মুল গল্পের নামঃ | দ্যা ব্যাড ইভিনিং | খালিদ হাসান |
মুল বইয়ের নামঃ | অজানা |
মূলসূত্রঃ | Facebook.com |
পর্ব - ১ | পর্ব - ২ | পর্ব - ৩ | পর্ব - ৪ | পর্ব - ৫ | এক পাতায় সম্পূর্ণ
কথা বলার বা নড়াচড়া করার মতো কোনো শক্তি এখন আমার শরীরে নেই। লোকটা দরজা খুলেই আমাকে দেখে বলে উঠলো..
--হু আর ইউ?
আমার কথা বলার শক্তি না থাকা সত্ত্বেও জোর করে বলার চেষ্টা করলাম ..
--হেল্প মি।
লোকটা এবার আমাকে পর্যবেক্ষণ করে নিলো।আমি উপুড় হয়ে মুখ থুবড়ে পড়ে আছি। আমি জানিনা তিনি আমার রক্তাক্ত পিঠটা দেখেছে কিনা। তবে একটু পরেই বলে উঠলো..
--আগে আপনাকে ভেতরে নিয়ে যাই।
আমি নিথর হয়ে গেলাম। শুধু অনুভব করলাম লোকটা আমাকে দুই হাত ধরে তুলে কাধে নিলো। এরপর দরজা লাগিয়ে দিয়ে আমাকে একটা রুমের দিকে নিয়ে গেলো।
.
এরপর কতক্ষণ চলে গেলো জানিনা।যখন জ্ঞান ফিরলো তখন অনুভব করলাম পিঠে কেউ কিছু করছে। লিজার কথা মনে পড়ে গেলো আমার। লিজার নাম মনে হতেই "লিজা" বলে উচ্চস্বরে চিৎকার করে উঠলাম আমি। ঠিক তখনই কেউ একজন বলে উঠলো..
--অনেকদিন পর বাংলা সিনেমার দৃশ্য দেখলাম। তাও আবার বাস্তবে। জীবন ধন্য হলো।
থেমে গেলাম আমি। লোকটার কথা শুনে হুরমুরিয়ে উঠে বসে পড়লাম। আমাকে শুইয়ে রাখা হয়েছে একটা নরম বিছানায়। আর লোকটা এতক্ষণ আমার পিঠে ব্যান্ডেজ লাগাচ্ছিলেন।আমার তাড়াহুড়ো দেখে লোকটা আবারও বলে উঠলেন ..
--প্লিজ ইয়াংম্যান শান্ত হয়ে বসে থাকুন। আপনি এখন খুব দুর্বল।শরীর থেকে অনেক রক্ত ক্ষরণ হয়েছে। আপনার এখন রেস্ট দরকার।
.
আমি লোকটার কথা শুনে চেয়ে রইলাম তার শরীরের দিকে।গায়ে সাদা এপ্রোন পরিহিত লোকটাকে প্রথম দেখাতেই ডাক্তার মনে হচ্ছে।চোখে মোটা ফ্রেমের চশমা।মাথার চুল আধাপাকা। খোঁচা খোঁচা দাড়িগুলোতে এখনো পাক ধরেনি।চুল দাড়ি উস্কোখুস্কো।খুব বেশি বুড়ো হয়নি লোকটা। চেহারায় এখনো যুবক যুবক ভাবটা রয়ে গেছে।সবচেয়ে বেশি অবাক হলাম তার নাকে ব্যান্ডেজ দেখে।আমি শুধু তার দিকে চেয়েই রইলাম কিছু বলার ভাষা খুজেঁ পাচ্ছিনা। উনাকে আমার ধন্যবাদ দেয়া উচিৎ। কিন্ত আমার হতবাক চেহারা দেখে তিনি নিজেই বলে বসলেন ..
--লাভ কেস তাইনা!
কথাটা শুনেই আমি উঠে দাঁড়াতে যাবো এমন সময় উনি আমাকে ধরে বসিয়ে দিয়ে বললেন ..
--প্লিজ ইয়াংম্যান আগে শান্ত হয়ে বসুন। আপনার বিশ্রামের প্রয়োজন এখন।অনেক রক্ত গেছে। শরীর দুর্বল আপনার।
--আমাকে আটকাবেন না প্লিজ। আমার লিজা ভীষণ বিপদে আছে।
--লিজা..
--আমার প্রেমিকা। সে নিশ্চয়ই কালভার্টে আছে। আমাকে সেখানে যেতে হবে। প্লিজ আমাকে যেতে দিন।
আমি উঠতে গেলেই লোকটা আমার হাত ধরে বিছানাতেই বসিয়ে দিলো। এরপর বললো..
