Ads Golpo.Best Kobita.Best

search

কুয়াশা - ১ | পর্ব - ৩


তিনদিন পর খবরের কাগজের মফঃস্বল সংবাদ বিভাগে ছোট্ট করে একটা খবর বেরোলো। গোয়ালন্দ স্টীমার ঘাটের নিকট নদীতে একটি লাশ ভাসিয়া যাইতেছিল। স্থানীয় ধীবররা উহা পাইয়া নিকটস্থ থানায় পৌঁছাইয়া দিয়াছে। মৃতদেহটি সম্পূর্ণ উলঙ্গ ছিলো। তাহার শরীরের সহিত একটি ভারি পাথর বাধা ছিলো। মুখে অনেকগুলো ছুরিকাঘাতের চিহ্ন থাকায় মৃতদেহ সনাক্ত করা যায় নাই। ময়না তদন্তের জন্য লাশ রাজবাড়িতে পাঠানো হইয়াছে।

খবরটা কারো নজরে পড়লো, কেউবা দেখলোই না। অনেকের মতো শহীদও পড়লো খবরটা।

ঠিক যেদিন খবরটা বেরোলো তার পরদিন আবার বড় বড় হরফে খবরঃ

গতরাতে লক্ষপতি অক্ষয় ব্যানার্জির বাড়িতে চুরি। সেই সঙ্গে অক্ষয় ব্যানার্জি নিখোঁজ। বহুমূল্য অলঙ্কারাদি এবং নগদ পচিশ হাজার টাকা লইয়া৷ চোরের নিরাপদে পলায়ন… ইত্যাদি।

শহীদ ভাবছিল, এ ব্যাপারটা তাকে না জানাবার কারণ কি? তবে কি পুলিস তাকে এড়িয়ে যাবার চেষ্টা করছে। পত্রিকা অফিসেও রাতের বেলাই জানানো হয়েছে, অথচ…।

ঠিক সেই সময়ই টেলিফোন বেজে উঠলো।

হ্যালো!… লোকমান সাহেব?… এক্ষুণি আসতে হবে…. আচ্ছা, আসছি পনেরো মিনিটের মধ্যে।

রিসিভার নামিয়ে পিছনে ঘুরতেই শহীদ দেখলো কামাল দাঁড়িয়ে মিটিমিটি হাসছে। কামাল বললো, যাক, পেয়ে গেলাম তোকে। আমি খবরটা দেখেই এক দৌড়ে চলে এসেছি। ভাবছিলাম তুই হয়তো এতক্ষণে বেরিয়ে পরেছিস।



তুই একটু বোস, আমি কাপড়টা পরে আসি। এখনই থানায় যেতে হবে। তুইও চল আমার সঙ্গে।

শহীদের গাড়িটা রমনা থানার সামনে এসে দাঁড়ালো। লোকমান সাহেব এগিয়ে এলেন। সালাম বিনিময়ের পর শহীদ আর কামালকে নিয়ে অফিস ঘরে বসালেন লোকমান সাহেব। ইনিই রমনা থানার ও. সি.। মানুষটা খুবই আলাপী হাসিখুশি। শহীদের সাথে তাঁর অনেকদিনের পরিচয়। গত কয়েকটা কেসে এই লোকমান সাহেব অনেক সাহায্য করেছেন শহীদকে।

নিজের চেয়ারটায় বসে লোকমান সাহেব বললেন, মি. শহীদ, প্রথমেই কাজের কথা বলি। পর পর দুটো ঘটনা ঘটে গেল সেগুন বাগান আর পুরোনো পল্টনে। কাজেই পুলিস বিভাগ অত্যন্ত ব্যস্ত হয়ে পড়েছে। এই দেখুন আই. জি. সাহেবের চিঠি। আপনার উপর তার অত্যন্ত আস্থা আছে, তাই তিনি প্রাইভেটলি এই ব্যাপারে আপনাকে এনগেজ করবার নির্দেশ দিয়েছেন। আপনার যা কিছু সাহায্যের প্রয়োজন হয়, তা আমাদের করতে হকুম দিয়েছেন।

শহীদ আগাগোড়া চিঠিটা পড়ে বললো, আপনাদের সাহায্য পাওয়া আমার পক্ষে মস্ত সৌভাগ্যের ব্যাপার। এজন্য ধন্যবাদ।

এখন আপনার জন্যে কি করতে পারি?

