি দুটো দ্রুত বেগে চলে গেল বড় রাস্তার দিকে।

Facebook Twitter WhatsApp Email
Categories: কুয়াশা - ০১


পূর্ববর্তী :
Previous post:« ০৩. তিনদিন পর খবরের কাগজ
পরবর্তী :
Next post:০৫. সকাল বেলা কামাল ঘুম থেকে উঠে »
LEAVE A REPLY
Your email address will not be published. Required fields are marked *

COMMENT


NAME *


EMAIL *


WEBSITE




Search for:

0 Response to "কুয়াশা - ১ | পর্ব - ৪"

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন

মোট পৃষ্ঠাদর্শন