--ওয়েট ওয়েট ম্যান। আমি বুঝতে পেরেছি। আপনি আগে একটু শান্ত হোন।
--আপনি বুঝতে পারছেন না এটা আমার জীবন মরনের প্রশ্ন।আমার দেরি হলে লিজার কিছু একটা হয়ে যাবে।
--একদম বাংলা সিনেমা। নব্বইয়ের দশকে এরকম সিনেমা খুব ভালো লাগতো। এখন অবশ্য পানসে লাগে। নায়ক নায়িকার একে অপরের জন্য এমন প্রেম খুব দুর্লভ দৃশ্য ছিলো সেসময়।
--আপনি কি আমার সাথে মজা করছেন! দেরি করলে শিহাব আমার লিজাকে খুন করে দিবে। না জানি মেয়েটা একা ওই শয়তানটার সাথে পেরেছে কিনা।
--ওয়াও! একজন ভিলেনের আবির্ভাব হলো। প্রেম কাহিনী টা জমে উঠলো। তাহলে আপনাদের প্রেমের গল্পের ভিলেন হলো শিহাব। ইন্টারেস্টিং ..
--মোটেও ইন্টারেস্টিং নয়।আপনি শুধু শুধু আমার সময় নষ্ট করছেন।
---নো নো ইয়াংম্যান আমি কখনো সময় নষ্ট করিনা বরং আমি সময়ের সঠিক ব্যবহার করি।
--মানে!
--আমি আপনাকে আশ্রয় দিয়েছি, আপনার ক্ষত বিক্ষত শরীরের ট্রিটমেন্ট দিয়েছি আর এখন আপনি আমাকে অবিশ্বাসের চোখে দেখছেন।বাংলা সিনেমার কাহিনীও এমন। যে উপকার করে সেই অবহেলার শিকার হয়।
--আপনি আবারো বিষয়টাকে সিনেমার দিকে নিয়ে যাচ্ছেন। এটা আমার লাইফের ব্যপার।
--এজন্যই আপনাকে শান্ত হয়ে বসতে হবে।
--প্লিজ বুঝার চেষ্টা করুন বাইরে আমার সবচেয়ে প্রিয় মানুষটা বিপদে আছে। আর আপনি আমাকে এখানে শান্ত হয়ে বসতে বলছেন।এটা আমার পক্ষে কিভাবে সম্ভব!
--হতে পারে আপনার এখানে শান্ত হয়ে বসে থাকাটাই আপনার প্রিয় মানুষটাকে রক্ষা করতে পারে।
--আপনি অনেক অদ্ভুত কথা বলছেন। আপনি নিশ্চয়ই অনেক কিছু জানেন। লিজা কি এখানে এসেছে! সে কি আমার সাথে এখানে এসেছিলো! আপনি কি তাকে দেখেছেন! শিহাব কি এসেছিলো খুন করতে!
--আপনি আবারও উত্তেজিত হয়ে যাচ্ছেন। আমি আপনাকে শান্ত হয়ে বসতে বলেছিলাম।
.
লোকটার কথা বলার ভঙ্গি এখন রাগত হয়ে গেছে।তাই আমি একটু শান্তই হলাম। যদিও এমন পরিস্থিতিতে শান্ত থাকাটা খুব মুশকিল কাজ।লোকটা শান্ত গলায় বললেন ..
--নাহ, আমি শুধু আপনাকেই দেখেছি দরজার ওপাশে। আর কাউকে পাইনি। আর আপনি কালভার্টের কথা বলছিলেন। না সেরকম কাউকে দেখিনি। আমি চতুর্দিকে উঁকি ঝুকি দিয়েছিলাম কাউকে পাইনি শুধু আপনাকেই রক্তাক্ত অবস্থায় পেয়েছিলাম।তাই আপনাকেই ভেতরে নিয়ে এসে ব্যান্ডেজ লাগাচ্ছিলাম।
..লোকটার কথা শুনে নিজেকে একটু অকৃতজ্ঞ মনে হলো। তাই নিচু স্বরে বললাম ..
--আসলে আমি অনেক দুঃখিত। আপনি আমার এত বড় উপকার করলেন আর আমি আপনার প্রতি এখনো কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করিনি। আসলে পরিস্থিতি এতটা খারাপ হয়ে গেছে যে আমি জ্ঞানশূন্যতায় ভুগছি। প্লিজ কিছু মনে করবেন না।
--না ইয়াংম্যান, আমি কিছু মনে করিনি। আমি বুঝতে পেরেছি আপনার সমস্যা।তবে এর সমাধানও নিশ্চয়ই হবে।
--দেরি করলে আর হবেনা। শিহাব এমন জায়গায় আমাদের খুন করার সুযোগ নিশ্চয়ই হাতছাড়া করবে না। আমাদের শত্রুতার ব্যপারে আপনার কোনো ধারণা নেই। সে এমন সুযোগের অপেক্ষাতেই ছিলো এতদিন। আর আমি ভুল করে তাকে সুযোগ করে দিলাম।
--শিহাব কি খুব বড় মাপের গুন্ডা!