আপাততঃ অক্ষয় ব্যানার্জির বাড়িটা ঘুরে ফিরে দেখবার ব্যবস্থা করে দিতে হবে।

এক্ষুণি স্লিপ দিয়ে দিচ্ছি। খশ খশ করে লিখতে লাগলেন লোকমান সাহেব। চিঠিটা নিয়ে শহীদ উঠতেই লোকমান সাহেব ব্যস্ত হয়ে বললেন, সে কী উঠছেন যে? চা আনতে বলেছি তো! একটু বসুন, চা খেয়ে যাবেন। এ… সিপাই, জলদি চায়ে লাগাও।



মাফ করুন, মি. লোকমান। আজ নয়, অন্যদিন এসে খেয়ে যাবো–উঠে পড়ে শহীদ।

শহীদের মরীস মাইনর যখন রাস্তায় চলে, তখন বাইরে না চাইলে বোঝাই যায় না চলছে কি দাঁড়িয়ে আছে। পুরোনো পল্টনে অক্ষয় বাবুর বাড়ির সামনে এসে গাড়ি থামলো। দুজন সেন্ট্রি হোটের সামনে দাঁড়ানো। স্লিপটা আর তার উপরকার সিলটা দেখে সেলাম ঢুকে পথ ছেড়ে দিলো তারা।

দোতলার উপর তাদের পথ দেখিয়ে নিয়ে এলো একজন সেন্ট্রি। সুন্দর করে সাজানো গোছানো ঘরটা। অক্ষয় বাবুর আত্মীয়-স্বজন কেউ নেই। আজ বিশ বছর হয় তার স্ত্রীর মৃত্যু হয়েছে। তিনি আর বিয়ে করেননি। ছেলেপুলে নেই, টাকা পয়সা আছে প্রচুর। একটা হাসপাতাল খুলেছেন তিনি বছর তিনেক হলো—সেখানে বিনামূল্যে প্রায় পাঁচশো রোগীর থাকার ব্যবস্থা আছে। এছাড়া অনেক স্কুল কলেজে তিনি প্রতি বছর মোটা টাকা দান করেন।

অক্ষয় বাবুর ঘরটার সাথেই পশ্চিম দিকে একটা ঝোলানো বারান্দা আছে। সেখানে একটা ইজিচেয়ার রাখা। বিকেলের পড়ন্ত রোদে গা-টা একটু গরম করবার জন্য অক্ষয় বাবু এখানে এসে বসতেন। ঘরের মধ্যে খোলা হাঁ করা রয়েছে একটা দেয়াল সিন্দুক। বিছানার কাছে একটা ছোটো টেবিলে কিছু বই-পত্র আর কয়েকটা মলমের কৌটো। বারান্দার দিকের একটা জানালার গরাদ বাঁকিয়ে উপর দিকে তোলা।



শহীদ আশ্চর্য হয়ে লক্ষ্য করলো, মযহারুল হক সাহেবের বাড়িতে যেভাবে লোহা গলানো হয়েছিল, ঠিক সেই একই পদ্ধতিতে এখানকার লোহাও গলানো হয়েছে।

পুলিস রাতে চাকরের ফোন পেয়ে এসে এ ঘরের দরজা ভেঙেছে। একজন চাকরের কাজ রাত তিনটের সময় অক্ষয় বাবুর জন্যে এক কাপ কফি করে তাকে ডেকে তোলা-তিনি তখন থেকে বাকি রাতটুকু পড়াশোনা করতেন। কিন্তু কাল অনেক ডাকাডাকি করেও তাকে ঘুম থেকে ওঠাতে না পেরে চাকর আর সবাইকে ডেকে তোলে। তারা অনেকক্ষণ দরজা ধাক্কাধাকি করে পুলিসে ফোন করে। পুলিস এসে দরজা ভেঙে ঘরে প্রবেশ করে।

শহীদ এতসব বৃত্তান্ত একটা চাকরের কাছ থেকে মনোযোগ দিয়ে শুনলো। তাহলে অক্ষয় বাবু কোন পথে নিখোজ হলেনঃ একমাত্র পথ হচ্ছে বারান্দা। কেউ তাকে পিঠে বেঁধে নিয়ে রশি বেয়ে নিচে নেমে গেছে কিংবা তাঁকে রশিতে ঝুলিয়ে আগে মাটিতে নামিয়ে তারপর নিজে নেমে গেছে। তবে কি তাকে অজ্ঞান করে নিয়েছিল আগেই, নাকি খুন করা হয়েছিল।

আরও কয়েকজনের সাথে কথা বলে দেখলো শহীদ। কেউ নতুন কিছু বলতে পারলো না। চিন্তাক্লিষ্ট মুখে শহীদ নেমে গেল সিড়ি বেয়ে। পিছনে কামাল। কোনো কথা নেই কারো মুখে। আকাশ পাতাল কতো কি ভাবছে তারা। কোনও চিহ্নই পিছনে ফেলে যায়নি চোর।

Facebook Twitter WhatsApp Email
Categories: কুয়াশা - ০১
পূর্ববর্তী :
Previous post:« ০২. প্ৰাইভেট ডিটেকটিভ শহীদ খান
পরবর্তী :
Next post:০৪. চার পাঁচ দিন পার হয়ে গেছে »


LEAVE A REPLY
Your email address will not be published. Required fields are marked *

COMMENT


NAME *


EMAIL *


WEBSITE




Search for:

0 Response to "কুয়াশা - ১ | পর্ব - ৩"

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন

মোট পৃষ্ঠাদর্শন