--স্বার্থ আর হিংসার বশবর্তী হয়ে মানুষ হিংস্র শয়তানেও পরিণত হতে পারে।শিহাব এখন একা নয় ওর কিছু চামচাও যুক্ত হয়েছে আমার ক্ষতি করার জন্য।
--আচ্ছা, তাহলে শিহাবের ব্যপারে জেনে আমার আর কোনো কাজ নেই। আপনি বরং আপনার ব্যপারে বলুন।
--আমার ব্যপারে!
--হ্যাঁ।আপনার ব্যপারে একটু জানা দরকার আমার।
--কেন!
--আ হা বলুন না। ফায়দা টা আপনারই হবে।আপনার প্রেমিকার উদ্ধার কাজে আপনাকে সহায়তা করবো।
--কিন্ত আপনি তা করছেন না। উল্টো আপনি আমার সময়ের অপচয় করছেন।
--ট্রাস্ট মি। কথায় বলে ধৈর্যের ফল মিঠা হয়। কথাটা নিশ্চয়ই বিশ্বাসযোগ্য?
আমি চুপ রইলাম। তিনি আবারও বললেন ..
--আমাদের পরিচয় পর্ব দিয়ে শুরু করা দরকার। আশাকরি আপনার যে সময়টুকু অপচয় হবে তা আপনি আবার ফেরত পাবেন।
--আপনার কথা বার্তা খুবই রহস্যজনক!
--নিশ্চয়ই কাজগুলো আরো বেশি।
--হুম বুঝেছি।আমি খালিদ।বয়স আন্দাজ করে নিন। বাকি সবকিছুই আন্দাজ করে নিলেই ভালো হয়।
--হাহাহা। ইয়াংম্যান, আপনি ভীষণ চালাক। আমাকে এখনো বিশ্বাস করেননি। আমি প্রফেসর ভিক্টর।
--ভিক্টর! আপনি কি বাঙ্গালী নন!
--আমি বাঙ্গালী তবে বসবাস বিদেশেই। জীবনের বেশিরভাগ সময়ই বিদেশের বিশ্ববিদ্যালয় আর ফিজিক্স ল্যাবগুলোতে কাটিয়েছি।আমার পূর্বপুরুষেরা কানাডার নাগরিক কিন্ত আমার জন্মস্থান বাংলাদেশ। এজন্য এই দেশেই ফিরে এলাম আবার।আর শেষ বয়সে এই নির্জন জায়গায় ঘাটি করেছি নিজের গোপন গবেষণা শুরু করার জন্য। যদিও এটাও সাকসেস প্রায়।
--কিরকম গবেষণা?
--সেটা বাদ দিন।এখন বলুন তো আপনার শরীর কেমন আছে?
--আমি সুস্থ আছি। আমার মাথায় শুধু লিজার চিন্তাই আসছে আর কিছু নয়।
--হ্যাঁ বুঝেছি। লিজাকে নিজের থেকেও বেশি ভালোবাসেন। আচ্ছা তাকে পেয়ে যাবেন।
--আপনি বিষয়টাকে এত সহজভাবে নিচ্ছেন কি করে!
--আপনিও সহজভাবেই নিতে চেষ্টা করুন। বিষয়টা যত জটিল আবার ততটাই মজার।
--আপনি আবারও রহস্যজনক কথা বার্তা বলছেন।
--আচ্ছা তাহলে কথা কম কাজ বেশি।
..লোকটা উঠে দাঁড়াতেই টলাটলি শুরু করে দিলেন।লোকটার উঠে বসার ভঙ্গি দেখেই মাথায় হাত দিয়ে বলে উঠলাম আমি ..
--ওহ মাই গড, আমি এতক্ষণ একটা মাতালের সাথে কথা বলে সময় নষ্ট করছিলাম। ওহ শিট!
আমার কথা শুনে লোকটা চড়াও হয়ে উত্তর দিলো..
--হেয় মিস্টার খালিদ! ডোন্ট আন্ডারেস্টিমেট মি! আই এ্যাম ড্রাঙ্ক বাট রাইট ইন দ্যা রিদম।
--জি আপনি জাতে মাতাল তালে ঠিক তা আপনার দোল দোল দুলুনি মার্কা বডিটা দেখেই বুঝতে পারছি।
আমার কথা শুনে লোকটা রাগি চোখে তাকালো আমার দিকে। নিজেকে সামলে নিয়ে বললাম ..
--ডোন্ট মাইন্ড প্রফেসর। মজা করছিলাম আরকি।
--মজা ছাড়ুন কাজের কথায় আসুন।
.
প্রফেসর ভিক্টর কথাটা শেষ না করতেই মেইন দরজায় কলিং বেলের আওয়াজ হলো। চমকে উঠলো আমার অন্তরআত্মা। আমি হাত ঘড়িটার দিকে তাকালাম। সময় এখন সারে এগারোটা।এত রাত হয়ে গেছে অথচ আমি টেরই পাইনি।অনেক সময় অপচয় হয়ে গেছে। আবারও কলিং বেলটা বেজে উঠলো। আমি আন্দাজ করতে লাগলাম কে হতে পারে। প্রফেসর বলে উঠলেন ..
--আমি গিয়ে দেখে আসি কে এলো।
আমি প্রফেসরকে আটকে দিলাম। হাত ধরে থামিয়ে দিয়ে বললাম ..
--আপনি বসে পড়ুন। যদি লিজা হয় তাহলে অনেকবার কলিং বেল চাপবে। ওর ব্যাপারে আমার জানা আছে। আর যদি শিহাব হয় তাহলে আর কলিং বেল বাজাবে না।
--আপনি কি করে জানলেন তাদের মধ্যেরই কেউ হবে।
--কমন সেন্স। এই নির্জন জায়গায় আপনি ছাড়া নিশ্চয়ই আশেপাশে আর কোনো লোকজন থাকেনা। তাই তাদেরই আসার সম্ভবনা বেশি।
খেয়াল করলাম দুজনেই। কলিংবেল আর বাজছে না।প্রফেসর ভিক্টর বললেন ..
--আপনার কথা রাইট। এটা নিশ্চয়ই আপনার শত্রু শিহাব। সে আর বেল বাজাচ্ছে না। আপনি কি করে বুঝলেন সে এমনটা করবে!
--কারণ ওর জায়গায় আমি হলেও একই কাজ করতাম।আমাদের দুজনের চিন্তাভাবনা গুলো একই।
--এখন আপনি কি করবেন? বা কি করার প্ল্যান করছেন?
--শিহাবকে খুন করবো।
--আপনি আবারও মজা করছেন তাইনা মিস্টার খালিদ!
--আমার চোখের দিকে তাকান। দেখে কি মনে হচ্ছে আমি মজা করছি? আই এ্যাম সিরিয়াস ম্যান! বাইরে শিহাব আমাকে খুন করার জন্য ওত পেতে আছে আর আমি কি হাতে চুড়ি পড়ে বসে থাকবো! ও যদি লিজাকে খুন করে থাকে তাহলে আমাকে নিশ্চয়ই বাঁচিয়ে রাখবে না। তাছাড়া এটাই তার অনেক বড় সুযোগ আমাকে খুন করার। পুরো বিষয়টা এই জায়গতেই ধামাচাপা দিতে পারবে। নির্জন জায়গায় কেউ কিচ্ছুটি টের পাবেনা।
--মোটকথা আপনি তাকে খুন করে দিতে চাইছেন?
--এক্সাক্টলি।
--তাহলে উঠে পড়ুন।
আমি উঠে পড়লাম বিছানা থেকে। আমার গালের একপাশে ব্যান্ডেজ করা।তখন থেকে কথা বলতেও অসুবিধা হচ্ছে একটু।প্রফেসর ভিক্টরকে জিজ্ঞেস করলাম ..
--প্রফেসর, আমি নাহয় আক্রমণের শিকার হয়েছিলাম কিন্ত আপনার নাকে ব্যান্ডেজ কেন? তখন থেকে বিষয়টা শুধু দেখছিলাম কিন্ত জিজ্ঞেস করারই সময় পাচ্ছিলাম না।
..প্রফেসর আমার কথা শুনে আমার মুখোমুখি দাঁড়ালো। চোখে চোখ রেখে প্রশ্ন করলো..
--তার আগে বলুন তো, আপনি কি এর আগেও আমার বাসায় এসেছিলেন!
--না।
--আমি যার থেকে আক্রমনের শিকার হয়েছি সে আপনার মতোই দেখতে ছিলো।
--কবে আক্রমণ করেছিলো!
--আজ রাতেই।
--স্ট্রেইঞ্জ! শিহাব এসেছিলো নাকি! আমি জানতাম শয়তানটা আমার আগেই এখানে এসেছে আমাকে খুন করার জন্য।
--আই ডোন্ট নো।তবে তার হাতেও আপনার হাতের ঘড়িটার মতোই সেইম কালারের কালো ঘড়ি ছিলো।
হো হো করে হেসে দিলাম আমি।বললাম ..
--প্রফেসর, নিশ্চয়ই আপনি চশমা ছাড়া "অ" কে "আ" দেখেন।
--অদ্ভুত হলেও এটাই সত্যি।আমি তার চেহারা স্পষ্ট দেখতে পাইনি কারণ সেসময় চোখে চশমা ছিলোনা। কিন্ত তার ঘড়ির রংটা কালোই ছিলো।
--জানতাম এমনই হবে।কিন্ত আক্রমণ কেন করলো?
--সে আমার প্রোপার্টি আমার অনুমতি ছাড়া ব্যবহার করতে চাইছিলো বলে আমি বাঁধা দিয়েছিলাম। আর তাই আক্রমণ করে বসে।
--ওহ আচ্ছা। খুবই খারাপ লোক।
প্রফেসর আবারও বলে উঠলেন ..
--আচ্ছা আপনি কি সকালে এখানে এসেছিলেন? সকালে যে এসেছিলো তার হাতেও একই রঙ্গের ঘড়ি ছিলো।
--অদ্ভুত তো! আপনি দেখছি সবখনেই আমাকে টানছেন।
--হাহাহা, রাগ করবেন না মিস্টার খালিদ একটু মজা করছিলাম আরকি।
আমি প্রফেসরের গোমড়া মুখটা অদ্ভুতভাবে হাস্যোজ্জ্বল হতে দেখে অবাক হয়ে চেয়ে রইলাম। তিনি আলনা থেকে একটা শার্ট নিয়ে আমাকে দিয়ে বললেন ..
--এটা পড়ে নিন। আপনার রক্তাক্ত শার্টটা আমি ওয়াশরুমে রেখে দিয়েছি।
আমি শার্টটা নিয়ে পড়তে লাগলাম। এতক্ষণ খালি গায়ে ছিলাম চিন্তায় সেটা মনেই ছিলোনা। পিঠের ব্যান্ডেজে হালকা ব্যথা পাচ্ছি। এদিকে গালের ব্যান্ডেজের কারণে কথা বলতেও কষ্ট পেতে হচ্ছে।
.
আমি শার্টটা পড়ে নিতেই প্রফেসর মুখোমুখি দাড়িয়ে বলে উঠলেন ..
--চলুন এবার আপনার অপচয় করা সময় গুলো ফেরত দেয়া যাক।
--প্রফেসর, আপনি আবারও মজা করছেন।
--আমার চোখের দিকে তাকান। দেখে কি মনে হচ্ছে আমি মজা করছি? আই এ্যাম সিরিয়াস ম্যান! চলুন আমার সাথে। এই রুম থেকে বের হোন।
প্রফেসর ভিক্টর চেহারায় একটা সিরিয়াস ভঙ্গি নিয়ে আমার কথা আমাকেই ফেরত দিলেন। তাই আমি আর কথা না বাড়িয়ে প্রফেসরের পেছনে পেছনে যেতে লাগলাম। বেড রুম থেকে বের হয়ে তিনি সোজা ডাইনিং রুমের দিকে গেলেন। যাওয়ার আগে বেডরুমের সুইচটা অফ করে দিলেন।ডাইনিং রুমের মাঝখানে গিয়ে দাড়াতেই দেখলাম সামনের দেয়ালে একটা লিফট। অবাক হয়ে বলে উঠলাম ..
--প্রফেসর, আমার জানামতে আপনার বাড়িটা একতলা ভবন। কিন্ত লিফট!
--আপনি বুঝতে ভুল করছেন মিস্টার খালিদ। এটা একটা জাদুর বাক্স। লাইক এ ম্যাজিক বক্স। এটাই আপনার অপচয় হওয়া সময়কে ফিরিয়ে দেবে। আপনাকে পৌঁছে দেবে সেই সময়ে যে সময়ে আপনি যেতে ইচ্ছুক। আপনি সময় নিয়ে খেলা করতে পারবেন। সময়ের সাথে পাল্লা দিতে পারবেন।
--হাহাহা। প্রফেসর আপনি একটু আগে রহস্যজনক কথা বলছিলেন কিন্ত এখন হাস্যকর কথাবার্তা বলছেন। আপনি কি সত্যিই আমার সাথে মাতলামি করছেন! প্লিজ এমন করবেন না। এটা আমার লাইফের ব্যপার। আপনি অনেক মজা করেছেন। আমি চলে যাচ্ছি। লিজাকে বাঁচাতেই হবে। শিহাব নিশ্চয়ই ওকে যন্ত্রণা দিচ্ছে ভীষণ।
আমি দরজার দিকে পা বাড়াতেই প্রফেসর ভিক্টর আমাকে আটকে দিয়ে বললেন ..
--ট্রাস্ট মি।শুধু একবারের জন্য।
--আপনি হাস্যকর কথা বলছেন। এটা আমাকে বিশ্বাস করতে হবে!
--একবার। জাস্ট একবার।
অগত্যা রাজি হলাম আমি। লোকটা যেহেতু প্রফেসর। আর কথাবার্তায় বিচক্ষণ মনে হচ্ছে তাই ইচ্ছা না থাকা সত্ত্বেও রাজি হলাম। অন্তত একবার উনাকে বিশ্বাস করে দেখি উনি আমার জন্য কি করে। এমনিতেই অনেক উপকার করেছে আমার। লিজাকে বাঁচানোর জন্যেও নিশ্চয়ই কিছু একটা করবেন।বললাম ..
--আচ্ছা তাহলে বলুন এই জাদুর বাক্স আমার কি কাজে আসবে!
প্রফেসর বলতে শুরু করলেন ..
--এটা কোনো লিফট নয়। এটা একটা টাইম মেশিন। কোয়ান্টাম থিওরি সম্পর্কে কোনো ধারণা আছে আপনার! আমার বহু বছরের গবেষণার পর এই জিনিস বানিয়েছি। এটা সময়কে পাড়ি দেয়। আপনার যে সময়ে যাওয়া প্রয়োজন সেই সময়ে এটা আপনাকে নিয়ে যাবে।
আমরা কথা বলতে বলতে লিফটের একদম কাছে চলে গেলাম। প্রফেসর আবারও ব্যাখ্যা করতে লাগলেন ..
--এটা খুব সহজে কাজ করে।ইউজ করা খুব সহজ। শুধু নিজের পছন্দের টাইম সেট করবেন আর টাইম ট্রাভেল শুরু করবেন। ইজি ব্যপার।
--কিন্ত এটা আমার কিভাবে কাজে আসবে?
--আপনি শিহাবকে ধরে ফেলতে পারেন এটা ব্যবহার করেই। তাকে খুনও করে আসতে পারেন।
.
কথাটা শুনেই আমি অবাক হয়ে গেলাম সেইসাথে বাকরুদ্ধ! চেয়ে রইলাম প্রফেসরের চোখের দিকে। চশমার ওপাশে তার চোখদুটো অনেক রহস্যের সহিত আমার দিকে তাকিয়ে আছে।ঠোঁটে তার নিষ্ঠুর হাসি।আমি অবিশ্বাসের চোখে তাকিয়ে থাকলাম কিছুক্ষন। ঠিক সেই মুহুর্তে প্রফেসর ভিক্টরের বেডরুমে গ্লাস ভাঙ্গার শব্দ হলো। চমকে উঠলাম দুজনে।প্রফেসর নিজেকে সামলে নিয়ে বললেন ..
--দুইদিন ধরে একটা বিড়াল খুব জ্বালিয়ে মারছে। নিশ্চয়ই বিল্লিটারই কাজ। আমি ওকে তাড়িয়ে আসছি।
কথাটা বলেই প্রফেসর বেডরুমের দিকে যেতে লাগলেন।আমিও তার পেছন পেছন যেতে লাগলাম। বিড়ালটা নিশ্চয়ই কাচেঁর কোনো দামি জিনিস ভেঙ্গে ফেলেছে। প্রফেসর ঘড়ের লাইটটা জ্বালিয়ে বলে উঠলেন ..
--একি মিস্টার খালিদ আপনি আসছেন কেন রুমে? আপনি লিফটে চলে যান আমি বিড়ালটাকে তাড়িয়েই আসছি।
..আমি বেডরুমে প্রবেশ করার আগেই প্রফেসরের মুখে এই কথাগুলো শুনে আবারও লিফটের দিকে যেতে লাগলাম। উনি আবারও বলতে লাগলেন ..
--আপনি লিফটের দিকে যান আমি আসছি এক্ষুনি।
আমি আর উনার কথায় কান দিলাম না। মাথায় শুধু একটা জিনিসই ঘুরছে। শিহাবকে খুন করতে হবে। আমার জীবনে চিরতরে শান্তি প্রতিষ্ঠার জন্য এটাই সুযোগ। শিহাব আমাকে খুন করতে এসে আজ ও নিজেই খুন হবে আমার হাতে। কথাগুলো ভাবতে ভাবতে এতটা রাগ উঠে গেলো আমার আমি লিফটের পাশে দেয়ালে একটা সুইচ দেখতে পেলাম।সুইচটা টিপ দিতেই লিফটের দরজা খুলে গেলো।আমি প্রফেসর ভিক্টরের জন্য অপেক্ষা না করে ঢুকে গেলাম। কেনন ভিক্টরের তো যাওয়ার প্রয়োজন নেই। খুন তো আমাকেই করতে হবে। কিন্ত এখনো বিষয়টা আমার কাছে ভাওতাবাজি বলে মনে হচ্ছে। লিফটে প্রবেশ করতেই সাথে সাথে চৌম্বকের মতো দরজাটা আপনাআপনি ঘপ করে বন্ধ হয়ে গেলো। আমি আটকে গেলাম একটা চারকোণা বিশিষ্ট বর্গাকার কক্ষে। সামনে বিশাল বড় একটা কাচেঁর মনিটর ভেসে উঠলো এবার। অবাক হতে লাগলাম আমি। লিফটের দরজা খুলার চেষ্টা করলাম কিন্ত দরজা খোলার মতো কোনো সুইচ পেলাম না। হঠাৎ সাউন্ড ভেসে এলো "সেট ইওর টাইম"। ফিমেল ভয়েসের সাউন্ড টা শুনতেই চোখ চলে গেলো মনিটরে।
.
একটা সচ্ছ কাচেঁর স্ক্রিন। সাথে ক্যালকুলেটরের ন্যায় একটা কীবোর্ড। কীবোর্ডে সময় সেট করলাম। তারিখ টা আজকেরই দিলাম। সময়ের জায়গায় আটটা সেট করলাম। স্ক্রিনে এরকম দেখাচ্ছিলো
"30-03-20** - 08:00:00pm"
.
টাইম সেট করার সাথে সাথে আবারও ফিমেল ভয়েসটা বলে উঠলো..
--Press the "Start" button and start the time travel."
কীবোর্ডের বাম সাইডে স্টার্ট বাটন খেয়াল করলাম। আর দেরি না করে ক্লিক করে দিলাম। সাথে সাথে লিফট কাঁপাকাঁপি শুরু হয়ে গেলো। মনে হচ্ছে ভূমিকম্প এসে গেলো। তখনই ফিমেল ভয়েসটা আবারও বলে উঠলো..
--Processing your time. Have a nice travel.
.
ফিমেল ভয়েসটা থেমে যেতেই লিফটের কাঁপাকাঁপিও থেমে গেলো। সাথে সাথে লিফটের দরজাও খুলে গেলো। বের হয়ে গেলাম আমি। বের হওয়ার সাথে সাথে লিফটের দরজা আপনাআপনি বন্ধ হয়ে গেলো। কিন্ত মনে হলো কেউ এইমাত্র দুপদাপ পায়ের আওয়াজ তুলে প্রফেসরের বেডরুমের দিকে দৌড় দিলো। নিশ্চয়ই প্রফেসর ভিক্টর। ফাজলামির একটা সীমা থাকা উচিৎ। মেজাজটা অত্যধিক খারাপ আছে। কারণ প্রফেসর ভিক্টরের সব মশকরা বুঝে গেছি আমি। আজকে ৩০ তারিখ তার মানে একটু পরেই রাত বারোটা বাজলেই ১ তারিখ। মানে ১লা এপ্রিল। আমাকে বড় ধরনের বোকা বানানোর পাঁয়তারা ছিলো তার। রাগে গজগজ করতে করতে বেডরুমের দিকে গেলাম। দরজা ভিড়ানো। দরজা খুলেই চিৎকার দিয়ে বললাম ..
--চেষ্টা ভালো ছিলো প্রফেসর। কিন্ত আমি বুঝে গেছি। আমার জীবন মরন সমস্যার মধ্যে এমন বোকা বানানোর মজা না করলেও পারতেন।
কথাটা শেষ করতেই ওয়াশরুমে শাওয়ার নেয়ার আওয়াজ পেলাম। পানির শব্দ আসছে। ওয়াশরুমের দিকে যেতে যেতে বললাম ..
--আপনার বিড়াল তাড়ানো শেষ হয়নি এখনো! লুকিয়ে না থেকে বেরিয়ে আসুন।
কথাটা শেষ না হতেই দরজায় দুপদাপ আওয়াজ পেলাম। ঘুরে দরজার দিকে তাকাতেই মনে হলো কেউ দৌড়ে বের হয়ে গেলো দরজা দিয়ে। দরজার পাশের টেবিলে চাকুটা দেখেই সেটা নিয়ে আমিও দৌড় দিলাম। নিশ্চয়ই আমি লিফটে থাকা অবস্থায় শিহাব ঘরে প্রবেশ করেছে। প্রফেসরকেও আক্রমণ করেছে নিশ্চয়ই। দুপদাপ আওয়াজ টা এলো মেইন দরজা থেকে। সোজা সেদিকেই গেলাম। দরজাটা খোলা পেয়ে বাড়ির বাইরে চলে গেলাম। অন্ধকারে তাকিয়ে বুঝার চেষ্টা করতে লাগলাম কোনদিকে গেলো শিহাব। বাড়ির ডানপাশে চলে গেলাম। আর সাথে সাথে দেখতে পেলাম রুমাল মুখে বাঁধা একজন দাড়িয়ে আছে। জানালার কাচঁ দিয়ে বাড়ির ভেতরের দিকে তাকিয়ে আছে সে। শিহাব নিশ্চয়ই আমাকে ফলো করার চেষ্টা করছে। জানালা থেকে আগত হাল্কা আলোয় শুধু তার রুমাল বাধা মুখটাই দেখা যাচ্ছে। পেছন দিক থেকে আমি ধীর পায়ে গিয়ে তাকে ঘপ করে জড়িয়ে ধরলাম। ছুড়িটা একদম পিঠে ঢুকিয়ে দিলাম। ব্যথায় কুকিয়ে উঠলো শিহাব। এবার হুঙ্কার করে বললাম আমি ..
--কি বলেছিলে তখন শিহাব? এখন কথাটা ফেরত নেবার সময় হয়েছে। এখন সময়টা আমার জন্যই গুড। ব্যাড ফর ইউ। বল লিজা কোথায়?
ব্যথায় কোকাতে কোকাতে শিহাব উত্তর দিলো..
--আমি শিহাব নই।
কথাটা শুনে চমকে উঠে ছেড়ে দিলাম তাকে।
--শিহাব নও। তাহলে নিশ্চয়ই শিহাবের চামচা!
--যা ইচ্ছা ভাবতে পারো। কিন্ত একথা সত্যি। এটা আমাদের জীবনের সবচেয়ে খারাপ সন্ধ্যা।
--ইয়েস আই নো দ্যাট। কিন্ত আমার জন্য নয় শুধু তোমার জন্য। আর সন্ধ্যাটাকে খারাপ করেছো তুমি নিজেই। বল কুত্তার বাচ্চা শিহাব কোথায়? আর কতজনের দল নিয়ে আমাকে মারতে এসেছিস? সব কটাকে মেরে ফেলবো আজ।
কথাটা শেষ না হতেই পাশের ঝোপ থেকে এক চিলতে টর্চের আলো এলো। সাথে সাথে ঘাড় ঘুরিয়ে সেদিকে তাকাতেই ঝোপের আড়াল থেকে পায়ের আওয়াজ আসতে লাগলো। আবারও কেউ দৌড়ে পালাচ্ছে। আহত ছেলেটার পিঠ থেকে ছুড়িটা বের করে বলে ফেললাম ..
--নিশ্চয়ই শিহাব। আমি আর তাকে ছাড়ছি না। পালিয়ে লাভ নেই। সবাইকে মারবো আজ।
ছেলেটা আহত অবস্থায় ঘুমিয়ে গেলো। আমি দৌড় দিলাম শিহাবের উদ্দেশ্যে। শিহাব নিশ্চয়ই একা আসেনি আজ। আমাকে যেতে হবে কালভার্টের দিকে। সোজা সেদিকেই দৌড়াতে লাগলাম। পাঁচ মিনিটের পথটা দৌড়ে গেলে তিন মিনিটের বেশি লাগেনা। কালভার্ট এর প্রান্তে দাঁড়াতেই দেখলাম দুজন কালভার্টের মাঝখানে দাড়িয়ে আছে। অন্ধকারের ভেতরে আবছা আলোতে শুধু বুঝা যাচ্ছে একজন ছেলে একজন মেয়ে খুব কাছাকাছি দাঁড়িয়ে আছে। ধীর পায়ে তাদের কাছাকাছি যেতে লাগলাম যেনো তারা আমার অবস্থান টের না পায়। এরা নিশ্চয়ই শিহাবের দলের। কাছে গিয়ে কয়েকগজ দূরে অবস্থান নিলেও তারা আমার উপস্থিতি টের পেলোনা। গভীর গল্পে মগ্ন তারা। কান পাতলাম তাদের কথাগুলো শুনার জন্য। তাদের কথপোকথন শুনেই পায়ের নিচটা কেঁপে উঠলো আমার।
--কি করছো খালিদ ..
কথাটা লিজার মুখ থেকে এলো। আর সাথে থাকা ছেলেটা উত্তর দিলো..
--কোনো কথা নয় ..
ভয়েসটা খুব পরিচিত। এটা যে আমার নিজেরই কন্ঠ। কিন্ত আমি দাড়িয়ে আছি খালিদের থেকে কয়েক কদম দূরে। আমার সামনে খালিদ আর লিজা ঠোঁটে ঠোঁট মিশিয়ে ভালোবাসা বিনিময়ে ব্যস্ত হয়ে গেলো। অদ্ভুতভাবে আমার চোখ দুটো সোজা আমার হাত ঘড়িটার দিকেই গেলো। একটু আগেই ৮ টা পার করেছে ঘড়িটার ঘন্টার কাটা। অথচ এখন গভীর রাত হওয়ার কথা ছিলো। বিড়বিড় করে মুখ থেকে বাক্যটা বের হয়ে গেলো
--Are you kidding me!!!!!!
পর্ব - ১ | পর্ব - ২ | পর্ব - ৩ | পর্ব - ৪ | পর্ব - ৫ | এক পাতায় সম্পূর্ণ
0 Response to "দ্যা ব্যাড ইভিনিং | খালিদ হাসান | পর্ব - ২"
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন