Ads Golpo.Best Kobita.Best

search

দ্যা ব্যাড ইভিনিং | এক পাতায় সম্পূর্ণ



পর্ব - ১ | পর্ব - ২ | পর্ব - ৩ | পর্ব - ৪ | পর্ব - ৫ | এক পাতায় সম্পূর্ণ

--আমার কিন্ত ভীষণ ভয় করছে।
লিজার মুখে কথাটা শুনে বাইক থামিয়ে ফেললাম আমি।"ভয়" শব্দটা শুনতে খুব বিরক্তিকর লাগে।আর লিজা বার বার এইসব কথা বলছে আর আমার মেজাজটা খারাপ করে দিচ্ছে। বাইক হঠাৎ করে থামিয়ে দেয়ায় একটু অবাক হয়েছে লিজা। আবারও বলে উঠলো..
--কি হলো! থামালে কেন? নাকি পেট্রোল শেষ? এজন্যই লোকে বলে যেখানে বাঘের ভয় সেখানেই সন্ধ্যা হয়!
আমি রাগত স্বরে জবাব দিলাম..
--তোমার কি মনে হয়না তুমি একটু বেশি বেশি ভয় পাচ্ছো! আর পেট্রোল ভরপুর আছে। তুমি খামোখা ভয় করোনাতো।
--ভয় পাবোনা তো কি? আমি কখনোই আমার পরিবারের সাথে এমন দুঃসাহস দেখাইনি।
--তো আমি দেখিয়েছিলাম বুঝি?
--মাঝপথে থামলে কেন তাহলে? নাকি ডিসিশন বদলাবে?
--না।তার দরকার নেই। জায়গাটার দিকে তাকিয়ে দেখেছো একবার?
.
আমার প্রশ্নটা শুনে লিজা এবার একটু নড়েচড়ে বসলো।চারদিকে তাকিয়ে দেখতে লাগলো।আমি বললাম ..
--বাইক থেকে নেমে পড়ো।
লিজা চারদিকে তাকাতে তাকাতে বাইক থেকে নেমে গেলো।
--জায়গাটা তো অনেক সুন্দর।আগে থেকেই চিনিতে নাকি জায়গাটা?
--না চিনতাম না। অপরিচিত জায়গা তাই বাইক নিয়ে আর সামনে এগোতে চাচ্ছি না। কেননা একটু পরেই সন্ধ্যা ঘনিয়ে আসবে। অন্ধকারে পথ ভুলে যেতে পারি।
--এরকম জায়গায় কেন এলে তাহলে! তুমি সবসময় ভুল সিদ্ধান্ত নাও। একটা কাজও তুমি পূর্ব পরিকল্পনা মাফিক করোনা।
--উপস্থিত বুদ্ধি সবচেয়ে ভালো উপায়।
--হয়েছে হয়েছে। এখন কি তুমি রাতটা এখানেই কাটাতে চাইছো?
.
লিজার মুখে বিরক্তির ছাপ দেখে হ্যাঁ বলার সাহস হলোনা আমার।বাইক থেকে নেমে আমিও চারদিকে তাকাতে লাগলাম।মহাসড়ক থেকে হঠাৎ করে একটা চোরা রাস্তা দিয়ে জঙ্গলে ঢুকে পড়লাম।এরপর জঙ্গলের ছোট রাস্তা দিয়ে এই পথে এসে গেলাম।রাস্তাও চিনিনা।আর উদ্দেশ্য জানা নেই।তবে নিশ্চয়ই দূরে কোথাও যেতে হবে আমাদের।বাড়ি থেকে পালানোর পর নিশ্চয়ই পরিবারের লোকজন আগে আশেপাশের কাছের পরিচিত জায়গাগুলোতেই খুঁজবে।তাই আমাদের দূরের অপরিচিত জায়গায় যেতে হবে।সেই উদ্দেশ্যেই ছুটে চলেছি দুজনে।দুজনের প্রেম অনেকদিনের। শত বাধাবিপত্তি ছিলো এই প্রেমকে ঘিরে।দুই পরিবারের কেউই মেনে নেবেনা আমাদের ভালোবাসা।পরিবার থেকে প্রেম মেনে না নিলে সচরাচর প্রেমিক যুগলেরা যে দুঃসাহসিক পথ অবলম্বন করে সেই থিওরি আমরাও এখন প্রয়োগ করছি।অতপর অনেকটা পথ পাড়ি দেয়ার পর এখন আমাদের একটু বিশ্রাম নেয়ার পালা।
.
এখন আমাদের পেছনে ঘন জঙ্গল।আশেপাশে বড় বড় গাছগুলো মাথা উচুঁ করে দাড়িয়ে আছে।এরকম জঙ্গলে বাঘ ভাল্লুকের ভয় নেই। তবে অন্ধকারে ভয়টা এমনিতেই এসে যায়।পেছনের জঙ্গল থেকে চোখ সরিয়ে লিজা সামনের রাস্তায় তাকালো।সামনে একটা খরস্রোতা ছোট খাল বয়ে চলেছে।নিশ্চয়ই পাহাড়ী কোনো ঝড়নার পানি এই খাল দিয়ে বয়ে চলে যায়।বর্ষা মৌসুম না হয়েও খাল পানিতে টইটম্বুর। তবে খাল পার হওয়ার জন্য খালের উপর সুন্দর একটা কালভার্ট দেখা যাচ্ছে।তার ওপাশে উচুঁ উচুঁ পর্বত গুলো দাড়িয়ে আছে।প্রকৃতির এক অপূর্ব লীলাভূমির কোল ঘেঁষে সৌন্দর্য অবলোকন করছি আমরা।লিজা অবাক হয়ে বলে উঠলো ..
--এটাতো দেখি স্বপ্নপুরী।তুমি নিশ্চয়ই প্ল্যান করেই এখানে আমাকে এনেছো।জায়গাটা কল্পনার চেয়েও একটু বেশি সুন্দর।
আমার চোখের দিকে তাকালো লিজা। বললো..
--সত্যি করে বলো তো, এটা তোমার পূর্ব পরিকল্পনা ছিলোনা?
যদিও জায়গাটার ব্যপারে আমি একদমই অবগত নই তবুও লিজাকে ইমপ্রেস করার জন্য মিথ্যা ক্রেডিট নিয়ে একটা গর্বসূচক হাসি দিয়ে বললাম ..
--তোমার প্রেমিককে এখনো চিনতে পারলে না লিজা? আমি কতটা রোমান্টিক তুমি আজও বুঝলে না।
--হাহাহা। জানতাম জানটুস। কিন্ত জানোতো, এত কিছু মনে হয় সুখের হবেনা।আমার খুব ভয় করছে এখনো।টেনশনে মাথা ঘুরছে।
--পাগল মেয়ে, ওইসব ভুলে যাও এখন। মনে করো পৃথিবী তে এখন শুধু তুমি আর আমি আছি আর আছে এই প্রাকৃতিক সৌন্দর্য। আমাদের এখন উপভোগ করার সময়। টেনশনে মাথা ঘুরাবার সময় নয়।
.
কথাটা বলেই দুজনে দুজনার হাত ধরে কালভার্ট টার দিকে এগিয়ে যেতে লাগলাম।কালভার্ট এর উপরে গিয়ে কংক্রিটের রেলিং এ হেলান দিলাম আমি।লিজা আমার হাত ধরে পাশে দাড়ালো।সন্ধ্যা ঘনিয়ে আসছে।সূর্য অস্ত যাওয়ার জন্য প্রস্তুত হচ্ছে।লিজা প্রশ্ন করলো..
--কি ঠিক করলে? এই নির্জন জায়গাতেই রাত কাটাবে নাকি?
--ভয় পাচ্ছো কেন? আমি সব পরিকল্পনা করে এসেছি।
--ভয় পাবোনা! এইসব নির্জন জায়গা দিনের বেলা সুন্দর লাগলেও রাতের বেলা ভয়ংকর হয়ে উঠবে না তার কি গেরান্টি আছে!
.
লিজার কথাটা শুনে আসলেই একটু চিন্তা হতে লাগলো। কথাটা ফেলে দেয়ার মতো নয়।বিশেষ করে সন্ধ্যা হতে হতেই খুব খারাপ পরিস্থিতির তৈরি হয়ে যাবে।কিভাবে কাটাবো রাতটা জানিনা।যদিও সময়টা খুব খারাপ যাবে।তবুও ঘড়িতে সময়টা দেখে নেয়া উচিৎ এখন কয়টা বাজে।
.
ঘড়ি থেকে চোখ সরিয়ে লিজার দিকে তাকিয়ে তাকে অভয় দেয়ার জন্যই বলে উঠলাম ..
--হ্যাঁ, তা ঠিক। তবে আমরা সবকিছু সহজ করে নিতে পারি। কাঁধ থেকে ব্যাগটা এখনো নামাওনি কেন?
.
কথাটা বলে আমি লিজার কাঁধ থেকে ব্যাগ টা ছাড়াতে লাগলাম। ব্যাগে কিছু শুকনো খাবার। আর কাপড় চোপড় নিয়ে এসেছি। পকেট থেকে লাইটারটা বের করতেই লিজা অগ্নিশর্মা হয়ে বলে উঠলো..
--খালিদ, তুমি কি সিগারেট খাও? সত্যি করে বলো।
--না রে বাবা, আগুন জ্বালাতে হবে তাই নিয়ে এসেছি। মেয়েরা যে কেন এমন সন্দেহপ্রবণ হয়! লাইটার কাছে থাকলেই কি কেউ স্মোকার হয়! ছুড়ি সাথে থাকলেই কি কেউ খুনি হয় নাকি! হতে পারে সে কসাই। নাকি রাইফেল সাথে থাকলেই কেউ সন্ত্রাসী হয়! হতে পারে সে সেনাবাহিনীর সদস্য।কলম সাথে থাকলেই কি কেউ পরীক্ষার্থী হয়! হতে পারে সে কবি।
--হয়েছে হয়েছে। আর প্যাঁচাতে হবেনা। তুমি একদম ভালো ছেলে। এবার খুশি?
--হ্যাঁ খুব। এই খুশিতে আসো মিষ্টি মুখ করি।
--একি! তুমি ব্যাগে মিষ্টিও এনেছো নাকি!
--আরে না রে পাগলী। এই মিষ্টি সেই মিষ্টি না। কাছে আসো বুঝাচ্ছি।
কথাটা শেষ করে লিজার হাতটা ধরে এক ঝটকায় কাছে নিয়ে এলাম।কোমড় জড়িয়ে ধরে ঠোঁটে ঠোঁট মেশাতে যাবো এমন সময় চমকে উঠলাম দুজনে।লিজার ফোনটা আচমকা বেজে উঠেছে।
.
পার্স থেকে ফোনটা বের করতেই লিজার হাত দুটো থর থর করে কাঁপতে লাগলো।ফোনের স্ক্রিন থেকে চোখ সরিয়ে আমার দিকে তাকিয়ে কাঁপা কাঁপা কন্ঠে বলে উঠলো ..
--বাবা ফোন করেছে। কি করবো?
--পাগলী মেয়ে কোথাকার তুমি ফোনটা এখনো সুইচ অফ করোনি কেন!
ফোনটা থেমে গেলো তখনই।কয়েক সেকেন্ড পর আবারও রিংটোন বাজতে লাগলো। লিজা এবার আরো অবাক হয়ে বলে উঠলো..
--শিহাব। শিহাব ফোন করেছে।
শিহাবের নামটা শুনেই মেজাজ অত্যধিক বিগড়ে গেলো আমার। ফোনটা লিজার হাত থেকে কেড়ে নিয়ে খালের পানিতে ছুড়ে মারলাম আমি।
.
--একি আমার নতুন ফোন টা ..
--বেচেঁ থাকলে আবার নতুন ফোন কেনা যাবে। পাগলী মেয়ে ফোন অন করে রেখেছিলে কেন! যদি আমাদের নাম্বার ট্র্যাক করে তাহলে ধরা পড়তে বেশি সময় লাগবে না। আর শিহাব নিশ্চয়ই জেনে গেছে আমাদের পালানোর ব্যপারে। শয়তানটা নিশ্চয়ই জেনে গেছে। আল্লাহ আল্লাহ করো যেনো আমাদের ট্র্যাক না করে।
আমার কথা শেষ হতেই লিজা বলে উঠলো..
--তুমি জানো, শিহাব আমার বাড়িতে বিয়ের প্রস্তাব পাঠিয়েছে। দুইবার প্রোপোজ ও করেছে আমাকে। ও আসলে কি চায়?
--ও তোমাকে ভালোবাসেনা লিজা।ও এসব করছে আমার সাথে শত্রুতা করে। কলেজ লাইফ থেকেই আমাদের শত্রুতা চলছে। আমার সব কিছুতে ও ঠ্যাং ঢুকিয়ে দিতে চায়।
--এমনও তো হতে পারে ও আমাদের ফলো করছে।
--আরে না। এত ভয় পাচ্ছো কেন? ওসব করবে না ও। আমরা যে পালিয়ে যাবো এটাতো আমরা নিজেরাই জানতাম না। শিহাব কি করে জানবে!
.
আমার কথাটা শেষ না হতেই লিজা চমকে উঠলো।একদম থ হয়ে দাড়িয়ে কালভার্ট টার প্রান্তে তাকিয়ে রইলো।আমিও সেদিকে তাকিয়ে রইলাম।জিজ্ঞেস করলাম ..
--কি হলো লিজা!
লিজা কাঁপা কাঁপা গলায় জবাব দিলো..
--আমার মনে হলো গাছের আড়ালে কেউ লুকিয়ে আছে। সে আমাদের ফলো করছিলো। আমাদের দেখেই লুকিয়ে পড়েছে।
আমি লিজার কথা শুনে অট্টহাসি দিয়ে উঠলাম।ছেড়ে আসা কালভার্ট এর প্রান্তে একটা বড় গাছ খেয়াল করলাম।আসলেই গাছের পেছনে লুকিয়ে যাবার জন্য যথেষ্ট জায়গা রয়েছে। কিন্ত এই নির্জন জায়গায় আমাদের সাথে কে কেনই বা লুকোচুরি খেলবে! আমাদের খোঁজে কেউ আসলে নিশ্চয়ই সরাসরি ধরতে না এসে লুকোচুরি খেলবে না। হো হো করে হেসে নিয়ে বললাম ..
--ওরে পাগলী মেয়ে তুমি এত ভীতু কেন? শিহাব বা অন্যকেউ কেন এখানে আসবে এত তাড়াতাড়ি! তুমি অতিরিক্ত ভয়ের কারণে হ্যালুসিনেশনের শিকার হয়েছো। তাছাড়া এখন অন্ধকার ঘনিয়ে এসেছে। তাই হয়তো ভুল দেখেছো পাগলী মেয়ে কোথাকার।
কিন্ত আমার কথা মানতে পারলো না লিজা। জোর গলায় বললো ..
--না, আমি স্পষ্ট দেখেছি কেউ একজন লুকিয়েছে গাছের আড়ালে।
লিজাকে শান্ত করার জন্য বললাম ..
--আচ্ছা তাহলে চলো সত্য উদ্ঘাটন করা যাক। গিয়েই দেখা যাক গাছের আড়ালে কে!
.
ব্যাগটা কাঁধে ঝুলিয়ে নিয়ে লিজার হাত ধরে যেতে লাগলাম গাছটার দিকে।ভয় আমারও একটু একটু করছে।যদি শিহাব আমাকে ফলো করে থাকে তাহলে খুব খারাপ কিছু ঘটতে চলেছে কপালে। লিজাকে যতই মিথ্যা শান্তনা দেইনা কেন শিহাবের মতো পাক্কা হারামীর ব্যপারে আমি নিজেও আন্দাজ করতে পারিনা। নিজের স্বার্থের জন্য আর আমাকে বিপদে ফেলার জন্য সে সবকিছু করতে পারে।শিহাব আর আমি কলেজ লাইফের বন্ধু ছিলাম।কিন্ত মাঝখানে ওর গার্লফ্রেন্ড নিয়ে ঝামেলা হয়। আমরা দুজনই একই রকম দেখতে।কেউ কেউ বলতো আমাদের ভয়েস ও নাকি একই রকম। দুজনকে উলোট পালোট করে দিলে কেউ কিছু টের পাবেনা।যদিও ব্যপারটা তা নয়।আমাদের চেহারায় অনেক অমিল রয়েছে।কিন্ত ওর স্বার্থপর গার্লফ্রেন্ড একদিন আমাকে প্রপোজ করে দিলো। কারণ সেবছর লেখাপড়াতে আমি শিহাবের থেকে অনেক এগিয়ে ছিলাম।কিন্ত ব্যপারটা কোনোরকমে জেনে যায় শিহাব। ওর গার্লফ্রেন্ডের পরে কি হয়েছে জানিনা তবে শিহাব আমার সাথে শত্রুতা শুরু করে দেয়। শিহাবকে বুঝানোর চেষ্টা করেছি অনেক কিন্ত কিছুই বুঝতে চায়না।তাই শত্রুতার জবাব আমিও শত্রুতার মাধ্যমে দেয়া শুরু করলাম। একটা মেয়ে শুধু শুধু আমাদের মধ্যে শত্রুতা বানালো।হিংসা থেকে উৎপন্ন হওয়া এখন সেই শত্রুতা ঘোর হয়ে গেছে। মানুষ বড় হয়, বড় হয়ে যায় তাদের মগজের বুদ্ধি। তাই শত্রুতাগুলো এখন অনেক উচ্চ পর্যায়ের।তবে আমাকে এখনো বড় কোনো ক্ষতির সম্মুখীন হতে হয়নি শিহাবের জন্য। আসলে শিহাবের শত্রুতা আগে থেকেই বুঝতে পেরে আমিও পাশ কাটাই। এখন আমার প্রেমিকাকে নিয়ে পড়েছে। কিছুতেই নাকি আমাদের এক হতে দেবেনা। ঠিক আছে দেখা যাবে।
.
গাছের কাছাকাছি গিয়ে দুজনেই গাছের পেছনে উপড়ে নিচে তাকিয়ে কাউকে দেখতে পেলাম না।আশেপাশে তাকালাম আমি। না কোনো জনমানবের অস্তিত্ব নেই।লিজাকে উদ্দেশ্যে করে বললাম ..
--পাগলী মেয়ে, বলেছিলাম না খামোখা ভয় পাচ্ছিলে। তুমি আসলে সেই শুরু থেকেই ভয় পাচ্ছো। অতিরিক্ত ভয়ের কারণে এমন উল্টাপাল্টা দেখছো।এত ভয় নিয়ে কি প্রেম করা যায়!
লিজা মাথা নিচু করে কোমল কন্ঠে বললো..
--সত্যিই তো! কেউ ফলো করছে না তো!
--না রে বাবা। এত ভয় পেওনা। আমি আছিতো।
আমার কথাটা শেষ করতে পারলাম না। কেমন একটা পঁচা গন্ধ নাকে আসলো। গন্ধে দুজনে নাক চেপে ধরলাম। লিজা বলে উঠলো..
--কেমন পঁচা একটা গন্ধ আসছে।
আমি তাকিয়ে দেখলাম কিছুদূরে অনেক ঝোপঝাড় খালের পাশ ঘেঁষে। সেখান থেকেই সম্ভবত এমন কটু গন্ধ আসছে। লিজাকে বললাম ..
--মনে হচ্ছে কোনো সাপ মরে পঁচে গেছে ঝোপঝাড়ের ভিতরে। চলো আমরা কালভার্ট টার ওখানে যাই। ওখানে কোনো গন্ধ নেই।
.
আবারও হেলান দিয়ে দাঁড়ালাম দুজনে। সন্ধ্যা হয়ে গেছে।অন্ধকার নেমে এসেছে।ব্যাগ থেকে খাবার বের করে দুজনে খেয়ে নিলাম। লিজা বললো..
--ঘুমাবো কোথায়? পরবর্তী কোনো পরিকল্পনা আছে কি তোমার?
--চিন্তা কেন করছো এত! মে হু না ইয়ার।আমার ব্যাগে তাবু টাঙ্গানোর জন্য অনেক কিছুই আছে।তাবু টাঙ্গিয়ে ঘুমাবো। আর প্লিজ মশার কামড়টা একটু সহ্য করিও কেননা এর কোনো ব্যবস্থা আমি করতে পারিনি।আর কালকের পরিকল্পনা কালকে সকালে করা যাবে।বাই দ্যা ওয়ে তুমি এমন জায়গায় ঘুমাতে পারবে?
--মানে!
--মানে এমন রোম্যান্টিক পরিবেশে কিভাবে ঘুমাবে? আমার তো ইচ্ছে করছে সারারাত আজ প্রেম করে কাটিয়ে দিবো।
--হয়েছে, এত উতলা হতে হবেনা। সারারাত মশা মারতেই চলে যাবে। বলেছিলাম না সুন্দর জায়গাটা রাতের বেলা ভয়ংকর হয়ে যাবে।
--আমি ভালোবাসা দিয়ে মশার কামড় ভুলিয়ে দিবো চিন্তা করোনা।
--সবসময় আহ্লাদি তাইনা!
লিজার কথায় চুপ করলাম আমি।এমন অপরিচিত নির্জন পরিবেশে নিজের মনের মানুষের সাথে কাছাকাছি দাড়ালে একটা ছেলের কেমন অনুভূতি হয় তা কোনো মেয়ে আদৌ বুঝতে পারে কিনা জানিনা।রেলিং ধরে নিচে তাকিয়ে রইলাম দুজনে। জলের স্রোত দেখছি আর সময় পার করছি।ঘড়িতে তাকিয়ে দেখলাম রাত আটটা বেজে গেছে।খালের পার ঘেঁষে কিছু কংক্রিটের ব্লক সারিবদ্ধভাবে রেখে দেয়া। দুইপারেই প্রায় একই রকম। এটা সরকারি জায়গা নাকি ব্যক্তিগত জায়গা জানিনা। তবে জায়গাটা নিশ্চয়ই কোনো শৌখিন ব্যক্তির অধীনে আছে। আর জঙ্গলের পাহাড় ঘেরা একটা জায়গাতে এসব কাজ কে করলো সেটাও বুঝে আসেনি এখনো।কাল জায়গাটার ব্যপারে খোঁজ নিতে হবে।
.
মাথা ঘুড়িয়ে দূরে তাকালো লিজা। বলে উঠলো..
--আলোটা দেখতে পাচ্ছো খালিদ?
লিজার প্রশ্ন শুনে আমিও তাকালাম সেদিকে।খালের পার ঘেঁষে একটা বাড়ি দেখা যাচ্ছে। সেটা ওইপারে।অথচ দিনের বেলায় বাড়িটা দেখিনি আমরা। বললাম ..
--হ্যাঁ। আলোটা কোনো বাড়ি থেকে আসছে।
--দিনের বেলায় তো দেখিনি সেটা।
--আরে ঝোপঝাড় ঘেরা জঙ্গল এলাকা। এতকিছু কি নজরে আসে। এখন অন্ধকারে আলো জ্বলছে বলে দেখতে পাচ্ছি। তাছাড়া তুমি এত ভয়ের মধ্যে ছিলে এতকিছু খেয়াল করার সময় কি পেয়েছি আমরা!
--হ্যাঁ। তা ঠিক। বাড়ি যখন পেলাম তখন যাও বাইকটা নিয়ে আসো। আমরা বরং বড়িটাতে গিয়েই রাত কাটাই।
--আরে কি বলো! ওটা কি তোমার পরিচিত আত্মীয়র বাড়ি নাকি!
--আরে বিপদে পড়েছি জানালে নিশ্চয়ই থাকার ব্যবস্থা করবে।
আমি একটু ভেবে নিয়ে বললাম ..
--কথাটা অবশ্য ফেলে দেয়ার মতো নয়।কিন্ত আমি চাচ্ছি কিছুক্ষণ নির্জনে তুমি আমি একসাথে কাটাই।
--ততক্ষণে বাড়ির লোকগুলো ঘুমিয়ে যেতে পারে।
--আরে আমার তো মনে হয় ওরা অনেক আগেই ঘুমিয়ে গেছে। আমরা বরং মাঝরাতেই যাবো।
--মাঝরাতে কেন!
--ততক্ষণ আমি আমার পাগলীটার সাথে প্রেম করবো।
--ধুর। আবার আহ্লাদি করছো ..
লিজা লজ্জা পেয়ে চুপ করে রইলো।আমি তাকিয়ে রইলাম লিজার চোখের দিকে। কিন্ত লিজা আমার দিকে না তাকিয়ে ঠোঁটে হাসি হাসি ভাব নিয়ে তাকিয়ে রইলো খালের মাঝখানে।আমি সুযোগ বুঝে লিজার গা ঘেঁষে দাড়িয়ে হাতটা ধরে নিলাম আলতো করে।লিজা কি ভেবে যেনো চমকে উঠলো।তা লক্ষ্য করে আমি বললাম ..
--কি হলো! ভয় পেলে নাকি!
--খালিদ,মনে হলো খালের মাঝখানে এইমাত্র আমি একটা আলো জ্বলতে দেখলাম। যেটা জ্বলে উঠার সাথে সাথেই নিভে গেলো।
লিজার কথা শুনে মেজাজটা খারাপ করেই বলে উঠলাম ..
--এখনো ভয়ে উল্টাপাল্টা দেখছো! তুমি চোখ বন্ধ করোতো। আমার বিশ্বাস তুমি চোখ বন্ধ করলেও অনেক কিছু দেখবে। আসলে তুমি কিছুই দেখছো না নিজের চোখে, তোমার মস্তিষ্ক এইসব উল্টাপাল্টা জিনিস দেখাচ্ছে।
--না খালিদ, বিশ্বাস করো আমার মনে হচ্ছে আমি ঠিক দেখেছি ..
.
লিজার কথা শেষ করতে না দিয়ে রেলিং এ ওর হাতদুটো চেপে ধরলাম।ওর মুখোমুখি দাঁড়াতেই বলে উঠলো ..
--কি করছো খালিদ ..
--কোনো কথা নয় ..
লিজার ঠোঁটে আমার ঠোঁট মিশিয়ে দিলাম। লিজা সজোরে জাপটে ধরলো আমাকে। আমিও লিজাকে জাপটে ধরে ভালোবাসার বিনিময় করতে লাগলাম।ভালোবাসা বিনিময়ের জন্য এমন নির্জন পরিবেশ কখনো পাইনি এর আগে।আর লিজার অবান্তর ভয় গুলো দূর করার জন্য এই পদ্ধতি টা নিশ্চয়ই ভালো কাজ করবে। তাই মন ভরে ভালোবাসার বিনিময় করতে ব্যস্ত হয়ে গেলাম দুজনে।
.
ঠিক সেই মুহুর্তে পিঠে প্রচন্ড ব্যথা অনুভব করলাম আমি। ব্যথায় কুকিয়ে উঠলাম।কেউ একজন পিঠে চাকু ঢুকিয়ে দিয়েছে।আমি কুকিয়ে উঠতেই লিজা আমাকে ছেড়ে দিয়ে চিৎকার করে উঠলো।পেছন থেকে ছুড়িটা বের করে নিলো কেউ একজন। আমি ঘুরে তাকাতেই সে আমার শার্টের কলার চেপে ধরলো এক হাতে।আমিও হাত চালাতে লাগলাম কিন্ত পিঠে এত ব্যথা হচ্ছে যে শক্তি পেলামনা লোকটার সাথে লড়াই করার। লিজা ভয়ে চিৎকার করছে কিন্ত গলা থেকে আওয়াজ বের হচ্ছেনা ততটা।প্রচন্ড ভয় পেলে এমনই হয়। কন্ঠস্বর ও চুপসে যায়। আমি আমার সামনে দেখতে পেলাম মুখ ঢাকা একটা লোককে। রুমাল দিয়ে মুখ ঢেকে নেয়া। হাতের ছুড়িটা আমার দিকে তুলে বললো..
--তোমাকে মরতে হবে খালিদ।এই চমৎকার সন্ধ্যা তোমার জন্য নয়, এটা আমার জন্য। গুড ইভিনিং খালিদ।গুড ইভিনিং ফর মি।ব্যাড ইভিনিং ফর ইউ।
.
কথাটা বলেই আমার বুকে ছুরি চালাতে যাবে এমন সময় লিজা লোকটাকে ধাক্কা দিয়ে সরিয়ে দিলো। লোকটা ধাক্কা খেয়ে আমাকে আঘাত করতে ব্যর্থ হলো। কিন্ত তাল সামলে নিয়ে লিজাকে ধাক্কা দিয়ে নিচে ফেলে দিলো।
আমার শার্ট রক্তে ভিজে গেছে। লোকটা আমার মুখেও ছুড়ি চালিয়ে দিলো। মুখের বিভিন্ন জায়গায় ছুরির আঘাতে রক্তাক্ত হয়ে গেলো। এরপর আমাকে রেলিং এর উপরে বসিয়ে দিলো।আমি শরীরে আর শক্তি পাচ্ছিনা ব্যথায়।
.
আমার হাটুতে ছুরির আঘাত করতে যাবে এমন সময় লিজা এসে আবারও ধরে ফেললো লোকটাকে। লোকটাকে লিজা পেছন থেকে জাপটে ধরায় আমাকে সে আর আঘাত করতে পারছে না। আমি চোখে ঝাপসা দেখতে লাগলাম। লোকটা লিজার থেকে নিজেকে ছাড়িয়ে লিজাকে জাপটে ধরে কিছু একটা বলতে লাগলো।শুনতে পেলাম না আমি। রেলিং থেকে নিচে পড়ে গেলাম।পানিতে পড়ার সময় বন্দুকের গুলির শব্দ শুনতে পেলাম।ঠাস করে একটা শব্দ হলো। মনে হলো বাজ পড়লো। তখনই আমিও পতিত হলাম খালের পানিতে। ভেসে যেতে লাগলো আমার অর্ধমৃত দেহটা।লিজার কি হাল হলো জানিনা। নিশ্চয়ই সেটা শিহাব ছিলো। আমাকে মারার পর এখন নিশ্চয়ই লিজাকেও শেষ করে দিবে শয়তানটা।কথাগুলো ভাবতে ভাবতে চোখ বন্ধ হয়ে যেতে লাগলো আমার।বাঁচাতে পারলাম না নিজেকে বাঁচাতে পারলাম না নিজের ভালোবাসাকে।পানিতে হাবুডুবু খেতে খেতে চলেছি ভেসে। সাঁতার কাটারও শক্তি পাচ্ছিনা। জ্ঞান হারিয়ে ফেললাম আমি।
.
.
যখন জ্ঞান ফিরলো তখন নিজেকে দেখলাম পারঘেষে একটা কলাগাছের সাথে আমার শরীর আটকে আছে।আসলে কলাগাছ বললে ভুল হবে। এটা একটা কলাগাছের তৈরি ভেলা। হামাগুড়ি দিয়ে পারে উঠে গেলাম। পিঠে এখনো ব্যথা করছে। মুখেও ব্যথা করছে। পারে উঠতেই খেয়াল করলাম আমি সেই বাড়িটার সামনে দাড়িয়ে আছি। কালভার্ট থেকে লিজা আর আমি এই বাড়িটাই দেখেছিলাম। একতলা বিশিষ্ট ভবন। তবে বারান্দার আলোটা কালভার্ট থেকে স্পষ্ট দেখা যায়। কোনোমতে খুঁড়িয়ে খুঁড়িয়ে হেটে বাড়িটার গেইটের সামনে গিয়ে দাঁড়ালাম। শরীরে একদম শক্তি নেই আর। কলিং বেলের সুইচ টা দেখে একবার চাপ দিলাম। চাপ দিতেই শক্তি হারিয়ে ধুপ করে নিচে পড়ে গেলাম আবার। আবারও চোখ বন্ধ হয়ে আসছে। তবে কানে শুনতে পেলাম কেউ একজন দরজা খুলছে।নিশ্চয়ই দরজার সামনে অর্ধমৃত এক আগন্তুক দেখে অনেক অবাক হবে সে।

কথা বলার বা নড়াচড়া করার মতো কোনো শক্তি এখন আমার শরীরে নেই। লোকটা দরজা খুলেই আমাকে দেখে বলে উঠলো..
--হু আর ইউ?
আমার কথা বলার শক্তি না থাকা সত্ত্বেও জোর করে বলার চেষ্টা করলাম ..
--হেল্প মি।
লোকটা এবার আমাকে পর্যবেক্ষণ করে নিলো।আমি উপুড় হয়ে মুখ থুবড়ে পড়ে আছি। আমি জানিনা তিনি আমার রক্তাক্ত পিঠটা দেখেছে কিনা। তবে একটু পরেই বলে উঠলো..
--আগে আপনাকে ভেতরে নিয়ে যাই।
আমি নিথর হয়ে গেলাম। শুধু অনুভব করলাম লোকটা আমাকে দুই হাত ধরে তুলে কাধে নিলো। এরপর দরজা লাগিয়ে দিয়ে আমাকে একটা রুমের দিকে নিয়ে গেলো।
.
এরপর কতক্ষণ চলে গেলো জানিনা।যখন জ্ঞান ফিরলো তখন অনুভব করলাম পিঠে কেউ কিছু করছে। লিজার কথা মনে পড়ে গেলো আমার। লিজার নাম মনে হতেই "লিজা" বলে উচ্চস্বরে চিৎকার করে উঠলাম আমি। ঠিক তখনই কেউ একজন বলে উঠলো..
--অনেকদিন পর বাংলা সিনেমার দৃশ্য দেখলাম। তাও আবার বাস্তবে। জীবন ধন্য হলো।
থেমে গেলাম আমি। লোকটার কথা শুনে হুরমুরিয়ে উঠে বসে পড়লাম। আমাকে শুইয়ে রাখা হয়েছে একটা নরম বিছানায়। আর লোকটা এতক্ষণ আমার পিঠে ব্যান্ডেজ লাগাচ্ছিলেন।আমার তাড়াহুড়ো দেখে লোকটা আবারও বলে উঠলেন ..
--প্লিজ ইয়াংম্যান শান্ত হয়ে বসে থাকুন। আপনি এখন খুব দুর্বল।শরীর থেকে অনেক রক্ত ক্ষরণ হয়েছে। আপনার এখন রেস্ট দরকার।
.
আমি লোকটার কথা শুনে চেয়ে রইলাম তার শরীরের দিকে।গায়ে সাদা এপ্রোন পরিহিত লোকটাকে প্রথম দেখাতেই ডাক্তার মনে হচ্ছে।চোখে মোটা ফ্রেমের চশমা।মাথার চুল আধাপাকা। খোঁচা খোঁচা দাড়িগুলোতে এখনো পাক ধরেনি।চুল দাড়ি উস্কোখুস্কো।খুব বেশি বুড়ো হয়নি লোকটা। চেহারায় এখনো যুবক যুবক ভাবটা রয়ে গেছে।সবচেয়ে বেশি অবাক হলাম তার নাকে ব্যান্ডেজ দেখে।আমি শুধু তার দিকে চেয়েই রইলাম কিছু বলার ভাষা খুজেঁ পাচ্ছিনা। উনাকে আমার ধন্যবাদ দেয়া উচিৎ। কিন্ত আমার হতবাক চেহারা দেখে তিনি নিজেই বলে বসলেন ..
--লাভ কেস তাইনা!
কথাটা শুনেই আমি উঠে দাঁড়াতে যাবো এমন সময় উনি আমাকে ধরে বসিয়ে দিয়ে বললেন ..
--প্লিজ ইয়াংম্যান আগে শান্ত হয়ে বসুন। আপনার বিশ্রামের প্রয়োজন এখন।অনেক রক্ত গেছে। শরীর দুর্বল আপনার।
--আমাকে আটকাবেন না প্লিজ। আমার লিজা ভীষণ বিপদে আছে।
--লিজা..
--আমার প্রেমিকা। সে নিশ্চয়ই কালভার্টে আছে। আমাকে সেখানে যেতে হবে। প্লিজ আমাকে যেতে দিন।
আমি উঠতে গেলেই লোকটা আমার হাত ধরে বিছানাতেই বসিয়ে দিলো। এরপর বললো..
--ওয়েট ওয়েট ম্যান। আমি বুঝতে পেরেছি। আপনি আগে একটু শান্ত হোন।
--আপনি বুঝতে পারছেন না এটা আমার জীবন মরনের প্রশ্ন।আমার দেরি হলে লিজার কিছু একটা হয়ে যাবে।
--একদম বাংলা সিনেমা। নব্বইয়ের দশকে এরকম সিনেমা খুব ভালো লাগতো। এখন অবশ্য পানসে লাগে। নায়ক নায়িকার একে অপরের জন্য এমন প্রেম খুব দুর্লভ দৃশ্য ছিলো সেসময়।
--আপনি কি আমার সাথে মজা করছেন! দেরি করলে শিহাব আমার লিজাকে খুন করে দিবে। না জানি মেয়েটা একা ওই শয়তানটার সাথে পেরেছে কিনা।
--ওয়াও! একজন ভিলেনের আবির্ভাব হলো। প্রেম কাহিনী টা জমে উঠলো। তাহলে আপনাদের প্রেমের গল্পের ভিলেন হলো শিহাব। ইন্টারেস্টিং ..
--মোটেও ইন্টারেস্টিং নয়।আপনি শুধু শুধু আমার সময় নষ্ট করছেন।
---নো নো ইয়াংম্যান আমি কখনো সময় নষ্ট করিনা বরং আমি সময়ের সঠিক ব্যবহার করি।
--মানে!
--আমি আপনাকে আশ্রয় দিয়েছি, আপনার ক্ষত বিক্ষত শরীরের ট্রিটমেন্ট দিয়েছি আর এখন আপনি আমাকে অবিশ্বাসের চোখে দেখছেন।বাংলা সিনেমার কাহিনীও এমন। যে উপকার করে সেই অবহেলার শিকার হয়।
--আপনি আবারো বিষয়টাকে সিনেমার দিকে নিয়ে যাচ্ছেন। এটা আমার লাইফের ব্যপার।
--এজন্যই আপনাকে শান্ত হয়ে বসতে হবে।
--প্লিজ বুঝার চেষ্টা করুন বাইরে আমার সবচেয়ে প্রিয় মানুষটা বিপদে আছে। আর আপনি আমাকে এখানে শান্ত হয়ে বসতে বলছেন।এটা আমার পক্ষে কিভাবে সম্ভব!
--হতে পারে আপনার এখানে শান্ত হয়ে বসে থাকাটাই আপনার প্রিয় মানুষটাকে রক্ষা করতে পারে।
--আপনি অনেক অদ্ভুত কথা বলছেন। আপনি নিশ্চয়ই অনেক কিছু জানেন। লিজা কি এখানে এসেছে! সে কি আমার সাথে এখানে এসেছিলো! আপনি কি তাকে দেখেছেন! শিহাব কি এসেছিলো খুন করতে!
--আপনি আবারও উত্তেজিত হয়ে যাচ্ছেন। আমি আপনাকে শান্ত হয়ে বসতে বলেছিলাম।
.
লোকটার কথা বলার ভঙ্গি এখন রাগত হয়ে গেছে।তাই আমি একটু শান্তই হলাম। যদিও এমন পরিস্থিতিতে শান্ত থাকাটা খুব মুশকিল কাজ।লোকটা শান্ত গলায় বললেন ..
--নাহ, আমি শুধু আপনাকেই দেখেছি দরজার ওপাশে। আর কাউকে পাইনি। আর আপনি কালভার্টের কথা বলছিলেন। না সেরকম কাউকে দেখিনি। আমি চতুর্দিকে উঁকি ঝুকি দিয়েছিলাম কাউকে পাইনি শুধু আপনাকেই রক্তাক্ত অবস্থায় পেয়েছিলাম।তাই আপনাকেই ভেতরে নিয়ে এসে ব্যান্ডেজ লাগাচ্ছিলাম।
..লোকটার কথা শুনে নিজেকে একটু অকৃতজ্ঞ মনে হলো। তাই নিচু স্বরে বললাম ..
--আসলে আমি অনেক দুঃখিত। আপনি আমার এত বড় উপকার করলেন আর আমি আপনার প্রতি এখনো কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করিনি। আসলে পরিস্থিতি এতটা খারাপ হয়ে গেছে যে আমি জ্ঞানশূন্যতায় ভুগছি। প্লিজ কিছু মনে করবেন না।
--না ইয়াংম্যান, আমি কিছু মনে করিনি। আমি বুঝতে পেরেছি আপনার সমস্যা।তবে এর সমাধানও নিশ্চয়ই হবে।
--দেরি করলে আর হবেনা। শিহাব এমন জায়গায় আমাদের খুন করার সুযোগ নিশ্চয়ই হাতছাড়া করবে না। আমাদের শত্রুতার ব্যপারে আপনার কোনো ধারণা নেই। সে এমন সুযোগের অপেক্ষাতেই ছিলো এতদিন। আর আমি ভুল করে তাকে সুযোগ করে দিলাম।
--শিহাব কি খুব বড় মাপের গুন্ডা!
--স্বার্থ আর হিংসার বশবর্তী হয়ে মানুষ হিংস্র শয়তানেও পরিণত হতে পারে।শিহাব এখন একা নয় ওর কিছু চামচাও যুক্ত হয়েছে আমার ক্ষতি করার জন্য।
--আচ্ছা, তাহলে শিহাবের ব্যপারে জেনে আমার আর কোনো কাজ নেই। আপনি বরং আপনার ব্যপারে বলুন।
--আমার ব্যপারে!
--হ্যাঁ।আপনার ব্যপারে একটু জানা দরকার আমার।
--কেন!
--আ হা বলুন না। ফায়দা টা আপনারই হবে।আপনার প্রেমিকার উদ্ধার কাজে আপনাকে সহায়তা করবো।
--কিন্ত আপনি তা করছেন না। উল্টো আপনি আমার সময়ের অপচয় করছেন।
--ট্রাস্ট মি। কথায় বলে ধৈর্যের ফল মিঠা হয়। কথাটা নিশ্চয়ই বিশ্বাসযোগ্য?
আমি চুপ রইলাম। তিনি আবারও বললেন ..
--আমাদের পরিচয় পর্ব দিয়ে শুরু করা দরকার। আশাকরি আপনার যে সময়টুকু অপচয় হবে তা আপনি আবার ফেরত পাবেন।
--আপনার কথা বার্তা খুবই রহস্যজনক!
--নিশ্চয়ই কাজগুলো আরো বেশি।
--হুম বুঝেছি।আমি খালিদ।বয়স আন্দাজ করে নিন। বাকি সবকিছুই আন্দাজ করে নিলেই ভালো হয়।
--হাহাহা। ইয়াংম্যান, আপনি ভীষণ চালাক। আমাকে এখনো বিশ্বাস করেননি। আমি প্রফেসর ভিক্টর।
--ভিক্টর! আপনি কি বাঙ্গালী নন!
--আমি বাঙ্গালী তবে বসবাস বিদেশেই। জীবনের বেশিরভাগ সময়ই বিদেশের বিশ্ববিদ্যালয় আর ফিজিক্স ল্যাবগুলোতে কাটিয়েছি।আমার পূর্বপুরুষেরা কানাডার নাগরিক কিন্ত আমার জন্মস্থান বাংলাদেশ। এজন্য এই দেশেই ফিরে এলাম আবার।আর শেষ বয়সে এই নির্জন জায়গায় ঘাটি করেছি নিজের গোপন গবেষণা শুরু করার জন্য। যদিও এটাও সাকসেস প্রায়।
--কিরকম গবেষণা?
--সেটা বাদ দিন।এখন বলুন তো আপনার শরীর কেমন আছে?
--আমি সুস্থ আছি। আমার মাথায় শুধু লিজার চিন্তাই আসছে আর কিছু নয়।
--হ্যাঁ বুঝেছি। লিজাকে নিজের থেকেও বেশি ভালোবাসেন। আচ্ছা তাকে পেয়ে যাবেন।
--আপনি বিষয়টাকে এত সহজভাবে নিচ্ছেন কি করে!
--আপনিও সহজভাবেই নিতে চেষ্টা করুন। বিষয়টা যত জটিল আবার ততটাই মজার।
--আপনি আবারও রহস্যজনক কথা বার্তা বলছেন।
--আচ্ছা তাহলে কথা কম কাজ বেশি।
..লোকটা উঠে দাঁড়াতেই টলাটলি শুরু করে দিলেন।লোকটার উঠে বসার ভঙ্গি দেখেই মাথায় হাত দিয়ে বলে উঠলাম আমি ..
--ওহ মাই গড, আমি এতক্ষণ একটা মাতালের সাথে কথা বলে সময় নষ্ট করছিলাম। ওহ শিট!
আমার কথা শুনে লোকটা চড়াও হয়ে উত্তর দিলো..
--হেয় মিস্টার খালিদ! ডোন্ট আন্ডারেস্টিমেট মি! আই এ্যাম ড্রাঙ্ক বাট রাইট ইন দ্যা রিদম।
--জি আপনি জাতে মাতাল তালে ঠিক তা আপনার দোল দোল দুলুনি মার্কা বডিটা দেখেই বুঝতে পারছি।
আমার কথা শুনে লোকটা রাগি চোখে তাকালো আমার দিকে। নিজেকে সামলে নিয়ে বললাম ..
--ডোন্ট মাইন্ড প্রফেসর। মজা করছিলাম আরকি।
--মজা ছাড়ুন কাজের কথায় আসুন।
.
প্রফেসর ভিক্টর কথাটা শেষ না করতেই মেইন দরজায় কলিং বেলের আওয়াজ হলো। চমকে উঠলো আমার অন্তরআত্মা। আমি হাত ঘড়িটার দিকে তাকালাম। সময় এখন সারে এগারোটা।এত রাত হয়ে গেছে অথচ আমি টেরই পাইনি।অনেক সময় অপচয় হয়ে গেছে। আবারও কলিং বেলটা বেজে উঠলো। আমি আন্দাজ করতে লাগলাম কে হতে পারে। প্রফেসর বলে উঠলেন ..
--আমি গিয়ে দেখে আসি কে এলো।
আমি প্রফেসরকে আটকে দিলাম। হাত ধরে থামিয়ে দিয়ে বললাম ..
--আপনি বসে পড়ুন। যদি লিজা হয় তাহলে অনেকবার কলিং বেল চাপবে। ওর ব্যাপারে আমার জানা আছে। আর যদি শিহাব হয় তাহলে আর কলিং বেল বাজাবে না।
--আপনি কি করে জানলেন তাদের মধ্যেরই কেউ হবে।
--কমন সেন্স। এই নির্জন জায়গায় আপনি ছাড়া নিশ্চয়ই আশেপাশে আর কোনো লোকজন থাকেনা। তাই তাদেরই আসার সম্ভবনা বেশি।
খেয়াল করলাম দুজনেই। কলিংবেল আর বাজছে না।প্রফেসর ভিক্টর বললেন ..
--আপনার কথা রাইট। এটা নিশ্চয়ই আপনার শত্রু শিহাব। সে আর বেল বাজাচ্ছে না। আপনি কি করে বুঝলেন সে এমনটা করবে!
--কারণ ওর জায়গায় আমি হলেও একই কাজ করতাম।আমাদের দুজনের চিন্তাভাবনা গুলো একই।
--এখন আপনি কি করবেন? বা কি করার প্ল্যান করছেন?
--শিহাবকে খুন করবো।
--আপনি আবারও মজা করছেন তাইনা মিস্টার খালিদ!
--আমার চোখের দিকে তাকান। দেখে কি মনে হচ্ছে আমি মজা করছি? আই এ্যাম সিরিয়াস ম্যান! বাইরে শিহাব আমাকে খুন করার জন্য ওত পেতে আছে আর আমি কি হাতে চুড়ি পড়ে বসে থাকবো! ও যদি লিজাকে খুন করে থাকে তাহলে আমাকে নিশ্চয়ই বাঁচিয়ে রাখবে না। তাছাড়া এটাই তার অনেক বড় সুযোগ আমাকে খুন করার। পুরো বিষয়টা এই জায়গতেই ধামাচাপা দিতে পারবে। নির্জন জায়গায় কেউ কিচ্ছুটি টের পাবেনা।
--মোটকথা আপনি তাকে খুন করে দিতে চাইছেন?
--এক্সাক্টলি।
--তাহলে উঠে পড়ুন।
আমি উঠে পড়লাম বিছানা থেকে। আমার গালের একপাশে ব্যান্ডেজ করা।তখন থেকে কথা বলতেও অসুবিধা হচ্ছে একটু।প্রফেসর ভিক্টরকে জিজ্ঞেস করলাম ..
--প্রফেসর, আমি নাহয় আক্রমণের শিকার হয়েছিলাম কিন্ত আপনার নাকে ব্যান্ডেজ কেন? তখন থেকে বিষয়টা শুধু দেখছিলাম কিন্ত জিজ্ঞেস করারই সময় পাচ্ছিলাম না।
..প্রফেসর আমার কথা শুনে আমার মুখোমুখি দাঁড়ালো। চোখে চোখ রেখে প্রশ্ন করলো..
--তার আগে বলুন তো, আপনি কি এর আগেও আমার বাসায় এসেছিলেন!
--না।
--আমি যার থেকে আক্রমনের শিকার হয়েছি সে আপনার মতোই দেখতে ছিলো।
--কবে আক্রমণ করেছিলো!
--আজ রাতেই।
--স্ট্রেইঞ্জ! শিহাব এসেছিলো নাকি! আমি জানতাম শয়তানটা আমার আগেই এখানে এসেছে আমাকে খুন করার জন্য।
--আই ডোন্ট নো।তবে তার হাতেও আপনার হাতের ঘড়িটার মতোই সেইম কালারের কালো ঘড়ি ছিলো।
হো হো করে হেসে দিলাম আমি।বললাম ..
--প্রফেসর, নিশ্চয়ই আপনি চশমা ছাড়া "অ" কে "আ" দেখেন।
--অদ্ভুত হলেও এটাই সত্যি।আমি তার চেহারা স্পষ্ট দেখতে পাইনি কারণ সেসময় চোখে চশমা ছিলোনা। কিন্ত তার ঘড়ির রংটা কালোই ছিলো।
--জানতাম এমনই হবে।কিন্ত আক্রমণ কেন করলো?
--সে আমার প্রোপার্টি আমার অনুমতি ছাড়া ব্যবহার করতে চাইছিলো বলে আমি বাঁধা দিয়েছিলাম। আর তাই আক্রমণ করে বসে।
--ওহ আচ্ছা। খুবই খারাপ লোক।
প্রফেসর আবারও বলে উঠলেন ..
--আচ্ছা আপনি কি সকালে এখানে এসেছিলেন? সকালে যে এসেছিলো তার হাতেও একই রঙ্গের ঘড়ি ছিলো।
--অদ্ভুত তো! আপনি দেখছি সবখনেই আমাকে টানছেন।
--হাহাহা, রাগ করবেন না মিস্টার খালিদ একটু মজা করছিলাম আরকি।
আমি প্রফেসরের গোমড়া মুখটা অদ্ভুতভাবে হাস্যোজ্জ্বল হতে দেখে অবাক হয়ে চেয়ে রইলাম। তিনি আলনা থেকে একটা শার্ট নিয়ে আমাকে দিয়ে বললেন ..
--এটা পড়ে নিন। আপনার রক্তাক্ত শার্টটা আমি ওয়াশরুমে রেখে দিয়েছি।
আমি শার্টটা নিয়ে পড়তে লাগলাম। এতক্ষণ খালি গায়ে ছিলাম চিন্তায় সেটা মনেই ছিলোনা। পিঠের ব্যান্ডেজে হালকা ব্যথা পাচ্ছি। এদিকে গালের ব্যান্ডেজের কারণে কথা বলতেও কষ্ট পেতে হচ্ছে।
.
আমি শার্টটা পড়ে নিতেই প্রফেসর মুখোমুখি দাড়িয়ে বলে উঠলেন ..
--চলুন এবার আপনার অপচয় করা সময় গুলো ফেরত দেয়া যাক।
--প্রফেসর, আপনি আবারও মজা করছেন।
--আমার চোখের দিকে তাকান। দেখে কি মনে হচ্ছে আমি মজা করছি? আই এ্যাম সিরিয়াস ম্যান! চলুন আমার সাথে। এই রুম থেকে বের হোন।
প্রফেসর ভিক্টর চেহারায় একটা সিরিয়াস ভঙ্গি নিয়ে আমার কথা আমাকেই ফেরত দিলেন। তাই আমি আর কথা না বাড়িয়ে প্রফেসরের পেছনে পেছনে যেতে লাগলাম। বেড রুম থেকে বের হয়ে তিনি সোজা ডাইনিং রুমের দিকে গেলেন। যাওয়ার আগে বেডরুমের সুইচটা অফ করে দিলেন।ডাইনিং রুমের মাঝখানে গিয়ে দাড়াতেই দেখলাম সামনের দেয়ালে একটা লিফট। অবাক হয়ে বলে উঠলাম ..
--প্রফেসর, আমার জানামতে আপনার বাড়িটা একতলা ভবন। কিন্ত লিফট!
--আপনি বুঝতে ভুল করছেন মিস্টার খালিদ। এটা একটা জাদুর বাক্স। লাইক এ ম্যাজিক বক্স। এটাই আপনার অপচয় হওয়া সময়কে ফিরিয়ে দেবে। আপনাকে পৌঁছে দেবে সেই সময়ে যে সময়ে আপনি যেতে ইচ্ছুক। আপনি সময় নিয়ে খেলা করতে পারবেন। সময়ের সাথে পাল্লা দিতে পারবেন।
--হাহাহা। প্রফেসর আপনি একটু আগে রহস্যজনক কথা বলছিলেন কিন্ত এখন হাস্যকর কথাবার্তা বলছেন। আপনি কি সত্যিই আমার সাথে মাতলামি করছেন! প্লিজ এমন করবেন না। এটা আমার লাইফের ব্যপার। আপনি অনেক মজা করেছেন। আমি চলে যাচ্ছি। লিজাকে বাঁচাতেই হবে। শিহাব নিশ্চয়ই ওকে যন্ত্রণা দিচ্ছে ভীষণ।
আমি দরজার দিকে পা বাড়াতেই প্রফেসর ভিক্টর আমাকে আটকে দিয়ে বললেন ..
--ট্রাস্ট মি।শুধু একবারের জন্য।
--আপনি হাস্যকর কথা বলছেন। এটা আমাকে বিশ্বাস করতে হবে!
--একবার। জাস্ট একবার।
অগত্যা রাজি হলাম আমি। লোকটা যেহেতু প্রফেসর। আর কথাবার্তায় বিচক্ষণ মনে হচ্ছে তাই ইচ্ছা না থাকা সত্ত্বেও রাজি হলাম। অন্তত একবার উনাকে বিশ্বাস করে দেখি উনি আমার জন্য কি করে। এমনিতেই অনেক উপকার করেছে আমার। লিজাকে বাঁচানোর জন্যেও নিশ্চয়ই কিছু একটা করবেন।বললাম ..
--আচ্ছা তাহলে বলুন এই জাদুর বাক্স আমার কি কাজে আসবে!
প্রফেসর বলতে শুরু করলেন ..
--এটা কোনো লিফট নয়। এটা একটা টাইম মেশিন। কোয়ান্টাম থিওরি সম্পর্কে কোনো ধারণা আছে আপনার! আমার বহু বছরের গবেষণার পর এই জিনিস বানিয়েছি। এটা সময়কে পাড়ি দেয়। আপনার যে সময়ে যাওয়া প্রয়োজন সেই সময়ে এটা আপনাকে নিয়ে যাবে।
আমরা কথা বলতে বলতে লিফটের একদম কাছে চলে গেলাম। প্রফেসর আবারও ব্যাখ্যা করতে লাগলেন ..
--এটা খুব সহজে কাজ করে।ইউজ করা খুব সহজ। শুধু নিজের পছন্দের টাইম সেট করবেন আর টাইম ট্রাভেল শুরু করবেন। ইজি ব্যপার।
--কিন্ত এটা আমার কিভাবে কাজে আসবে?
--আপনি শিহাবকে ধরে ফেলতে পারেন এটা ব্যবহার করেই। তাকে খুনও করে আসতে পারেন।
.
কথাটা শুনেই আমি অবাক হয়ে গেলাম সেইসাথে বাকরুদ্ধ! চেয়ে রইলাম প্রফেসরের চোখের দিকে। চশমার ওপাশে তার চোখদুটো অনেক রহস্যের সহিত আমার দিকে তাকিয়ে আছে।ঠোঁটে তার নিষ্ঠুর হাসি।আমি অবিশ্বাসের চোখে তাকিয়ে থাকলাম কিছুক্ষন। ঠিক সেই মুহুর্তে প্রফেসর ভিক্টরের বেডরুমে গ্লাস ভাঙ্গার শব্দ হলো। চমকে উঠলাম দুজনে।প্রফেসর নিজেকে সামলে নিয়ে বললেন ..
--দুইদিন ধরে একটা বিড়াল খুব জ্বালিয়ে মারছে। নিশ্চয়ই বিল্লিটারই কাজ। আমি ওকে তাড়িয়ে আসছি।
কথাটা বলেই প্রফেসর বেডরুমের দিকে যেতে লাগলেন।আমিও তার পেছন পেছন যেতে লাগলাম। বিড়ালটা নিশ্চয়ই কাচেঁর কোনো দামি জিনিস ভেঙ্গে ফেলেছে। প্রফেসর ঘড়ের লাইটটা জ্বালিয়ে বলে উঠলেন ..
--একি মিস্টার খালিদ আপনি আসছেন কেন রুমে? আপনি লিফটে চলে যান আমি বিড়ালটাকে তাড়িয়েই আসছি।
..আমি বেডরুমে প্রবেশ করার আগেই প্রফেসরের মুখে এই কথাগুলো শুনে আবারও লিফটের দিকে যেতে লাগলাম। উনি আবারও বলতে লাগলেন ..
--আপনি লিফটের দিকে যান আমি আসছি এক্ষুনি।
আমি আর উনার কথায় কান দিলাম না। মাথায় শুধু একটা জিনিসই ঘুরছে। শিহাবকে খুন করতে হবে। আমার জীবনে চিরতরে শান্তি প্রতিষ্ঠার জন্য এটাই সুযোগ। শিহাব আমাকে খুন করতে এসে আজ ও নিজেই খুন হবে আমার হাতে। কথাগুলো ভাবতে ভাবতে এতটা রাগ উঠে গেলো আমার আমি লিফটের পাশে দেয়ালে একটা সুইচ দেখতে পেলাম।সুইচটা টিপ দিতেই লিফটের দরজা খুলে গেলো।আমি প্রফেসর ভিক্টরের জন্য অপেক্ষা না করে ঢুকে গেলাম। কেনন ভিক্টরের তো যাওয়ার প্রয়োজন নেই। খুন তো আমাকেই করতে হবে। কিন্ত এখনো বিষয়টা আমার কাছে ভাওতাবাজি বলে মনে হচ্ছে। লিফটে প্রবেশ করতেই সাথে সাথে চৌম্বকের মতো দরজাটা আপনাআপনি ঘপ করে বন্ধ হয়ে গেলো। আমি আটকে গেলাম একটা চারকোণা বিশিষ্ট বর্গাকার কক্ষে। সামনে বিশাল বড় একটা কাচেঁর মনিটর ভেসে উঠলো এবার। অবাক হতে লাগলাম আমি। লিফটের দরজা খুলার চেষ্টা করলাম কিন্ত দরজা খোলার মতো কোনো সুইচ পেলাম না। হঠাৎ সাউন্ড ভেসে এলো "সেট ইওর টাইম"। ফিমেল ভয়েসের সাউন্ড টা শুনতেই চোখ চলে গেলো মনিটরে।
.
একটা সচ্ছ কাচেঁর স্ক্রিন। সাথে ক্যালকুলেটরের ন্যায় একটা কীবোর্ড। কীবোর্ডে সময় সেট করলাম। তারিখ টা আজকেরই দিলাম। সময়ের জায়গায় আটটা সেট করলাম। স্ক্রিনে এরকম দেখাচ্ছিলো
"30-03-20** - 08:00:00pm"
.
টাইম সেট করার সাথে সাথে আবারও ফিমেল ভয়েসটা বলে উঠলো..
--Press the "Start" button and start the time travel."
কীবোর্ডের বাম সাইডে স্টার্ট বাটন খেয়াল করলাম। আর দেরি না করে ক্লিক করে দিলাম। সাথে সাথে লিফট কাঁপাকাঁপি শুরু হয়ে গেলো। মনে হচ্ছে ভূমিকম্প এসে গেলো। তখনই ফিমেল ভয়েসটা আবারও বলে উঠলো..
--Processing your time. Have a nice travel.
.
ফিমেল ভয়েসটা থেমে যেতেই লিফটের কাঁপাকাঁপিও থেমে গেলো। সাথে সাথে লিফটের দরজাও খুলে গেলো। বের হয়ে গেলাম আমি। বের হওয়ার সাথে সাথে লিফটের দরজা আপনাআপনি বন্ধ হয়ে গেলো। কিন্ত মনে হলো কেউ এইমাত্র দুপদাপ পায়ের আওয়াজ তুলে প্রফেসরের বেডরুমের দিকে দৌড় দিলো। নিশ্চয়ই প্রফেসর ভিক্টর। ফাজলামির একটা সীমা থাকা উচিৎ। মেজাজটা অত্যধিক খারাপ আছে। কারণ প্রফেসর ভিক্টরের সব মশকরা বুঝে গেছি আমি। আজকে ৩০ তারিখ তার মানে একটু পরেই রাত বারোটা বাজলেই ১ তারিখ। মানে ১লা এপ্রিল। আমাকে বড় ধরনের বোকা বানানোর পাঁয়তারা ছিলো তার। রাগে গজগজ করতে করতে বেডরুমের দিকে গেলাম। দরজা ভিড়ানো। দরজা খুলেই চিৎকার দিয়ে বললাম ..
--চেষ্টা ভালো ছিলো প্রফেসর। কিন্ত আমি বুঝে গেছি। আমার জীবন মরন সমস্যার মধ্যে এমন বোকা বানানোর মজা না করলেও পারতেন।
কথাটা শেষ করতেই ওয়াশরুমে শাওয়ার নেয়ার আওয়াজ পেলাম। পানির শব্দ আসছে। ওয়াশরুমের দিকে যেতে যেতে বললাম ..
--আপনার বিড়াল তাড়ানো শেষ হয়নি এখনো! লুকিয়ে না থেকে বেরিয়ে আসুন।
কথাটা শেষ না হতেই দরজায় দুপদাপ আওয়াজ পেলাম। ঘুরে দরজার দিকে তাকাতেই মনে হলো কেউ দৌড়ে বের হয়ে গেলো দরজা দিয়ে। দরজার পাশের টেবিলে চাকুটা দেখেই সেটা নিয়ে আমিও দৌড় দিলাম। নিশ্চয়ই আমি লিফটে থাকা অবস্থায় শিহাব ঘরে প্রবেশ করেছে। প্রফেসরকেও আক্রমণ করেছে নিশ্চয়ই। দুপদাপ আওয়াজ টা এলো মেইন দরজা থেকে। সোজা সেদিকেই গেলাম। দরজাটা খোলা পেয়ে বাড়ির বাইরে চলে গেলাম। অন্ধকারে তাকিয়ে বুঝার চেষ্টা করতে লাগলাম কোনদিকে গেলো শিহাব। বাড়ির ডানপাশে চলে গেলাম। আর সাথে সাথে দেখতে পেলাম রুমাল মুখে বাঁধা একজন দাড়িয়ে আছে। জানালার কাচঁ দিয়ে বাড়ির ভেতরের দিকে তাকিয়ে আছে সে। শিহাব নিশ্চয়ই আমাকে ফলো করার চেষ্টা করছে। জানালা থেকে আগত হাল্কা আলোয় শুধু তার রুমাল বাধা মুখটাই দেখা যাচ্ছে। পেছন দিক থেকে আমি ধীর পায়ে গিয়ে তাকে ঘপ করে জড়িয়ে ধরলাম। ছুড়িটা একদম পিঠে ঢুকিয়ে দিলাম। ব্যথায় কুকিয়ে উঠলো শিহাব। এবার হুঙ্কার করে বললাম আমি ..
--কি বলেছিলে তখন শিহাব? এখন কথাটা ফেরত নেবার সময় হয়েছে। এখন সময়টা আমার জন্যই গুড। ব্যাড ফর ইউ। বল লিজা কোথায়?
ব্যথায় কোকাতে কোকাতে শিহাব উত্তর দিলো..
--আমি শিহাব নই।
কথাটা শুনে চমকে উঠে ছেড়ে দিলাম তাকে।
--শিহাব নও। তাহলে নিশ্চয়ই শিহাবের চামচা!
--যা ইচ্ছা ভাবতে পারো। কিন্ত একথা সত্যি। এটা আমাদের জীবনের সবচেয়ে খারাপ সন্ধ্যা।
--ইয়েস আই নো দ্যাট। কিন্ত আমার জন্য নয় শুধু তোমার জন্য। আর সন্ধ্যাটাকে খারাপ করেছো তুমি নিজেই। বল কুত্তার বাচ্চা শিহাব কোথায়? আর কতজনের দল নিয়ে আমাকে মারতে এসেছিস? সব কটাকে মেরে ফেলবো আজ।
কথাটা শেষ না হতেই পাশের ঝোপ থেকে এক চিলতে টর্চের আলো এলো। সাথে সাথে ঘাড় ঘুরিয়ে সেদিকে তাকাতেই ঝোপের আড়াল থেকে পায়ের আওয়াজ আসতে লাগলো। আবারও কেউ দৌড়ে পালাচ্ছে। আহত ছেলেটার পিঠ থেকে ছুড়িটা বের করে বলে ফেললাম ..
--নিশ্চয়ই শিহাব। আমি আর তাকে ছাড়ছি না। পালিয়ে লাভ নেই। সবাইকে মারবো আজ।
ছেলেটা আহত অবস্থায় ঘুমিয়ে গেলো। আমি দৌড় দিলাম শিহাবের উদ্দেশ্যে। শিহাব নিশ্চয়ই একা আসেনি আজ। আমাকে যেতে হবে কালভার্টের দিকে। সোজা সেদিকেই দৌড়াতে লাগলাম। পাঁচ মিনিটের পথটা দৌড়ে গেলে তিন মিনিটের বেশি লাগেনা। কালভার্ট এর প্রান্তে দাঁড়াতেই দেখলাম দুজন কালভার্টের মাঝখানে দাড়িয়ে আছে। অন্ধকারের ভেতরে আবছা আলোতে শুধু বুঝা যাচ্ছে একজন ছেলে একজন মেয়ে খুব কাছাকাছি দাঁড়িয়ে আছে। ধীর পায়ে তাদের কাছাকাছি যেতে লাগলাম যেনো তারা আমার অবস্থান টের না পায়। এরা নিশ্চয়ই শিহাবের দলের। কাছে গিয়ে কয়েকগজ দূরে অবস্থান নিলেও তারা আমার উপস্থিতি টের পেলোনা। গভীর গল্পে মগ্ন তারা। কান পাতলাম তাদের কথাগুলো শুনার জন্য। তাদের কথপোকথন শুনেই পায়ের নিচটা কেঁপে উঠলো আমার।
--কি করছো খালিদ ..
কথাটা লিজার মুখ থেকে এলো। আর সাথে থাকা ছেলেটা উত্তর দিলো..
--কোনো কথা নয় ..
ভয়েসটা খুব পরিচিত। এটা যে আমার নিজেরই কন্ঠ। কিন্ত আমি দাড়িয়ে আছি খালিদের থেকে কয়েক কদম দূরে। আমার সামনে খালিদ আর লিজা ঠোঁটে ঠোঁট মিশিয়ে ভালোবাসা বিনিময়ে ব্যস্ত হয়ে গেলো। অদ্ভুতভাবে আমার চোখ দুটো সোজা আমার হাত ঘড়িটার দিকেই গেলো। একটু আগেই ৮ টা পার করেছে ঘড়িটার ঘন্টার কাটা। অথচ এখন গভীর রাত হওয়ার কথা ছিলো। বিড়বিড় করে মুখ থেকে বাক্যটা বের হয়ে গেলো
--Are you kidding me!!!!!!

ঘড়ি থেকে চোখটা সরিয়ে মিলাতে লাগলাম টাইম ট্রাভেলের ব্যপারটা। ঘড়িতে ৮ টা পার হয়েছে। আর আমি টাইম ট্রাভেল করে সেই সন্ধ্যার সময়েই ফিরে এসেছি যখন আমি লিজাকে কিস করছিলাম। আমার সামনে দাঁড়িয়ে আছে খালিদ আর লিজার অতীত সত্ত্বা। আর আমি এসেছি ভবিষ্যৎ থেকে। ব্যপারটা গোলমেলে হয়ে গেছে কিছুটা। কিন্ত খুব বেশি জটিল নয়। এক রাজ্যে দুই রাজার রাজত্ব চলেনা। এখন খুব সহজ একটা কাজ করতে হবে। আমার অতীত সত্ত্বাকে আক্রমণ করে খুন করে তার জায়গাটা আমাকে নিতে হবে। এছাড়া আর কোনো উপায় নেই এখন।
.
চোখটা আচমকা বুক পকেটে যেতেই বুঝতে পারলাম পকেটে একটা কালো রুমাল রাখা। প্রফেসর ভিক্টর রুমালটা রেখে ভালোই করেছেন। রুমালটা পকেট থেকে বের করে মুখে বেঁধে নিলাম যাতে লিজা আমার চেহারা দেখতে না পায়। ছুড়িটা হাতে নিয়ে আমার অতীত সত্ত্বার খালিদের পেছনে দাঁড়িয়ে গেলাম আমি। সে লিজাকে জড়িয়ে ধরে ভালোবাসার বিনিময়ে মশগুল হয়ে আছে। এটাই মোক্ষম সময়।
.
সজোরে ছুড়িটা বসিয়ে দিলাম তাঁর পিঠে। ব্যথায় কুকিয়ে উঠলো সে। লিজা ভয় পেয়ে দূরে সরে গেলো। চিৎকার করে উঠলো লিজা। আমি ছুড়িটা বের করে নিলাম। খালিদ ঘুরে তাকালো আমার দিকে। আমার রুমাল বাঁধা মুখটা দেখে সে চিনতে পারেনি আমাকে। রুমাল না থাকলে নিশ্চয়ই বুঝে যেতো তাঁর সামনে তাঁরই ভবিষ্যৎ সত্ত্বা দাড়িয়ে আছে আর তাকে আক্রমণ করছে। কলারটা চেপে ধরলাম খালিদের। লিজা চিৎকার করতে গিয়েও পারছে না। অতিরিক্ত ভয়ে তার গলা দিয়ে আওয়াজ বের হচ্ছেনা। আমি আমার অতীত খালিদের দিকে তাকিয়ে বলে উঠলাম ..
--তোমাকে মরতে হবে খালিদ। এই চমৎকার সন্ধ্যা তোমার জন্য নয়, এটা আমার জন্য। গুড ইভিনিং খালিদ।গুড ইভিনিং ফর মি।ব্যাড ইভিনিং ফর ইউ।
.
কথাটা বলেই তার বুকে ছুরি চালাতে যাবো এমন সময় লিজা আমাকে ধাক্কা দিয়ে সরিয়ে দিলো। আমি ধাক্কা খেয়ে খালিদকে আঘাত করতে ব্যর্থ হলাম। আমি জানি লিজা কেন এমন করছে। সে তো আমাকে এখনো দেখেনি মুখে রুমাল বাঁধা তাই। তা নাহলে চোখের সামনে দুজন খালিদকে দেখে সে নিজেই কনফিউজড হয়ে যেতো। আমি তাল সামলে নিয়ে লিজাকে ধাক্কা দিয়ে নিচে ফেলে দিলাম। আগে খালিদের ম্যাটারটা সলভ করি লিজাকে পরে বুঝিয়ে বলা যাবে।
.
আমি আমার অতীত খালিদের মুখেও ছুরি চালিয়ে দিলাম। দিকবিদিক জ্ঞ্যান হারিয়ে শুধু মাথায় একটা চিন্তাই কাজ করতে লাগলো। নিজের অতীত সত্ত্বাকে খুন করতে হবে আর তার জায়গাটা আমাকে নিতে হবে। লিজা শুধু আমার হবে আমার অতীত সত্ত্বার নয়। মুখের বিভিন্ন জায়গায় ছুরির আঘাতে রক্তাক্ত করে দিতে লাগলাম । এরপর তাকে দুই হাতে ধরে কালভার্ট এর রেলিং এর উপরে বসিয়ে দিলাম।আমার অতীত সত্ত্বা একদম শক্তিহীন হয়ে গেছে। নিশ্চয়ই একটু পরে মারা যাবে।
.
তাকে বসিয়ে দিয়ে হাঁটুতে ছুরির আঘাত করতে যাবো এমন সময় লিজা এসে আবারও ধরে ফেললো আমাকে। আমাকে লিজা পেছন থেকে জাপটে ধরায় আর আঘাত করতে পারলাম না। লিজার থেকে নিজেকে ছাড়িয়ে নিতে লাগলাম আমি। লিজার থেকে নিজেকে ছাড়িয়ে নিয়ে লিজাকে জাপটে ধরে বলতে লাগলাম..
--আমি খালিদ, লিজা আমাকে দেখো আমি তোমার খালিদ। ও নকল খালিদ, আমি আসল খালিদ। আমার মুখ থেকে রুমালটা সরালেই তুমি আমাকে চিনতে পারবে।
.
ঠিক সেই মুহুর্তে রেলিং থেকে নিচে পড়ে গেলো আমার অতীত সত্ত্বা।পানিতে পড়ার সাথে সাথে ঝুপ করে একটা শব্দ হলো। লিজা আরো চিৎকার দিতে লাগলো আমার কথা কিছুতেই শুনছে না সে। ঠিক সেই মুহূর্তে ঠাস করে একটা শব্দ হলো। মনে হলো বাজ পড়লো। লিজা আমার বুকে ঢলে পড়লো তখনই । লিজাকে জড়িয়ে ধরে পিঠে হাত দিতেই হাতের আঙ্গুলে অনুভব করলাম রক্ত। কেউ একজন লিজাকে শুট করেছে কালভার্ট এর প্রান্ত থেকে। লিজা আর নিঃশ্বাস নিচ্ছেনা। এ আমি কি দেখছি! আমার লিজা মরে গেছে। ভয়ে গায়ের সব লোম দাড়িয়ে গেছে আমার। চিৎকার করে বলে উঠলাম ..
--শিহাব, আমি তোমাকে ছাড়বো না। সব সমস্যার মূলে তুমি আছো। আমি তোমাকে খুন করবোই শিহাব।
.
মনে হলো শিহাব আমাকেও গুলি করবে কিন্ত গুলির শব্দ আর এলোনা। আমাকে খুঁজতে হবে শিহাবকে। ও নিশ্চয়ই আশেপাশে কোথাও আছে। লিজার মৃত দেহটার দিকে তাকাতেই বুকটা হাহাকার করে উঠলো আবার। শিহাব নিশ্চয়ই আমাদের মেরে ফেলার প্লান করেই এসেছে। ভাবনায় পড়ে গেলাম আমি। কি করবো এখন! শিহাবের প্লান এমনও হতে পারে, লিজাকে খুন করে সেই খুনের দায় আমার উপর চাপিয়ে দেবে। কারণ সবাই জানে লিজাকে নিয়ে আমিই পালিয়েছি আর দুজন একসাথেই পালিয়েছি। সুযোগটা ভালোই কাজে লাগিয়েছে শিহাব। তাই দৌড়ে শিহাবকে খুঁজতে গেলাম আমি কালভার্ট এর প্রান্তে। গিয়েই দেখলাম আমার বাইকটা এখনো সেখানে দাড় করিয়ে রাখা। চারদিকে তাকাতে লাগলাম শিহাবকে খুজেঁ পাওয়ার জন্য। কিন্ত আশেপাশে আর কাউকে পেলাম না। শিহাব কোথায় পালিয়ে যাবে!
.
মাথায় আরো একটা চিন্তা চলে এলো। শিহাবের এই পরিকল্পনা কিছুতেই সফল হতে দেয়া যাবেনা। যদি কেউ জেনে যায় লিজা মরে গেছে তাহলে খুনের দায়টা আমার উপরই আসবে। তাই শিহাবকে খুঁজা বাদ দিয়ে প্রমাণ লোপাট করতে ব্যস্ত হলাম আমি। বাইকটা নিয়ে খালপাড়ে নেমে গেলাম। খালের স্রোতে ভাসিয়ে দিলাম সেটা। আমার এমন কোনো চিহ্ন যেনো না থাকে এখানে। সবকিছু লোপাট করতে হবে যাতে এমন মনে হয় আমি আর লিজা এখানে কখনোই আসিনি।
.
বাইকটা স্রোতের জলে ভাসিয়ে দিয়ে আবারও কালভার্ট এর দিকে চলে গেলাম। সাথে করে নিয়ে আসা ব্যাগটাও ফেলে দিলাম খালের জলে। লিজার মৃত দেহটা পড়ে আছে নিথর হয়ে । সেটাকে ঘাড়ে তুলে নিলাম। হাঁটতে লাগলাম কালভার্ট এর প্রান্তের দিকে। কিন্ত কিছুদূর গিয়েই মনে হলো খালিদের মতো একেও স্রোতের জলে ভাসিয়ে দেয়াই ভালো হবে। কালভার্ট এর রেলিং এর উপর লিজাকে বসিয়ে ধাক্কা দিয়ে লিজার মৃত দেহটা নিচে ফেলে দিলাম। জলের ধারায় মৃত দেহ গুলো হারিয়ে গেলে আর কোনো প্রমাণ থাকলো না। এখন আমাকে পালাতে হবে। পালিয়ে গিয়েই বাঁচা সম্ভব। এমন কোথাও যেতে হবে যেখানে গেলে শিহাব বা অন্যকেউ জানবে না।
.
কথাগুলো ভাবতে ভাবতেই মাথায় চলে এলো নতুন ভাবনা। যদি টাইম ট্রাভেল করে আমি অতীতে আসতে পারি তাহলে নিশ্চয়ই আমি আবারও টাইম ট্রাভেল করে আবারও সেই সময়ে এসে লিজাকে বাঁচাতে পারি। ব্যপারটা ভাবতেই আবারও একটা আশা পেলাম বেচেঁ থাকার। আমার লিজাকে মরতে দেয়া যাবেনা। তাকে টাইম ট্রাভেল করে ফিরিয়ে আনা সম্ভব। আমি যদি দুইজন হয়ে যেতে পারি টাইম ট্রাভেল করে তাহলে লিজাও দুইজন হয়ে যাবে। লিজাকে আমার বাঁচাতেই হবে। যে ঘটনাগুলো ঘটে গেলো সেই ঘটনাগুলোর পরিবর্তন করতে হবে সেই সময়ে ফিরে গিয়েই।
.
কথাগুলো ভাবতে ভাবতেই আবারও বাড়িটার দিকে দৌড় দিলাম কালভার্ট অতিক্রম করে। শিহাবকে পড়ে খুজঁতে হবে আগে লিজাকে বাঁচাতে হবে। বাড়িটার ভেতরে যেতেই দেখলাম দরজা খোলাই আছে। কিন্ত ভেতরে যেতেই প্রফেসর ভিক্টরের সামনে পড়ে গেলাম। তিনি আমাকে দেখেই বলে উঠলেন ..
--হেয়, হু আর ইউ? তুমি তো দেখি বড় মাপের চোর! আমার ঘরের দরজা কিভাবে খুললে তুমি!
আমি প্রফেসর ভিক্টরের দিকে তাকিয়ে বুঝলাম লোকটা গোসল করে কেবলই বাথরুম থেকে বের হলো। হাত ঘড়িটার দিকে তাকালাম আমি। এখন সময় ৯ টার কাছাকাছি। কিন্ত প্রফেসর ভিক্টরের সাথে আমার সাক্ষাৎ হয়েছিলো অনেক পরে। তা প্রায় রাত ১১ টার দিকে অর্থাৎ ভবিষ্যতে। কারণ আমি এখন টাইম ট্রাভেল করে অতীতে আছি। তার মানে উনি এখন আমাকে চিনেন না। উনি আমাকে চিনবেন আরো পরে। তাই মুখ থেকে রুমালটা না খুলেই বলে উঠলাম।
--আমি আপনার টাইম মেশিনটা ব্যবহার করতে চাচ্ছি।
আমার কথা শুনেই প্রফেসর ভিক্টর বলে উঠলেন ..
--হাউ ডেয়ার ইউ! একেতো চোরের মতো তালা ভেঙ্গে ঘরে ঢুকেছো আর এখন আমার সবচেয়ে মূল্যবান জিনিস ব্যবহার করতে চাইছো। ওয়েট ওয়েট ! হোয়াট! তুমি আমার টাইম মেশিনের ব্যপারে কি করে জানলে!
.
প্রফেসরের কথায় বুঝে গেলাম লোকটার সাথে কথা বলে সময় নষ্ট করা ঠিক হবেনা। বলে উঠলাম ..
--আমার লাইফটা হেল করে দিয়ে এখন আমাকেই চোর বলা হচ্ছে!
--হোয়াট ডু ইউ মিন! কে তুমি!
আমি আর কথা বাড়ালাম না। সোজা তার নাকে ঘুষি মেরে দিলাম। ঘুষি খেয়ে উনি নাক চেপে ধরে রইলেন। উনাকে জড়িয়ে ধরে বেডরুমের দিকে গিয়ে ফেলে দিয়ে বের হলাম। ঠিক সেই মুহুর্তে কানে শব্দ পেলাম কেউ একজন দৌড়ে ঘরে প্রবেশ করেছে। ঘর থেকে বের হতেই দেখলাম লিফটের দরজাটা ঘপ করে বন্ধ হয়ে গেলো। নিশ্চয়ই কেউ আমার আগেই ঢুকে গেছে।
.
আমিও লিফটের দিকে দৌড়ে গেলাম। সুইচ চাপতেই লিফটের দরজা খুলে যেতেই দেখলাম কেউ নেই সেখানে। তাহলে কি ভুল দেখলাম আমি! আমি আর এ ব্যপারে না ভেবে লিফটে ঢুকে গেলাম। দরজাটা খপ করে বন্ধ হতেই লেডি ভয়েসটা টাইম সেট করতে বললো। এতকিছু ভাব্বার সময় নেই। আগের টাইমটা সেট করে দিলাম।
অর্থাৎ আবারও সেই রাত ৮ টার সময়। লিজাকে বাঁচাতে হবে সেই সময়ে গিয়েই। লিফট কাঁপাকাঁপি করে দরজা খুলে যেতেই বেড়িয়ে গেলাম বাইরে। ঠিক সেই মুহুর্তে মনে হলো আমি এর আগেও টাইম ট্রাভেল করে একই সময়ে এসেছি। তার মানে আবারও আমার অতীত সত্ত্বাও এই সময়েই লিফট থেকে বের হবে। আমি বের হতেই লিফটের দরজা বন্ধ হয়ে গিয়ে সেটা আবারও খপ করে খুলে গেলো। আমি যদি সেকেন্ড টাইম ট্রাভেল করে থাকি তাহলে ফার্স্ট ট্রাভেলার এখন চলে আসবে। একই সময় সেট করাটা বড্ড ভুল হয়ে গেলো।
.
লিফটের দরজা আবার খুলে যেতেই আমি লুকানোর জন্য প্রফেসরের বেডরুমের দিকে দৌড় দিলাম। প্রফেসর এই টাইমে বাথরুমে শাওয়ার নিচ্ছেন। হাত ঘড়িতে সময় দেখলাম ৮ টা বাজে। এখন তাই তাই হবে যা যা পূর্বে ঘটেছিলো। আমি এখন তৃতীয় খালিদ। প্রথম খালিদ রয়েছে কালভার্টে লিজার সাথে। আর সেকেন্ড খালিদ নিশ্চয়ই লিফট থেকে বেরিয়ে আমার পায়ের শব্দ শুনেছে। আমি দরজাটা ভিড়িয়ে দিয়ে দরজার আড়ালে লুকিয়ে গেলাম। সেকেন্ড খালিদ সোজা বেড রুমে চলে এলো। দরজাটা খুলেই বলে উঠলো ..
--চেষ্টা ভালো ছিলো প্রফেসর। কিন্ত আমি বুঝে গেছি। আমার জীবন মরন সমস্যার মধ্যে এমন বোকা বানানোর মজা না করলেও পারতেন।
কথাটা বলেই সে ওয়াশরুমের দিকে যেতে যেতে যেতে বললো ..
--আপনার বিড়াল তাড়ানো শেষ হয়নি এখনো! লুকিয়ে না থেকে বেরিয়ে আসুন।
.
আমি দরজার পাশের টেবিলে টর্চ ছুরি আরো কিছু জিনিস দেখলাম। কয়েকটা পকেটে নিয়ে দৌড় দিলাম মেইন দরজার দিকে। আমার এখন বাড়ির বাইরে যেতে হবে। দুপদাপ আওয়াজ করে দৌড়াতে গিয়েই মনে হলো সেকেন্ড খালিদ আমার উপস্থিতি টের পেয়েছে। তাই বাড়ির ডানপাশের ঝোপের আড়ালে লুকিয়ে পড়লাম।
.
সেকেন্ড খালিদ বাড়ির ডানপাশে আমার দিকেই আসছে কিন্ত আমি ঝোপের আড়ালে থাকায় আমার অবস্থান টের পেলোনা সে। যেতে লাগলো বাড়ির জানালার দিকে। আমিও ঝোপ থেকে মাথা তুলে দেখলাম সেখানে রুমালে মুখ বাঁধা একজন দাড়িয়ে আছে। জানালার কাচঁ দিয়ে বাড়ির ভেতরের দিকে তাকিয়ে আছে সে। এটাই শিহাবের চামচা টা। এবার নিশ্চয়ই সেকেন্ড খালিদ তাকে খুন করবে। ঠিক তাই হলো যা একটু আগে আমি করেছিলাম । সেকেন্ড খালিদ পেছন থেকে তাঁর পিঠে ছুরিটা ঢুকিয়ে দিলো। এবার হুঙ্কার করে বলতে লাগলো ..
--কি বলেছিলে তখন শিহাব? এখন কথাটা ফেরত নেবার সময় হয়েছে। এখন সময়টা আমার জন্যই গুড। ব্যাড ফর ইউ। বল লিজা কোথায়?
ব্যথায় কোকাতে কোকাতে শিহাবের চামচাটা উত্তর দিলো..
--আমি শিহাব নই।
কথাটা শুনে চমকে উঠে সেকেন্ড খালিদ ছেড়ে দিলো তাকে।
--শিহাব নও। তাহলে নিশ্চয়ই শিহাবের চামচা!
--যা ইচ্ছা ভাবতে পারো। কিন্ত একথা সত্যি। এটা আমাদের জীবনের সবচেয়ে খারাপ সন্ধ্যা।
--ইয়েস আই নো দ্যাট। কিন্ত আমার জন্য নয় শুধু তোমার জন্য। আর সন্ধ্যাটাকে খারাপ করেছো তুমি নিজেই। বল কুত্তার বাচ্চা শিহাব কোথায়? আর কতজনের দল নিয়ে আমাকে মারতে এসেছিস? সব কটাকে মেরে ফেলবো আজ।
আমি তাদের কথোপকথন শুনতে শুনতে পকেটে হাত দিয়ে টর্চ লাইট টা খুজেঁ পেলাম। টর্চ বের করতেই সুইচে চাপ লেগে জ্বলে উঠলো সেটা। আচমকা টর্চের আলো তাদের দিকে ফোকাস হতেই সেকেন্ড খালিদ টের পেয়ে গেলো আমার অবস্থান। শিউরে উঠলাম আমি। তাহলে তখন আমি যাকে শিহাব ভেবেছিলাম যে টর্চের আলো ফেলেছিলো সেটা আমি নিজেই ছিলাম। অর্থাৎ আমার ভবিষ্যৎ সত্ত্বা যেটা এখন আমি বর্তমানে। কি হচ্ছে এসব!
.
আমার পালাতে হবে এখন। নাহলে সেকেন্ড খালিদ আমাকে দেখে ফেলবে। রাগের মাথায় আমাকেই আক্রমণ করে দিতে পারে শিহাব ভেবে। তাই টর্চটা সাথে সাথে পকেটে ঢুকিয়ে নিয়ে দুপদাপ পায়ের আওয়াজে ঝোপে খস খস আওয়াজ তুলে নিজের অবস্থান বদলাতে লাগলাম। বুঝে গেলাম আগেই। এইবার সেকেন্ড খালিদ কালভার্ট এর দিকে দৌড়াবে লিজার উদ্দেশ্যে। দৌড়ানোর সময় পেছন থেকে সেকেন্ড খালিদের হিংস্র রাগান্বিত কন্ঠ ভেসে এলো ..
--নিশ্চয়ই শিহাব। আমি আর তাকে ছাড়ছি না। পালিয়ে লাভ নেই। সবাইকে মারবো আজ।
.
সেকেন্ড খালিদ যেহেতু কালভার্ট এর দিকে দৌড়াবে রাস্তা দিয়ে সেহেতু আমাকে রাস্তা দিয়ে যাওয়া যাবেনা। মনে পড়ে গেলো তখনই। খালপাড়ে একটা কলাগাছের ভেলা রয়েছে যেটা আমি জ্ঞান ফিরার পর দেখেছিলাম।
.
আমি খালপাড়ে গিয়ে সত্যিই ভেলাটা পেয়ে গেলাম। খালপাড়ে নেমে যেতেই খেয়াল করলাম দুপদাপ আওয়াজ তুলে সেকেন্ড খালিদ কালভার্ট অনুসরণ করে দৌড়াচ্ছে।
.
আমিও ভেলাটা ভাসিয়ে দিলাম খালের জলে। খরস্রোতা খালটা খুব বেশি প্রশস্ত নয়। পাড় হতে বেশি সময় লাগবে না। বাঁশের লাঠিটা ব্যবহার করে ওইপাড়ের দিকে যেতে লাগলাম। দূরে তাকাতেই দেখলাম কালভার্ট টা আমার খুব কাছাকাছি। আসলে তা খুব বেশি দূরে নয়। যতটা দূরে ভেবেছিলাম। যখন আমি খালের ঠিক মাঝখানে তখনই খেয়াল করলাম ভেলা টা কোথাও আটকে গেছে। পকেট থেকে টর্চটা বের করে জ্বালাতে যাবো এমন সময় স্রোতের ধাক্কা লাগলো ভেলাতে। তাল সামলাতে না পেরে টর্চটা সাথে সাথে হাত থেকে খালের পানিতে পড়ে গেলো টুপ করে ..
তখনই শুনতে পেলাম কালভার্ট থেকে দুজন ছেলেমেয়ের কথোপকথন ভেসে আসছে ..
--কি হলো! ভয় পেলে নাকি!
কথাটা বললো আমার প্রথম সত্ত্বা অর্থাৎ ফার্স্ট খালিদ। লিজাও উত্তর দিলো তখনই ..
--খালিদ,মনে হলো খালের মাঝখানে এইমাত্র আমি একটা আলো জ্বলতে দেখলাম। যেটা জ্বলে উঠার সাথে সাথেই নিভে গেলো।
লিজার কথাটা শুনে শিউরে উঠলাম আমি।
তখন লিজার কথাটা গুরুত্ব দেইনি আমি কিন্ত গুরুত্ব দিলে জানতে পারতাম আমারই ভবিষ্যৎ সত্ত্বা খালের মাঝখানে টর্চ জ্বালিয়েছিলো তখন।
তারা অন্ধকারে আমাকে স্পষ্ট দেখতে পায়নি। ফার্স্ট খালিদ বলে উঠলো..
--এখনো ভয়ে উল্টাপাল্টা দেখছো! তুমি চোখ বন্ধ করোতো। আমার বিশ্বাস তুমি চোখ বন্ধ করলেও অনেক কিছু দেখবে। আসলে তুমি কিছুই দেখছো না নিজের চোখে, তোমার মস্তিষ্ক এইসব উল্টাপাল্টা জিনিস দেখাচ্ছে।
--না খালিদ, বিশ্বাস করো আমার মনে হচ্ছে আমি ঠিক দেখেছি ..
.
তাদের কথোপকথন শুনতে শুনতে খেয়াল করলাম তারা একে অপরের কাছাকাছি এসে গেছে। আমি শুধু অন্ধকারে তাদের আবছায়া দেখতে পাচ্ছি। দুটো আবছায়া মূর্তি একদম কাছাকাছি এসে ভালোবাসার বিনিময় করার জন্য প্রস্তুত এখন। তখনই আবারও লিজার কন্ঠস্বর ভেসে এলো ..
--কি করছো খালিদ ..
ফার্স্ট খালিদ উত্তর দিলো ..
--কোনো কথা নয় ..
শুরু হয়ে গেলো তাদের আলিঙ্গন। আমি ভেলাটা দ্রুত নিয়ে যেতে লাগলাম পাড়ের দিকে। কিন্ত পাড়ে যাওয়ার আগেই খেয়াল করলাম সেখানে তিনটা আবছায়া। সেকেন্ড খালিদ তাদের কাছাকাছি অবস্থান নিয়েছে। সে তাদের দেখে অবাক হয়ে নিজের ঘড়িটার দিকে তাকালো এবার। তারপরেই পকেট থেকে রুমালটা বের করতে লাগলো। মুখে বাঁধতে লাগলো রুমালটা। আচমকা আমার চোখদুটোও ঘড়ির দিকে গেলো। এটাই সেই সময়! এখনই সেকেন্ড খালিদ ফার্স্ট খালিদকে ছুরি দিয়ে আঘাত করবে। থার্ড খালিদ হিসেবে আমার উচিৎ হবে তাদের আশা ছেড়ে দিয়ে লিজাকে উদ্ধার করা। এই ঘটনাগুলো বদলে দিতে হবে। এটা আমাকে করতেই হবে। দ্রুত ভেলা পারে উঠিয়ে নিলাম আমি। রাস্তায় উঠে দেখতে পেলাম নিজের বাইকটা দাড় করানো। এরপর কালভার্ট এর দিকে যেতে লাগলাম আমি। গিয়েই দেখতে পেলাম সেকেন্ড খালিদ আর ফার্স্ট খালিদের মধ্যে লড়াই চলছে। লিজা সেকেন্ড খালিদকে আটকানোর চেষ্টা করছে। ফার্স্ট খালিদ একদম মৃত প্রায় অবস্থা। পকেটে হাত দিতেই মোক্ষম অস্ত্রটা পেয়ে গেলাম আমি। টেবিলের উপরে টর্চের সাথে রিভলভার টাও পেয়েছিলাম। বের করে নিলাম সেটা। শিহাবকে খুন করবো বলে জিনিসটা সাথে নিয়েছিলাম। এখন এটা অনেক কাজে লাগবে।
.
লক্ষ্য করলাম কালভার্ট এর মাঝখানে। সেকেন্ড খালিদ ফার্স্ট খালিদকে রেলিং এ বসিয়ে দিয়েছে। ছুরি চালাতে গেলেই লিজা মুখে রুমাল বাঁধা সেকেন্ড খালিদকে জাপটে ধরেছে পেছন থেকে। সেকেন্ড খালিদ দ্রুত নিজেকে ছাড়িয়ে নিলো। লিজাকে জাপটে ধরে বলতে লাগলো..
--আমি খালিদ, লিজা আমাকে দেখো আমি তোমার খালিদ। ও নকল খালিদ আমি আসল খালিদ। আমার মুখ থেকে রুমালটা সরালেই তুমি আমাকে চিনতে পারবে।
.
কথাটা শেষ না হতেই ফার্স্ট খালিদ রেলিং থেকে নিচে পড়ে গেলো ..
এটাই সময় শুভ কাজের। এবার সেকেন্ড খালিদকেও মেরে ফেলা যাক। তাহলে লিজা আমার। গুলিটা সেকেন্ড খালিদের উদ্দেশ্যে চালাতেই তাদের নড়াচড়ার কারণে লিজা গুলির সামনে এসে গেলো। পিঠ ফুরে বুলেট লিজার শরীরের অভ্যন্তরে ঢুকে গেছে। সেকেন্ড খালিদ লিজাকে জাপটে ধরলো তখনই।
.
আর আমি বুঝে গেলাম গুলিটা তখন শিহাব করেনি লিজাকে। গুলিটা থার্ড খালিদ অর্থাৎ আমি নিজেই করেছিলাম। কি হচ্ছে এখানে! সময়টা কেন এত বিষাক্ত লাগছে এখন! আমি উত্তর জানিনা। কিন্ত সময়ের এই বেড়াজাল থেকে কিভাবে রেহাই পাবো আমি! কিভাবে মুক্তি মিলবে আমার!
.
ভাবতে ভাবতেই দেখলাম সেকেন্ড খালিদ আমার দিকেই তেড়ে আসছে।
চিৎকার করে বললো সে ..
--শিহাব, আমি তোমাকে ছাড়বো না। সব সমস্যার মূলে তুমি আছো। আমি তোমাকে খুন করবোই শিহাব।
আমি সেকেন্ড খালিদকে শুট করতে গিয়েই দেখলাম বুলেট একটাই ছিলো আর কাজ করছে না রিভলভার। পালাতে হবে আমাকে যত দ্রুত সম্ভব । সেকেন্ড খালিদের হাতে ধরা পড়া যাবেনা কিছুতেই। কারণ সে আমাকেই শিহাব ভাবছে।

ঝোপের আড়ালে লুকিয়ে পড়লাম আমি। সেকেন্ড খালিদ এসে আমাকে খুঁজতে শুরু করলো। অন্ধকারে কোথাও খুজেঁ পেলোনা আমাকে। চারদিকে তাকিয়ে দেখলো কয়েকবার। আমি বুঝে গেলাম তাঁর মাথায় এখন কি ঘুরছে। সে এখন প্রমাণ লোপাট করবে। একটু আগে আমি যা যা করেছি এখন সেও তাই তাই করবে। তাই এখানে সময় নষ্ট করে তাঁর কর্মকান্ড দেখার মতো সময় আমার নেই। ভাবতে লাগলাম আমি কি করা যায় এখন।
.
ঠিক সেই মুহুর্তে মনে হলো ব্যপারটা। যদি টাইম ট্রাভেল করেই সমস্যার সৃষ্টি হয়ে থাকে তাহলে টাইম ট্রাভেলের মাধ্যমেই এই সমস্যার সমাধান করা যাবে। তাই আমাকে যেতে হবে স্টার্ট পয়েন্টে। অর্থাৎ যেখান থেকে এই সমস্যার শুরু সেখানে গিয়েই এর সমাধান করতে হবে। শুরুর দিকের ঘটনাগুলো পরিবর্তন করতে পারলেই ব্যপারটা পুরোটা পাল্টে দেয়া সম্ভব।
.
তখনই খেয়াল করলাম সেকেন্ড খালিদ বাইকটা খালের পানিতে ফেলে দিলো। এরপর আবারও কালভার্টের মাঝখানে যেতে লাগলো। ব্যাগ আর লিজাকে পানিতে ফেলে দিবে এবার। আমি আর দেরি না করে ভেলায় উঠে গেলাম। অন্ধকারে ভেলাটা ওইপাড়ের দিকে নিয়ে যেতে লাগলাম। আবারও টাইম মেশিনে ফিরে যেতে হবে আমাকে। একদম শুরুর সময়ে যেতে হবে।
.
পাড়ে পৌঁছে যেতেই দেখলাম ফার্স্ট খালিদের অর্ধমৃত দেহটা আমার ভেলায় আটকে গেছে। নিশ্চয়ই একটু পরে উঠে যাবে সে। কিন্ত এইসব ঘটনা নিয়ে ভাবা যাবেনা আর। ঠিক সেই মুহুর্তে দেখলাম সেকেন্ড খালিদ বাড়িটার দিকে ছুটছে। দেরি করা ঠিক হবেনা। ও নিশ্চয়ই এইবার থার্ড খালিদ অর্থাৎ আমার অবস্থানে চলে আসবে টাইম ট্রাভেল করে। তার আগেই আমাকে যেতে হবে। ফার্স্ট খালিদের অর্ধমৃত দেহটা নিয়ে আর মাথা না ঘামিয়ে সেটাকে ফেলে রেখে বাড়িটার দিকে সেকেন্ড খালিদের পেছনে পেছনে ছুটলাম আমিও।
.
সেকেন্ড খালিদ বাড়িটার ভেতরে ঢুকতেই আমিও ঢুকে গেলাম। কিন্ত প্রফেসর ভিক্টরকে খেয়াল করেই লুকিয়ে পড়লাম মেইন দরজার আড়ালে। সেকেন্ড খালিদ প্রফেসর ভিক্টরের মুখোমুখি দাঁড়িয়ে গেলো। প্রফেসর ভিক্টর সেকেন্ড খালিদের রুমাল বাঁধা চেহারা লক্ষ্য করে বলে উঠলেন ..
--হেয়, হু আর ইউ? তুমি তো দেখি বড় মাপের চোর! আমার ঘরের দরজা কিভাবে খুললে তুমি!
খেয়াল করলাম প্রফেসর গোসল করে সবেমাত্র বাথরুম থেকে বের হয়েছেন। আবারও একই দৃশ্য দেখতে হচ্ছে আমাকে। আর কি কি ঘটতে চলেছে সব বুঝে গেলাম।
.
সেকেন্ড খালিদ বলে উঠলো..
--আমি আপনার টাইম মেশিনটা ব্যবহার করতে চাচ্ছি।
তাঁর কথা শুনেই প্রফেসর ভিক্টর বলে উঠলেন ..
--হাউ ডেয়ার ইউ! একেতো চোরের মতো তালা ভেঙ্গে ঘরে ঢুকেছো আর এখন আমার সবচেয়ে মূল্যবান জিনিস ব্যবহার করতে চাইছো। ওয়েট ওয়েট ! হোয়াট! তুমি আমার টাইম মেশিনের ব্যপারে কি করে জানলে!
.
সেকেন্ড খালিদ রাগি কন্ঠে বলে উঠলো এবার ..
--আমার লাইফটা হেল করে দিয়ে এখন আমাকেই চোর বলা হচ্ছে!
প্রফেসর অবাক হয়ে বললেন ..
--হোয়াট ডু ইউ মিন! কে তুমি!
.
বুঝে গেলাম আমি এবার কি ঘটতে চলেছে। সেকেন্ড খালিদ সজোরে প্রফেসর ভিক্টরের নাকে ঘুষি মেরে তাকে বেডরুমের দিকে নিয়ে যেতে লাগলো। এটাই আমার সুযোগ। মেইন দরজাটা লাগিয়ে দিলাম ভেতর থেকে যাতে আর কোনো অতীত বা ভবিষ্যতের খালিদ ভেতরে আসতে না পারে। সেকেন্ড খালিদ বেডরুম থেকে বের হওয়ার আগেই ছুটতে লাগলাম টাইম মেশিনের দিকে। সুইচ টিপে দরজাটা খুলেই ভেতরে ঢুকে গেলাম। ঘাড় ঘুরিয়ে দরজা দিয়ে তাকাতেই দেখলাম সেকেন্ড খালিদ লিফটের দিকে তেড়ে আসছে। খপ করে দরজাটা বন্ধ হয়ে যাওয়ার আগে মনে হলো সে আমাকে দেখে ফেলেছে। কিন্ত মুখ তো আমারও রুমাল দিয়ে বাঁধা।
.
লেডি ভয়েসটা টাইম সেট করতে বলতেই আমি আজকের বিকাল ৫ টা সেট করে দিলাম সময়টা। "start" বাটনে ক্লিক করতেই লিফটা কাঁপাকাঁপি করে থেমে গেলো। লিফটের দরজা খুলে যেতেই বুঝলাম এখন সময়টা বিকাল। বের হলাম সেখান থেকে। বেডরুমের দিকে যেতেই দেখলাম প্রফেসর ভিক্টর সেটা ভেতর থেকে বন্ধ করে রেখেছে। কান পাতলাম বেড রুমের দরজায়। ভেতরে নাক ডাকার আওয়াজ আসছে। মনে হলো লোকটা ঘুমাচ্ছে এই সময়ে।
.
ঘড়িতে আরো একবার সময়টা দেখে নিলাম। ঘন্টার কাঁটা ৫ টা থেকে সরে যাচ্ছে। দ্রুত বাড়ি থেকে বের হলাম মেইন দরজা খুলে। দৌড়াতে লাগলাম কালভার্ট এর দিকে । খালিদ এবং লিজা নিশ্চয়ই এসে যাবে এখন। কালভার্ট অতিক্রম করে একটা বড় গাছের আড়ালে লুকিয়ে পড়লাম আমি। ঠিক তখনই খালিদ তার বাইকটা থামিয়ে দিলো। পেছনে বসে আছে লিজা।
.
শুরু হয়ে গেলো তাদের কথোপকথন..
--কি হলো! থামালে কেন? নাকি পেট্রোল শেষ? এজন্যই লোকে বলে যেখানে বাঘের ভয় সেখানেই সন্ধ্যা হয়!
ফার্স্ট খালিদ রাগত স্বরে জবাব দিলো..
--তোমার কি মনে হয়না তুমি একটু বেশি বেশি ভয় পাচ্ছো! আর পেট্রোল ভরপুর আছে। তুমি খামোখা ভয় করোনাতো।
--ভয় পাবোনা তো কি? আমি কখনোই আমার পরিবারের সাথে এমন দুঃসাহস দেখাইনি।
--তো আমি দেখিয়েছিলাম বুঝি?
--মাঝপথে থামলে কেন তাহলে? নাকি ডিসিশন বদলাবে?
--না।তার দরকার নেই। জায়গাটার দিকে তাকিয়ে দেখেছো একবার?
.
আমার মনে হলো তখন আমাদের ডিসিশন টা বদলে নেয়াই ভালো ছিলো। সময়ের এই প্যাঁচের ভেতরে আবদ্ধ হওয়া লাগতো না তাহলে। গাছের আড়ালে লুকিয়ে আমি তাঁদের অনুসরণ করতে লাগলাম। কি করে তাদের থামানো যায়। তাদের এখানে থাকাটা উচিৎ হবেনা। একটু পরেই অন্ধকার ঘনিয়ে এলে খারাপ কিছু ঘটতে চলেছে। সে সম্পর্কে তারা অবগত নয়। তাদের এখানে থাকাটা মোটেই উচিৎ নয়। ঘড়ির দিকে তাকাচ্ছি আর ভাবছি এখন কি করবো আমি। কি করে থামাবো টাইম ট্রাভেলের ঘটনাগুলোকে। আবারও সেটাই ঘটতে চলেছে যা পূর্বে ঘটেছিলো। যে করেই হোক ঘটনাগুলো পরিবর্তন করতে হবে।
.
ভাবতে ভাবতে অনেক সময় পেরিয়ে গেলো। সময়টা এখন খুব গুরুত্বপূর্ণ মনে হচ্ছে। প্রতিটা সেকেন্ড অনেক মূল্যবান। কিন্ত কিভাবে অতীত বা ভবিষ্যতের ঘটনাগুলো পরিবর্তন করে দেয়া যায় সে সম্পর্কে আমি অবগত নই। আদৌ কি অতীত বা ভবিষ্যতের ঘটনা পরিবর্তন করা সম্ভব! আমি জানিনা, তবে এটুকু নিশ্চিত যা ঘটবার তা ঘটবেই। কিন্ত আমার দায়িত্ব হচ্ছে লিজাকে বাঁচানো। লিজাকে আমার জন্য কিছুতেই খুন হতে দেয়া যায়না। আমার ভুলের কারণেই লিজা খুন হয়েছে। আর তাঁকে যেভাবেই হোক আমার বাঁচানো উচিৎ।
কথাগুলো ভাবতে ভবতেই চোখ চলে গেলো কালভার্টের মাঝখানে। লিজা এবং খালিদ সেখানেই দাঁড়িয়ে আছে। আচমকা খালিদ লিজার হাত থেকে ফোনটা কেড়ে নিয়ে খালের পানিতে ছুড়ে ফেললো। শুনতে পেলাম তাদের কথোপকথন..
--একি আমার নতুন ফোন টা ..
--বেচেঁ থাকলে আবার নতুন ফোন কেনা যাবে। পাগলী মেয়ে ফোন অন করে রেখেছিলে কেন! যদি আমাদের নাম্বার ট্র্যাক করে তাহলে ধরা পড়তে বেশি সময় লাগবে না। আর শিহাব নিশ্চয়ই জেনে গেছে আমাদের পালানোর ব্যপারে। শয়তানটা নিশ্চয়ই জেনে গেছে। আল্লাহ আল্লাহ করো যেনো আমাদের ট্র্যাক না করে।
খালিদের কথা শেষ হতেই লিজা বলে উঠলো..
--তুমি জানো, শিহাব আমার বাড়িতে বিয়ের প্রস্তাব পাঠিয়েছে। দুইবার প্রোপোজ ও করেছে আমাকে। ও আসলে কি চায়?
--ও তোমাকে ভালোবাসেনা লিজা।ও এসব করছে আমার সাথে শত্রুতা করে। কলেজ লাইফ থেকেই আমাদের শত্রুতা চলছে। আমার সব কিছুতে ও ঠ্যাং ঢুকিয়ে দিতে চায়।
--এমনও তো হতে পারে ও আমাদের ফলো করছে।
--আরে না। এত ভয় পাচ্ছো কেন? ওসব করবে না ও। আমরা যে পালিয়ে যাবো এটাতো আমরা নিজেরাই জানতাম না। শিহাব কি করে জানবে!
.
তাদের কথাগুলো শুনছিলাম কালভার্ট এর প্রান্ত থেকে একটা গাছের আড়াল থেকে। আচমকা খেয়াল করলাম লিজা আমার দিকে তাকিয়ে আছে। টের পেয়েই নিজেকে লুকিয়ে ফেললাম। সর্বনাশ হয়ে যাবে তাঁরা আমাকে দেখে ফেললে। দ্রুত স্থান পরিবর্তন করে খালের পাশের ঝোপের আড়ালে লুকিয়ে পড়লাম আমি।
.
কিন্তু তাদের কথোপকথন শুনতে পেলাম। খালিদ লিজার অবাক হওয়া দেখে জিজ্ঞেস করলো ..
--কি হলো লিজা!
লিজা কাঁপা কাঁপা গলায় জবাব দিলো..
--আমার মনে হলো গাছের আড়ালে কেউ লুকিয়ে আছে। সে আমাদের ফলো করছিলো। আমাদের দেখেই লুকিয়ে পড়েছে।
খালিদ লিজার কথা শুনে অট্টহাসি দিয়ে উঠলাে। হো হো করে হেসে নিয়ে বললাে ..
--ওরে পাগলী মেয়ে তুমি এত ভীতু কেন? শিহাব বা অন্যকেউ কেন এখানে আসবে এত তাড়াতাড়ি! তুমি অতিরিক্ত ভয়ের কারণে হ্যালুসিনেশনের শিকার হয়েছো। তাছাড়া এখন অন্ধকার ঘনিয়ে এসেছে। তাই হয়তো ভুল দেখেছো পাগলী মেয়ে কোথাকার।
কিন্ত খালিদের কথা মানতে পারলো না লিজা। কেন মানলো না সেটা বুঝে গেলাম আমি। তখন লিজা আসলে ভুল কিছু দেখেনি। আমি যদি তখন লিজার কথাগুলো গুরুত্ব দিতাম তাহলে তখনই আমার ভবিষ্যৎ সত্ত্বা গুলোকে পেয়ে যেতাম। লিজা আমাকে স্পষ্ট দেখেছে তাই জোর গলায় বললো ..
--না, আমি স্পষ্ট দেখেছি কেউ একজন লুকিয়েছে গাছের আড়ালে।
--আচ্ছা তাহলে চলো সত্য উদ্ঘাটন করা যাক। গিয়েই দেখা যাক গাছের আড়ালে কে!
.
তারা গাছের দিকে এগিয়ে আসতে লাগলো। আমি গাছের আড়াল থেকে নিজেকে ঝোপের আড়ালে নিয়ে এসেছি। তাই নিশ্চিন্ত। কারণ আমি আগে থেকেই জানি কি ঘটবে এখন। তারা আমাকে দেখতে পাবেনা এটুকু আমি নিশ্চিত।
গাছের কাছাকাছি এসে দুজনেই গাছের পেছনে উপড়ে নিচে তাকিয়ে কাউকে দেখতে পেলাে না। লিজাকে উদ্দেশ্যে করে খালিদ বললাে ..
--পাগলী মেয়ে, বলেছিলাম না খামোখা ভয় পাচ্ছিলে। তুমি আসলে সেই শুরু থেকেই ভয় পাচ্ছো। অতিরিক্ত ভয়ের কারণে এমন উল্টাপাল্টা দেখছো।এত ভয় নিয়ে কি প্রেম করা যায়!
লিজা মাথা নিচু করে কোমল কন্ঠে বললো..
--সত্যিই তো! কেউ ফলো করছে না তো!
--না রে বাবা। এত ভয় পেওনা। আমি আছিতো।
--কেমন পঁচা একটা গন্ধ আসছে।
--মনে হচ্ছে কোনো সাপ মরে পঁচে গেছে ঝোপঝাড়ের ভিতরে। চলো আমরা কালভার্ট টার ওখানে যাই। ওখানে কোনো গন্ধ নেই।
.
ওরা আবারও কালভার্ট এর মাঝখানে চলে যেতে লাগলো ঠিক সেই মুহুর্তে আমার পায়ের নিচে কিছু একটার অস্তিত্ব অনুভব করলাম। চোখ দুটো সেদিকে ঘুরাতেই দেখলাম আমার পা একটা মাথার খুলির উপরে। একটু পরেই আমার আরো অবাক হওয়ার পালা। অনেক গুলো লাশের স্তুপ করে রাখা এখানে। পোকামাকড় ঘুরাঘুরি করছে পঁচাগলা লাশগুলোর উপর। নাকে তীব্র পঁচা একটা গন্ধ চলে এলো। মুখে রুমালটা আরো শক্ত করে বেঁধে নিলাম যাতে নাকে গন্ধটা না আসে। একটা লাশ দেখে মনে হলো সেটা এখনো পঁচেনি। লাশটার দিকে এগিয়ে যেতেই দেখলাম লাশটা আর কারো নয়। এটা লিজার লাশ। একটু পরে আরো অবাক হলাম যখন বুঝতে পারলাম প্রতিটা লাশই লিজার লাশ। মাথাটা চক্কর দিয়ে উঠলো আমার। প্রতিবার টাইম ট্রাভেল করার পর প্রতিটা জিনিস কপি হতে থাকে। কিন্ত সেটা শুধু সেই সময়ে। নির্দিষ্ট সময়ের আগে তার অস্তিত্ব কিভাবে থাকতে পারে। তাহলে ঠিক কতবার আমি টাইম ট্রাভেল করে লিজাকে খুন করেছি। এতগুলো লাশ কিভাবে জমা হলো এখানে!
.
প্রত্যেকবার খুন করার পর লিজার লাশটা যখন কালভার্ট থেকে নিচে ফেলে দেই তখন সেটা পানিতে না পড়ে পাড়ের গা ঘেঁষে লাশের স্তুপে জমা হয়েছে। আর গন্ধটা এখান থেকেই আসছে। আজ রাতে আবারও খুন হতে যাচ্ছে লিজা। আরো একটা লাশ জমা হবে এই স্তুপে। ওহ মাই গড! দেরি হয়ে যাচ্ছে। আমি ঠিক কতবার টাইম ট্রাভেল করছি সেটারই হিসাব নেই এখন। সবকিছুর মূলে এই টাইম মেশিন। আমার এখন টাইম ট্রাভেল থামিয়ে দিতে হবে।
.
লাশের স্তুপ থেকে উঠে গিয়ে কালভার্ট এর উপরে তাকাতেই দেখলাম খালিদ আর লিজা পাশাপাশি দাড়িয়ে গল্প করছে। হাত ঘড়িতে তাকাতেই দেখলাম ঘন্টার কাটা ৮ টা ছুই ছুই করছে। সোজা খালের পানিতে নেমে সাঁতার কাটতে শুরু করলাম। খাল পাড় হয়ে বাড়িটার দিকে ছুটতে লাগলাম। যেভাবেই হোক টাইম মেশিনটা ধ্বংস করে দিতে হবে। সেটা করতে পারলেই টাইম ট্রাভেল থেমে যাবে। বেচেঁ যাবে খালিদ আর লিজা। নিজের কথা বাদ দিলাম আমি। আমার অতীত সত্ত্বা লিজার সাথে বেচেঁ থাকুক এটাই এখন আমার চাওয়া।
.
বাড়িটার দিকে ঢুকতে যাবো ঠিক সেই মুহুর্তে ঘড়িটার দিকে তাকাতেই দেখলাম ৮ টা বেজে গেছে। ওহ নো, এখন সেকেন্ড খালিদ এবং থার্ড খালিদ লিফট থেকে বেরিয়ে আসবে একইসাথে। তরিঘরি করে চলে গেলাম বাড়ির জানালার দিকে। ভেতরে তাকিয়ে দেখতে লাগলাম কি ঘটতে চলেছে। থার্ড খালিদ লিফট থেকে বের হয়েই বুঝতে পারলো সেকেন্ড খালিদ ও এখনই বের হয়ে আসবে লিফট থেকে। তাই সে প্রফেসর ভিক্টরের বেডরুমের দিকে যেতে লাগলো। সেকেন্ড খালিদ বের হয়েই বুঝে গেলো থার্ড খালিদের অবস্থান। সেও বেডরুমের দিকে যেতে যেতে বলে উঠলো..
--চেষ্টা ভালো ছিলো প্রফেসর। কিন্ত আমি বুঝে গেছি। আমার জীবন মরন সমস্যার মধ্যে এমন বোকা বানানোর মজা না করলেও পারতেন। আপনার বিড়াল তাড়ানো শেষ হয়নি এখনো! লুকিয়ে না থেকে বেরিয়ে আসুন।
.
বুঝে গেলাম আমি। প্রফেসর ঘুম থেকে উঠে এখন শাওয়ার নিচ্ছে। বেডরুমের দরজাটা নিশ্চয়ই খুলে রেখেছে ভুল করে।
.
কথাটা শেষ না হতেই দরজায় দুপদাপ আওয়াজ পেলাম। থার্ড খালিদ দুপদাপ আওয়াজ তুলে মেইন দরজা থেকে বের হয়ে গেলো। সেকেন্ড খালিদও তখনই একটা ছুরি হাতে নিয়ে তাঁর পিছু নিতে লাগলো। আমি অবাক হয়ে ভাবতে লাগলাম একি ঘটছে আবার! আবারও একই ঘটনার পুনরাবৃত্তি হচ্ছে যা পূর্বে ঘটেছিলো। আমি পালানোর প্রস্তুতি নেয়ার আগেই সেকেন্ড খালিদ আমার পিঠে ছুরিটা ঢুকিয়ে দিলো সজোরে।
ব্যথায় কুকিয়ে উঠলাম আমি। আরো একবার একই জায়গায় ছুরির আঘাতটা অসহ্য যন্ত্রণার সৃষ্টি করেছে। আমি কথা বলার শক্তি হারিয়ে ফেলছি। টাইম ট্রাভেল করে আসা সেকেন্ড খালিদ এবার হুঙ্কার করে বলে উঠলো ..
--কি বলেছিলে তখন শিহাব? এখন কথাটা ফেরত নেবার সময় হয়েছে। এখন সময়টা আমার জন্যই গুড। ব্যাড ফর ইউ। বল লিজা কোথায়?
এটাই ছিলো আমার প্রথম ট্রাভেল। এই সময়ে আমি জানতাম না আমি টাইম ট্রাভেল করে অতীতে এসেছি। নিশ্চয়ই এখন সেও জানেনা সে অতীতে আছে। আমি কি করে তাকে বুঝাবো এখানে কোনো শিহাব নেই। এখানে তারই অতীত আর ভবিষ্যৎ সত্ত্বাগুলো ঘুরাফিরা করে তাকে হয়রান করছে। আমার ভেজা কাদামাখা শরীর দেখে চেনারও উপায় নেই আমিই সে। বার বার নিজেকেই শিহাব ভেবে ভুল করে এসেছি আমি। এখানে আমি ছাড়া আর কেউ নেই। কথা বলার শক্তি না পেয়েও কোনোমতে ভাঙ্গা গলায় উত্তর দিলাম ..
--আমি শিহাব নই।
কথাটা শুনে চমকে উঠে ছেড়ে ছেড়ে দিলো আমাকে।
--শিহাব নও। তাহলে নিশ্চয়ই শিহাবের চামচা!
--যা ইচ্ছা ভাবতে পারো। কিন্ত একথা সত্যি। এটা আমাদের জীবনের সবচেয়ে খারাপ সন্ধ্যা।
--ইয়েস আই নো দ্যাট। কিন্ত আমার জন্য নয় শুধু তোমার জন্য। আর সন্ধ্যাটাকে খারাপ করেছো তুমি নিজেই। বল কুত্তার বাচ্চা শিহাব কোথায়? আর কতজনের দল নিয়ে আমাকে মারতে এসেছিস? সব কটাকে মেরে ফেলবো আজ।
কথাটা শেষ না হতেই পাশের ঝোপ থেকে এক চিলতে টর্চের আলো এলো। সাথে সাথে ঘাড় ঘুরিয়ে সেদিকে তাকাতেই ঝোপের আড়াল থেকে পায়ের আওয়াজ আসতে লাগলো। আবারও কেউ দৌড়ে পালাচ্ছে। বুঝে গেলাম এটা থার্ড খালিদ। আমিই টর্চের আলো ফেলেছিলাম তখন। আমার পিঠ থেকে ছুরিটা বের করে ফার্স্ট খালিদ হুঙ্কার করে বলে উঠলো..
--নিশ্চয়ই শিহাব। আমি আর তাকে ছাড়ছি না। পালিয়ে লাভ নেই। সবাইকে মারবো আজ।
.
সেকেন্ড খালিদ কালভার্টের দিকে ছুটলো আর থার্ড খালিদ ছুটলো খালের ভেলাটার দিকে। বুঝতে পারলাম কি ঘটতে চলেছে। আসলেই সন্ধ্যাটাকে আমি নিজেই খারাপ করে ফেলেছি। এটা আমার জীবনের সবচেয়ে খারাপ সন্ধ্যা। ভেরি ভেরি ব্যাড। মাথাটা মাটির সাথে লেপ্টে রেখে দিলাম। শরীরে একদম শক্তি নেই। ঠিক সেই মুহুর্তে কানে এলো বুলেটের শব্দ। নিশ্চয়ই থার্ড খালিদ সেকেন্ড খালিদকে আক্রমণ করতে গিয়ে লিজাকে খুন করে দিয়েছে।
.
এসবই তো ঘটবে এখন। আর চতুর্থ খালিদ হিসেবে আমার এখন কিছুই করার নেই। অর্ধমৃত শরীর নিয়ে শুধু ঘটনাগুলোর পুনরাবৃত্তি অনুভব করতে লাগলাম মাটিতে শুয়ে। একটু পরেই সেকেন্ড খালিদ প্রমাণ লোপাট করে বাড়িটার দিকে ছুটে এলো। সে বাড়িটাতে ঢুকতেই দেখলাম থার্ড খালিদও তাঁর পেছনে তাকে অনুসরণ করছে। সে নিশ্চয়ই ফার্স্ট খালিদের মৃত দেহটা ভেলার পাশে দেখেছে।
.
সেই মুহুর্তে প্রফেসর ভিক্টর এর মুখোমুখি দেখা হলো সেকেন্ড খালিদের। সেকেন্ড খালিদের সাথে ভিক্টরের কথা কাটাকাটির পর ঘুষির শব্দ হলো। আমি শুধু তাদের কথোপকথন শুনতে পেলাম। এখন এই সুযোগে থার্ড খালিদ টাইম মেশিনে ঢুকে যাবে। বাড়ির দরজাটা লাগিয়ে দিলো সে। চুপিচুপি টাইম মেশিনে ঢুকে সে চলে যাবে বিকেল ৫ টায়। আর সেকেন্ড খালিদ থার্ড খালিদের অবস্থানে অর্থাৎ রাত ৮ টায় চলে যাবে। সেখানে চলে আসবে সেকেন্ড খালিদ। আবারও একই ঘটনা ঘটবে তাদের সাথে। কিন্ত এখন সময় রাত ৯ টার দিকে গড়াচ্ছে।
.
ঘড়িটার দিকে এক নজর তাকিয়ে চোখটা বন্ধ হয়ে এলো আমার। চোখ খুললাম কলিং বেলের শব্দে। মাথাটা তুলে তাকাতেই দেখলাম ফার্স্ট খালিদ অর্থাৎ যে সেকেন্ড খালিদের শিকার ছিলো সে খালপাড় থেকে উঠে এসেছে। রক্তাক্ত শরীরটা কলিং বেলে চাপ দিয়েই ধুপ করে নিচে পড়ে গেলো। দৃশ্য টা দেখে জানালার দিকে এগিয়ে গেলাম আমি। হামাগুড়ি দিয়ে এগিয়ে গিয়ে দেয়ালে হেলান দিয়ে উঠে দাড়িয়ে দেখলাম প্রফেসর ভিক্টর তার নাকে ব্যান্ডেজ করতে ব্যস্ত। উনি কলিংবেল এর শব্দ পেয়ে দরজার দিকে ছুটলেন। গিয়েই দেখলেন রক্তাক্ত খালিদকে। খালিদকে ভেতরে ঢুকিয়ে দরজাটা লাগিয়ে দিলেন।
.
আমার মাথায় একটাই চিন্তা ঘুরতে লাগলো। যেভাবেই হোক টাইম মেশিনে পৌঁছাতে হবে। টাইম মেশিনটাই সকল নষ্টের মূলে। কিন্ত ভাবতে ভাবতেই আবারও মাটিতে লুটিয়ে পড়লাম। শরীরে আর কোনো শক্তি পাচ্ছিনা। নিস্তেজ হয়ে যেতে লাগলো শরীরটা।
.
কতক্ষণ সংজ্ঞাহীন ছিলাম আন্দাজ করতে পারলাম না। জ্ঞান ফিরেই বুঝলাম শরীরে শক্তি পাচ্ছি হালকা। আর দেরি করলাম না। কোনোমতে উঠে দাঁড়ালাম। আমাকে যে পারতেই হবে। উঠে মেইন দরজার দিকে চলে গেলাম। নিশ্চয়ই কলিং বেল বাজালে প্রফেসর দরজা খুলে দেবে। দরজার সামনে কুঁজো হয়ে দাঁড়িয়ে কলিং বেলের সুইচে একবার চাপ দিলাম। কেউ দরজা খুলে দিলোনা। আরো একবার চাপ দিলাম। না কোনো সাড়া পাচ্ছিনা ভেতর থেকে।
.
হাত ঘড়িটার দিকে তাকালাম। ঘড়িতে সাড়ে এগারোটা বেজে গেছে। নিশ্চয়ই ফার্স্ট খালিদ আর প্রফেসর এখন টাইম ট্রাভেল করার জন্য প্রস্তুতি নিচ্ছে। যেতে লাগলাম প্রফেসরের বেডরুমের জানালার দিকে। গিয়েই দূর থেকে তাকাতেই দেখলাম তাঁরা একে অপরের সাথে কথোপকথন চালিয়ে যাচ্ছে আর প্রফেসর ভিক্টর টাইম ট্রাভেলের ব্যপারটা জানাচ্ছে। আমি তাদের কথপোকথন শুনতে পাচ্ছিনা কিন্ত তাদেরকে দেখতে পাচ্ছি। মুখ থেকে ভেজা রুমালটা খুলে দূরে ছুড়ে মারতেই একটা কটু গন্ধ নাকে এলো। পাত্তা দিলাম না সেটার। উদ্দেশ্য এখন বাড়ির ভেতরে প্রবেশ করার। ফার্স্ট খালিদ প্রফেসরের দেয়া শার্টটা পড়ে নিলো।
.
বেডরুমের লাইটটা অফ করে তাঁরা দুজনে লিফটের দিকে যেতে লাগলো কথা বলতে বলতে। জানালার দিকে চোখ যেতেই দেখলাম এই ঘরের জানালায় গ্রিল নেই। এটাই আমার সুযোগ। আশেপাশে তাকাতেই একটা ভাঙ্গা ইটের টুকরো পেয়ে গেলাম। সজোরে জানালার গ্লাসটা ভেঙ্গে ফেললাম। ঢুকে গেলাম ভেতরে। লুকিয়ে পড়লাম দরজার আড়ালে। এবার শুনতে পেলাম প্রফেসরের কন্ঠস্বর। ফার্স্ট খালিদকে উদ্দেশ্য করে তিনি বলে উঠলেন ..
--দুইদিন ধরে একটা বিড়াল খুব জ্বালিয়ে মারছে। নিশ্চয়ই বিল্লিটারই কাজ। আমি ওকে তাড়িয়ে আসছি।
.
প্রফেসর বেডরুমের দিকে আসতে লাগলেন। জানালার দিকে গিয়ে দেখলেন সেটা ভাঙ্গা পড়ে আছে। দরজার পাশের দেয়ালের দিকে এসে লাইটের সুইচটা অন করে দিতেই আমাকে দেখে চমকে উঠলেন প্রফেসর। বললেন ..
--একি মিস্টার খালিদ আপনি আসছেন কেন রুমে? আপনি লিফটে চলে যান আমি বিড়ালটাকে তাড়িয়েই আসছি।
আমি প্রফেসরের কথায় কোনো প্রতিক্রিয়া দেখালাম না বরং দরজার আড়াল থেকে লক্ষ্য করলাম প্রফেসরের পেছনে আসা ফার্স্ট খালিদ কথাটা শুনে লিফটের দিকে চলে যাচ্ছে আবার । আমি তাঁর লিফটে প্রবেশ করার অপেক্ষায় দাড়িয়ে রইলাম আর প্রফেসর আমার উদ্দেশ্যে আবারও বলে উঠলেন ..
--আপনি লিফটের দিকে যান আমি আসছি এক্ষুনি।
.
বুঝে গেলাম ব্যপারটা। তাহলে টাইম ট্রাভেল শুরুর আগে গ্লাস ভাঙ্গা বিল্লিটা আমারই ভবিষ্যৎ সত্ত্বা ছিলো যেটা এখন আমি বর্তমানে। আর প্রফেসর তখন কথাগুলো আমাকে বলেনি বলেছিলো আমার ভবিষ্যৎ সত্ত্বাকে। ফার্স্ট খালিদ টাইম ট্রাভেল করার জন্য লিফটে প্রবেশ করলো। এখন সে আবারও রাত ৮ টায় চলে যাবে। লিফটের দরজা বন্ধ হতেই রাগে গজগজ করতে লাগলাম আমি।
প্রফেসর আমার ভেজা শরীরের দিকে তাকিয়ে বলে উঠলো..
--আপনার শরীর ভিজে গেলো কি করে। সেখানে কাদা লাগলো কি করে! আচ্ছা যাইহোক চলুন লিফটের দিকে।
প্রফেসরের মুখে কথাগুলো শুনেই সজোরে একটা ঘুষি মেরে প্রফেসরকে নিচে ফেলে দিয়ে বলে উঠলাম ..
--এখন এটাকে কিভাবে থামাতে হয় বল আমাকে। সময়ের বেড়াজালে তুই আমাকে আবদ্ধ করেছিস। আমি এখন অনেক ক্লান্ত। সময়ের সাথে পাল্লা দিতে দিতে আমি ক্লান্ত হয়ে গেছি। বলে দে আমাকে কিভাবে এটাকে থামাতে হয়। নাহলে তোর টাইম মেশিন আমি ধ্বংস করে দেবো।
প্রফেসর অবাক চোখে আমার দিকে তাকাতে তাকাতে উঠে বসতে লাগলেন। তারপর বলে উঠলেন
.
--হেয়, মিস্টার খালিদ আপনি কি পাগল হয়ে গেলেন! মদ খেলাম আমি আর মাতলামি দেখি আপনি করছেন। আপনি তো এখনো টাইম ট্রাভেল শুরুই করলেন না। ক্লান্ত কেন হতে যাবেন!
--আমি টাইম ট্রাভেল করতে করতেই এখানে পৌঁছে গেছি।
--বুঝেছি আপনি আবারও মজা করছেন। হাহাহা, আমাকে এপ্রিল ফুল বানাতে চাইছেন।
--আমার চোখের দিকে তাকান। দেখে কি মনে হচ্ছে আমি মজা করছি!
.
প্রফেসর আমার কথায় হাসতে লাগলো। যেনো আমি মজা করছি তাঁর সাথে। অবশ্য বিশ্বাস না করারই কথা। কেননা উনি এ ব্যপারে অবগত নয়। উনি এখনো জানে খালিদ এখনো টাইম ট্রাভেল শুরু করেনি। কিন্ত তিনি এটা জানেনা সবকিছু একটা লুপের ভেতর দিয়ে ঘটে চলেছে। আর এই লুপ তাঁর জন্যই সৃষ্টি হয়েছে। তাঁর এই টাইম মেশিনের জন্যই এত বাজে ঘটনা গুলো ঘটে যাচ্ছে আমার সাথে। আর আমার লাইফটা হেল বানিয়ে দিয়ে উনি এখন হাসছে মজা করছে ঠাট্টা করছে। রাগে শিউরে উঠলাম আমি। জানালার ভাঙ্গা কাচেঁর টুকরো নিয়ে সজোরে ঢুকিয়ে দিলাম প্রফেসরের বুকে। আমার জীবনটা কোনো মজা করার বস্তু নয়। প্রফেসর কিছু বুঝে উঠার আগেই কাচেঁর টুকরো বিধে গেলো তাঁর শরীরে। নিচে দুপ করে পড়ে গেলো প্রফেসর। মুখ দিয়ে গলগল করে রক্ত বের হতে লাগলো। একদম হার্ট বরাবর আঘাত করেছি। জানালা দিয়ে লাশটা বাইরে নিয়ে গেলাম। লাশটা একটু দূরে ফেলে দিতেই দেখলাম একটু দূরে লাশের স্তুপ। তখন সেখান থেকেই আসছিলো কটু গন্ধটা। বুঝে গেলাম এখানে আমি প্রথমবার নই। এখানে আমি আগেও এসেছি আর প্রফেসরকে খুন করেছি বার বার। সবগুলো প্রফেসরের লাশ। লাশের স্তুপ থেকে চোখ সরিয়ে চিন্তায় মগ্ন হয়ে গেলাম।
.
সময়ের এই লুপ থেকে আমাকে বের হতে হবে। যত তাড়াতাড়ি সম্ভব উপায় খুজেঁ বের করতে হবে। নিশ্চয়ই এর কোনো সমাধান রয়েছে। আবারও জানালা দিয়ে বাড়ির ভেতরে ঢুকলাম। এমন কিছু নিশ্চয়ই আছে যা আমাকে জানাবে কিভাবে এই লুপ থেকে বের হতে হয়।

সোজা ওয়াশরুমে চলে গিয়ে হাতমুখ ধুয়ে নিলাম। বের হওয়ার সময় খেয়াল করলাম আমার শার্ট টা শুকাতে দেয়া। প্রফেসরের শার্ট টা খুলে নিজের শার্ট টা গায়ে পড়ে নিলাম।
.
ঘড়িতে তাকিয়ে দেখতে লাগলাম সময়টা। আমি এখনো অতীতে রয়েছি। ঘন্টার কাঁটা একটা ছুই ছুই করছে। তার মানে এখন ১ তারিখ। অর্থাৎ ১লা এপ্রিল। এখন খুজেঁ বের করতে হবে কিভাবে এই লুপকে থামিয়ে দেয়া যায়। কোনো না কোনো উপায় তো নিশ্চয়ই আছে।
.
পুরো বাড়িটা হন্য হয়ে খুঁজতে লাগলাম প্রফেসর ভিক্টর কোথায় গবেষণার কাজ করে। এমন কিছুই খুজেঁ পেলাম না টাইম মেশিনের ব্যপারে। বাড়ির ভেতরে কোনো ল্যাব ও পেলাম না যেখানে গবেষণা করা হয়। বিষয়টা ভাবনায় ফেলে দিলো আমাকে। তাহলে এই সমস্যার সমাধান এখন কিভাবে করবো আমি! সারাজীবন টাইম ট্রাভেল করে অতীতে বিচরণ করে কাটিয়ে দেয়ার সুযোগ নেই আমার। তাঁর উপর লিজা খুন হয়েছে, প্রফেসর ভিক্টর খুন হয়েছে। অনেক জটিল সমস্যা তৈরি হয়ে গেছে। সব কিছুকে একটা সমাধানে নিয়ে আসতে হবে। এমন কিছু করতে হবে যার মাধ্যমে সব সমস্যার সমাধান হয়ে যাবে। সবকিছু পূর্বের মতো হয়ে যাবে। মনে হবে যেনো কোনোকিছুই ঘটেনি। কিন্ত কিভাবে তা সম্ভব! আমি জানিনা আমি কি করবো কিন্ত আমাকে পারতেই হবে।
.
পরক্ষণেই একটা বুদ্ধি মাথায় এলো। শুরু থেকেই সব ঘটনা পাল্টে দেয়া যাবে খুব সুন্দরভাবে। দৌড়ে বাড়ির বাইরে বের হলাম মেইন দরজা খুলে। দৌড়ে যেতে লাগলাম প্রফেসরের বেডরুমের জানালার দিকে। প্রফেসরের লাশের স্তুপ থেকে সদ্য খুন করা টাটকা লাশটা উঠিয়ে নিলাম কাঁধে। আবার বাড়ির ভেতরে চলে গেলাম। লাশটা লিফটের সামনে রেখে আবারও বাড়ির বাইরে চলে গেলাম। কালভার্টের দিকে দৌড়াতে গিয়ে চোখ গেলো খালপাড়ে ভেলাটার দিকে। অন্ধকার আর কুয়াশায় আবছা দেখলাম কিছু একটা ভেসে আসছে ভেলাটার দিকে। কাছে যেতেই বুঝতে পারলাম একটা লাশ। ভেলার কাছাকাছি চলে গেলাম।
.
পানির কাছাকাছি গিয়েই দেখলাম রাত আটটায় খুন হওয়া লিজার টাটকা লাশটা ভেলার পাশে উপুড় হয়ে ভাসছে। চুলগুলো ছড়িয়ে আছে। ফার্স্ট খালিদও ভাসতে ভাসতে এই জায়গায় এসেছিলো আর লিজার লাশটাও এখন ভাসতে ভাসতে এখানে এসে আটকে গেছে। অথচ লিজাকে আমি অনেক দূরে ফেলেছিলাম তবুও স্রোতের ধাক্কার কারণে তাঁর লাশটা এদিকেই এসে গেছে। আমিতো ভেবেছিলাম সেটা কালভার্টের নিচেই পড়ে আছে তাই সেদিকেই যাচ্ছিলাম। ভালোই হলো এখানে পেয়ে। লাশটা পানি থেকে উঠিয়ে কাঁধে উঠিয়ে নিলাম। এটাও নিয়ে গিয়ে লিফটের পাশে রেখে দিলাম।
.
সুইচ টিপে লিফটের দরজা অন করলাম। লাশ দুটোকে লিফটের ভেতরে ঢুকিয়ে নিজেও ঢুকে গেলাম ভেতরে। দরজা বন্ধ হয়ে গেলো খপ করেই। লেডি ভয়েসটা টাইম সেট করতে বললেই বিকাল ৪ টা সেট করে দিলাম।
কারণ এবার আরো আগে যেতে হবে। খালিদ এবং লিজা যেনো এসেই বুঝতে পারে এই স্থানে তাদের বিপদ রয়েছে সেই ব্যবস্থা করতে হবে। "start" বাটনে ক্লিক করতেই লিফট কাঁপাকাঁপিছ শুরু হলো। এরপর লিফটের দরজা খুলতেই লাশদুটো ঠেলে বাইরে পাঠিয়ে দিলাম। আমি বের হতেই লিফটের দরজা বন্ধ হয়ে গেলো।
ঘড়িতে সময় বিকেল ৪ টা। আমি তাহলে রাত ১ টা থেকে বিকেল ৪ টায় এলাম আবারও। ৫ টার আগেই কাজ শেষ করতে হবে কেননা ৫ টার সময় আমি একবার ট্রাভেল করেছিলাম। আর কোনো সত্ত্বার মুখোমুখি হয়ে ঝামেলা পাকাতে চাচ্ছিনা এখন।
.
লিজার লাশটা কাঁধে তুলে নিয়ে কালভার্টের দিকে যেতে লাগলাম। মেইন দরজা খুলে সোজা কালভার্টের প্রান্তের দিকে যেতে লাগলাম। লিজার লাশটা রাস্তার পাশে ফেলতে হবে এবার। ফার্স্ট খালিদ আর লিজা এসেই যেনো লাশটা দেখতে পারে। আর দেখেই যেনো বুঝতে পারে এখানে থাকাটা তাদের জন্য নিরাপদ নয়। তাহলেই তাঁরা এই জায়গা থেকে সরে যাবে আর ঘটনাগুলো পরিবর্তন হয়ে যাবে।
.
রাস্তার পাশে দাঁড়িয়ে লাশটা কাঁধ থেকে ফেলতেই সেটা রাস্তার নিচে গড়িয়ে পড়তে লাগলো। না লাশটাকে তো নিচে ফেলতে দেয়া যাবেনা। লাশটা গড়িয়ে নিচে পড়ে একদম খালেপাড়ের ঝোপের আড়ালে চলে গেছে।
ঝোপের দিকে এগিয়ে গেলাম আমিও। লাশটা তুলতে হবে। কিন্ত ঝোপের আড়ালে উকি দিয়েই আমার চোখ ছানাবড়া হয়ে গেলো। লিজার লাশ দিয়ে জায়গাটা পরিপূর্ণ হয়ে আছে আর সেগুলোর উপর মাছি ভন ভন করছে। ভয়ে আঁতকে উঠলাম আমি। এটাই বুঝি ঘটবার বাকি ছিলো। রাত ৮ টায় খুন হওয়া লাশটা আমি টাইম ট্রাভেল করে অতীতে অর্থাৎ বিকেল ৪ টায় এনেছি। আর সেজন্যই বিকেল ৫ টায় ট্রাভেল করার পর আমি এই লাশের স্তুপ দেখতে পেয়েছিলাম সেইসাথে গন্ধ। এজন্য রাত ৮ টায় অর্থাৎ লিজার মৃত্যুর আগেই তাঁর লাশ দেখতে পেয়েছিলাম তখন। কি ঘটছে এসব! যা পরিবর্তন করতে যাচ্ছি সেটাই যেনো পূর্বের ঘটিত ঘটনা হয়ে যাচ্ছে।
.
লাশটা ফেলে রেখেই বাড়ির দিকে দৌড় দিলাম। বাড়িতে ঢুকেই প্রফেসরের লাশটা কাঁধে নিয়ে বাড়ির বাইরে বের হলাম। বেডরুমের জানালার দিকে গিয়ে আর একটু দূরে তাকাতেই দেখলাম প্রফেসরের অনেকগুলো লাশের স্তুপ। লাশটা কাঁধ থেকে সেই স্তুপে ফেলে দিলাম। এখানেও একই ঘটনা খেয়াল করলাম। প্রফেসরের খুন হয়েছিল রাত বারোটার দিকে আর সেই লাশ টাইম ট্রাভেল করে বিকেল ৪ টায় অর্থাৎ অতীতে নিয়ে এসেছি। আর তাই রাতে প্রফেসরকে খুন করার আগেই আমি এখানে স্তুপ করা লাশগুলোর কটু গন্ধ পেয়েছিলাম। যা পরিবর্তন করতে চেয়েছিলাম তা করতে গিয়েই বুঝলাম সেটা পূর্বেরই ঘটনা। আমি যে একই ঘটনারই বার বার পুনরাবৃত্তি করছি তা এখানকার লাশের স্তুপ দেখলেই বুঝা যাচ্ছে। প্রতিবার খুন হওয়া লাশগুলো আমি টাইম ট্রাভেল করে বিকেল ৪ টায় নিয়ে এসে এখানে স্তুপ করেছি।
.
হাত ঘড়িতে সময়টা দেখলাম। একটু পরেই ৫ টা বেজে যাবে। তখন আমার অতীত সত্ত্বা ট্রাভেল করে এই সময়ে আসবে। তাঁর আগেই আমাকে টাইম মেশিনটা ধ্বংস করতে হবে। এই ঘটনাগুলো পরিবর্তন যোগ্য নয়। এই ঘটনাগুলোকে চিরতরে থামিয়ে দিতে হবে।
.
আচমকা বেডরুমের জানালায় চোখ যেতেই দেখলাম জানালাটা ভালো আছে। সচ্ছ কাঁচের ভেতর দিয়ে ভেতরে তাকাতেই দেখলাম প্রফেসর ভিক্টর ঘুমে বিভর হয়ে আছেন। অথচ এই সময়ে সে জানালা দিয়ে বাইরে তাকালে দেখতে পেতো তাঁরই লাশের স্তুপ। আজ রাতে তিনি খুন হবেন তারপর সেই লাশ ট্রাভেল করে আবারও এই সময়ে নিয়ে এসে স্তুপ করা হবে এখানেই। কি ঘটছে এসব! না, এইসব ঘটনাকে থামাতেই হবে।
.
ভাবতে ভাবতেই মেইন দরজার দিকে গেলাম। বাড়ির ভেতরে ঢুকে লিফটের দিকে অগ্রসর হলাম। টাইম মেশিনটা ধ্বংস করে দিলে আদৌ কি কোনো সমস্যার সমাধান হবে! নাকি উল্টো বড় সমস্যার সৃষ্টি করবে! আমি জানিনা কি ঘটবে কিন্ত একটা শেষ চেষ্টা করে দেখা উচিৎ।
.
সুইচে চাপ দিয়ে লিফটের দরজাটা খুলে সোজা ভিতরে ঢুকে গেলাম। ঢুকতেই লিফটের দরজাটা খপ করে বন্ধ হয়ে গেলো আবার। পিঠে কাটা জায়গাটা থেকে খুব ব্যাথা অনুভব করছি এখনো। পাত্তা দিলাম না। লেডি ভয়েসটা বলে উঠলো..
"সেট ইওর টাইম"
.
সেটারও কোনো পাত্তা দিলাম না। মনিটরে টাইম সেট করার নির্দেশ দিচ্ছে। কীবোর্ডের দিকে তাকালাম। বাটন গুলো সুক্ষ্মভাবে খেয়াল করতে লাগলাম। নাম্বার বাটনগুলোর বামপাশে স্টার্ট বাটন আর ডানপাশে শুধু একটা লাল বাটন। বাটনে কোনো নাম উল্লেখ করা নেই। তাহলে এই বাটনের কাজ কি ছিলো!
.
চারকোণা ঘরটার চতুরদিকে তাকাতে লাগলাম। একটা ছোট্ট ব্রিফকেজ চোখে পড়লো এবার। এক কোণায় পড়ে আছে সেটা। নিশ্চয়ই গুরুত্বপূর্ণ কিছু একটা থাকতে পারে ভেতরে। এর আগে টাইম ট্রাভেল করার সময় এতটা উদ্বিগ্ন ছিলাম কোনোকিছু ভালোভাবে খেয়াল করা হয়নি। আমার সবকিছু খেয়াল করা উচিৎ ছিলো। ব্রিফকেসটা হাতে তুলে নিতেই কিছু কাগজ নিচে পড়ে গেলো। ব্রিফকেসটা খোলাই পড়ে ছিলো তা খেয়াল করিনি। হাতল ধরে তুলতেই মুখ খুলে কাগজগুলো পড়ে গেছে। একটা কাগজে চোখ যেতেই তার উপর চোখ দুটো আটকে গেলো আমার।
.
টাইম মেশিনের ব্যবহার বিধি উল্লেখ করা হয়েছে সেখানে। রঙ্গিন কাগজটা তুলে নিতেই দেখলাম সেখানে কীবোর্ড এর বাটনগুলোর ইউজার ম্যানুয়াল দেয়া হয়েছে। চোখ বুলাতে লাগলাম লিখাগুলোর উপর।
নাম্বার বাটন গুলোতে নির্দেশ করে বলা হয়েছে, "নাম্বার কী গুলো প্রেস করে নির্দিষ্ট সময় নির্ধারণ করে নিন। অবশ্যই সেই সময় নির্ধারণ করুন যে সময়ে আপনি যেতে চান।"
স্টার্ট বাটন নির্দেশ করে লেখা হয়েছে "সময় নির্ধারণ করার পর স্ক্রিনে তাকিয়ে দেখুন সময় ঠিক আছে কিনা। এরপর স্টার্ট বাটনে ক্লিক করুন। আপনার ভ্রমণ শুরু হয়ে যাবে।"
এবার লাল বাটনের ব্যপারটা চোখে পড়লো আমার। সেখানে নির্দেশ করে লেখা হয়েছে "ভ্রমণ শেষ হলে টাইম মেশিনে ফিরে আসুন। লাল বাটনে প্রেস করুন এবং বর্তমান সময়ে ফিরে আসুন"
.
ব্যপারটা খেয়াল করে মনে মনে খুশি হলাম আমি। অবশেষে মুক্তির পথ পেয়ে গেছি। বর্তমানে ফিরতে হবে এই বাটনটা ব্যবহার করেই। কত সহজ একটা ব্যপার ছিলো অথচ আমি চিন্তায় হয়রান হয়ে যাচ্ছিলাম। যাইহোক কাজটা শুরু করি। ব্রিফকেসে কাগজটা রেখে দিয়ে কীবোর্ডের দিকে এগিয়ে গেলাম। আঙ্গুল চালানোর জন্য আর সময় নিলাম না। আঙ্গুলের ডগা সোজা চলে গেলো লাল বাটনে।
.
বাটনে প্রেস করার সাথে সাথে লিফট কাঁপাকাঁপি শুরু করে দিলো। বুঝে গেলাম আমি বর্তমান সময়ে ফিরে যাচ্ছি এবার। না জানি কত সময় টাইম ট্রাভেল করার পর অবশেষে বর্তমান সময়ে যাচ্ছি আমি। একটু পরেই কাঁপাকাঁপি থেমে যেতেই আমি বের হওয়ার জন্য প্রস্তুতি নিলাম।
.
অবশেষে বর্তমানে আসা গেলো। বিষয়টা দুঃস্বপ্নের চেয়েও ভয়ংকর ছিলো।
কিন্ত একটু পরেই খেয়াল করলাম লিফটের দরজা খুলছে না। ঘাবড়ে গেলাম একটু। সমস্যা কি! এখন কি বর্তমানে এসেও ঝামেলা পোহাতে হবে নাকি!
.
বীপ বীপ শব্দ কানে এলো। সেটা শুনেই চোখটা সোজা কীবোর্ডের উপরের স্ক্রিনে চলে গেলো। একটা লেখা ভেসে আছে। সেটা ভাসছে আবার ভ্যানিস হচ্ছে। বীপ বীপ শব্দটা লেখাটার জন্যই আসছে। লেখাটা পড়ে ফেললাম। সেখানে লেখা ইংরেজিতে "Error Fail Error"।
.
ফিমেল ভয়েসটা বলে উঠলো এবার "You lost your time. Try agin another time."
.
হোয়াট! মজা করছে নাকি! সময় হারিয়ে গেছে মানে! আবার ট্রাই করা উচিৎ। শেষে কিনা একটা লাল বাটনই জিন্দেগীর ভেতরে লাল বাতি জ্বালিয়ে দিচ্ছে। লাল বাটনটাতে আবারও প্রেস করলাম।
.
একই ঘটনা পুনরায় ঘটলো। লিফট কাঁপাকাঁপি করে থেমে গিয়ে আবারও "Error Fail Error" দেখাচ্ছে। লেডি ভয়েসটা তখনই আবারও বলে উঠলো
"You lost your time. Try agin another time."
চিৎকার করে বলে উঠলাম
--আমি জানি একই কথা তুমি বারবার বলবে।
.
লিফটের দরজা খুলার চেষ্টা করলাম। নাহ ভেতর থেকে দরজা খোলার কোনো সিস্টেম নেই। দরজা খুলতে হলে টাইম ট্রাভেল শুরু করতে হবে। কিন্ত না আর টাইম ট্রাভেল করা যাবেনা। এমনিতেই একটা লুপের ভেতরে ঘুরছি আমি। এর থেকে বের হতে হবে আমাকে।
.
ব্রীফকেসের ভেতরে আবারও চোখদুটো গেলো আমার। উপায় তো খুজেঁ বের করতেই হবে আমাকে। আগের রঙ্গিন কাগজটা বের করে ফেললাম। প্রথম পাতায় টাইম মেশিনের ব্যবহার দেয়া। কাগজটা উল্টিয়ে পেছনের অংশে চোখ দিতেই দেখলাম উপরে বড় করে লেখা "সময় ভ্রমনের নিয়মাবলী"। লেখাগুলো পয়েন্ট আকারে দেয়া। এগুলো পড়লে হয়তোবা কোনো উপায় বের করা যাবে। পড়তে লাগলাম সেগুলো।
.
১. সময় ভ্রমণে যতটা সম্ভব কম সময় নিন। দ্রুত টাইম মেশিনে ফিরে এসে লাল বাটন প্রেস করে বর্তমান সময়ে ফিরে আসুন।
২. যদি সময় বেশি নেন তাহলে শুধু অবলোকন করুন। প্রভাব দেখানোর চেষ্টা করবেন না। হিতে বীপ‌রিত হতে পারে।
৩. প্রকৃতি তার আপন নিয়মে চলছে আর আপনি সেখানে ভিন্ন সময় থেকে আসা একজন আগন্তুক। সেই সময়ে আপনি অস্তিত্বহীন। তাই প্রভাব না দেখানোই বুদ্ধিমানের কাজ। প্রকৃতির নিয়ম ভঙ্গো হলে আপনার সাথেও প্রকৃতি নতুন খেলা খেলতে পারে।
৪. আর যাই করুন নিজের সত্ত্বা থেকে দূরে থাকুন। এটাই সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ কাজ। নিজের অতীত বা ভবিষ্যৎ সত্ত্বা থেকে দূরত্ব বজায় রাখুন। তা না করলে সবচেয়ে বড় ক্ষতিটা আপনারই হবে।
৫. শুধুমাত্র একবার ভ্রমণ করে বর্তমানে ফিরে আসুন এটা খুব সহজ একটা কাজ। তাহলে ভ্রমণের নিয়মকানুন গুলো সুশৃঙ্খল থাকবে । ভুলেও জাম্প করবেন না। অর্থাৎ বর্তমানে ফিরে না এসে নতুন ভ্রমণ শুরু করবেন না। এতে লুপের সৃষ্টি হতে পারে।
এবার জেনে নেয়া যাক লুপের সৃষ্টি হলে কি ঘটতে পারে। যদিও বিষয়টা পরীক্ষা করার কোনো উপায় নেই তবুও আন্দাজ করে বলা যায় সময় ভ্রমণে তৈরি হওয়া লুপ সময়ের মধ্যে একটা বিশৃঙ্খলা সৃষ্টি করে দেয়। সময় নিজে থেকেই যখন বুঝতে পারে একটা বিশৃঙ্খলা সৃষ্টি হয়েছে তখন নিজে থেকেই সে এটাকে লুপ বানিয়ে একই স্থানে সীমাবদ্ধ করে দেয়। এজন্য আপনি ভিন্ন ভিন্ন নিজের অতীত ভবিষ্যৎ সত্ত্বা গুলোর সাথে একই সময়ের গন্ডিতে আটকে যেতে পারেন। এর ফলে আপনার অনুভূতি কি হবে তা জানা নেই কারো। আর আপনার সাথে কী ঘটবে সেটাও আন্দাজ করার মতো নয়। তবে এটুকু বলা যায় আপনি যখন জানতে পারবেন আপনি একই সময়ে বার বার বিচরণ করছেন তখন এটা নরক যন্ত্রণার মতোই যন্ত্রনাদায়ক হয়ে উঠবে। আর আপনি বার বার চেষ্টা করতে থাকবেন এর থেকে বের হয়ে আসার জন্য। আদৌ তা সম্ভব কিনা জানা নেই। বার বার ভ্রমণের ফলে টাইম মেশিন অকেজো হয়ে যেতে পারে। আপনার স্মৃতি শক্তি নষ্ট হয়ে যেতে পারে। শারীরিক পরিবর্তন হতে পারে। আপনি মারাও যেতে পারেন। তবে আপনার সতর্কতা অবলম্বন করা উচিৎ যাতে এমনটা আপনার সাথে না ঘটে। এটা আসলেই যন্ত্রনাদায়ক। তাই সময়ের নিয়ম ভঙ্গের চেষ্টা না করাই উত্তম এতে প্রকৃতির নিয়ম ভঙ্গো হয়। আপনার উচিৎ হবে শুধু নিজেকে আড়াল করে বিচরণ করা। স্মৃতিময় সময়গুলোতে ঘুরে আসতে পারেন অথবা পারেন শত্রুর গতিবিধি জেনে আসতে। তবে অবশ্যই প্রভাব দেখানোর চেষ্টা করা উচিৎ হবেনা। সেটার দরকার হলে বর্তমানে ফিরে এসে করুন। আপনার যাত্রা শুভ হোক।
.
পুরো লেখাটা পড়ার পর মাথাটা ঘুরে গেলো আমার। আমি প্রতিটা নিয়ম ভঙ্গো করেছি আর আমার সাথে সেটাই ঘটছে। আমি সময়ের বলয়ে আবদ্ধ হয়ে গেছি। সময় নিয়ে খেলতে গেছিলাম এখন সময় আমাকে নিয়ে খেলছে। আবদ্ধ লিফটের ভেতরে চিৎকার করে উঠলাম আমি সেই চিৎকারের শব্দ আমারই কানে জোড়ালো হয়ে প্রতিধ্বনি হলো। জীবনটাকে নরকে ফেলে দেয়ার জন্য নিশ্চয়ই একটা টাইম মেশিনই যথেষ্ট ছিলো। সব রাগ টাইম মেশিনের উপর গিয়ে ঠেকেছে। এটা কোনো টাইম মেশিন নয়। এটা একটা নরকের দরজা। সব নষ্টের মূলে এই বস্তুটা। এই নারকীয় বস্তুটাকে ধ্বংস করে দিতে হবে।
.
ব্রীফকেসটা হাতে নিয়ে সজোরে কীবোর্ডের উপরে আঘাত করতে লাগলাম। আর গালাগালি দিতে লাগলাম। মাথা প্রচন্ড খারাপ হয়ে গেছে। দুই তিনবার আঘাত করার সাথে সাথে লিফট কাঁপাকাঁপি শুরু হয়ে গেলো। এত জোরে কাঁপতে লাগলো যে আমি ধাক্কা খেয়ে দূরে পড়লাম। লোহার দেয়ালে ধাক্কা খেয়ে পড়ে গিয়েই সেন্সলেস হয়ে গেলাম।
.
.
জ্ঞান ফিরতেই মাথায় প্রচন্ড ব্যথা অনুভব হলো। আমার সাথে কি ঘটেছে তা মনে করার চেষ্টা করলাম। কিছুই মনে করতে পারছি না। মনে হলো খুব খারাপ একটা দুঃস্বপ্ন দেখছিলাম এতক্ষণ। কিন্ত স্বপ্নে কি দেখেছি কিছুই মনে করতে পারলাম না। চোখটা সামনে যেতেই দেখলাম একটা চারকোণা আবদ্ধ ঘরে পড়ে আছি আমি। দরজাটা খোলা রয়েছে। উঠে দাঁড়ালাম আমি। মাথাটা ভীষণ ব্যথা করছে। দরজা দিয়ে বের হতেই খপ করে সেটা আবারও বন্ধ হয়ে গেলো। পেছনে ঘুরে তাকাতেই দেখলাম একটা লিফট। এখানে আমি কিভাবে এলাম কিছুই মনে করতে পারলাম না। বাড়িটার দিকে তাকিয়ে দেখলাম কিছুক্ষণ। কোথায় আছি আমি কিছুই বুঝতে পারছি না। সদর দরজার দিকে এগিয়ে যেতে লাগলাম। দরজাটা খোলাই রয়েছে দেখলাম। বের হয়ে গেলাম বাইরে। বাড়ির সামনে জঙ্গল ঝোপঝাড়ে পরিপূর্ণ। পাখ পাখালির কিচিরমিচির আর সূর্যের কিরণের সাথে শিশিরকণার মিলন মেলা এক অপূর্ব পরিবেশ তৈরি করেছে। এ যেনো এক স্বপ্নপুরীতে আছি আমি। সামনে একটা খরস্রোতা খাল বয়ে চলেছে । খালের দিকে এগিয়ে যেতেই দেখলাম কেউ একজন খালের পারে বড়শির ছিপ হাতে মাছ ধরায় ব্যস্ত। ব্যপারটা খেয়াল করে সেদিকে এগিয়ে গেলাম।
.
একটু কাছে যেতেই লোকটা আমার দিকে ফিরে তাকালো। আমাকে দেখেই বলে উঠলো..
--আপনি কি পথভুলে গেছেন?
আমি উত্তর দিতে পারলাম না। আমিতো অনেক কিছুই ভুলে গেছি। অনেক কিছুই মনে করতে পারছি না। লোকটা আবারও জিজ্ঞেস করলো.
--একটু দেখবেন ঘড়িতে কয়টা বাজে?
লোকটার প্রশ্নে আমার চোখ হাত ঘড়িতে গেলো। দেখে নিয়ে উত্তর দিলাম ..
--৮ টা বাজে।
লোকটা আবারও মাছ ধরায় মনোযোগ দিলো। অথচ আমার মনে হচ্ছে আমি তাঁর বাড়ি থেকেই বের হলাম অথচ সে আমাকে চিনে না। কিন্ত আমি কিভাবে এলাম এখানে! জিজ্ঞেস করে বসলাম লোকটাকে..
--এখান থেকে মহাসড়ক কতদূর?
লোকটা আবারও আমার দিকে ফিরে তাকালো। কিছুক্ষন আমার দিকে তাকিয়ে থেকে বললো..
--বুঝেছি পথ ভুলে গেছেন। জানতাম সেটা। এখানে তো কেউ আর ইচ্ছে করে আসেনা পথ ভুলেই আসে। তা যাবেন কোথায়?
.
আমি আমার ঠিকানাটা তাকে বলতেই উনি বললেন ..
--কালভার্ট দিয়ে খাল পাড় হয়ে নিবেন। তারপর জঙ্গল সামনে পড়বে। কাঁচা পথে এগোতে থাকবেন জঙ্গলের মাঝ দিয়ে। পথের শেষে মহাসড়ক মিলবে। রাস্তায় আপনার ঠিকানায় অনেক গাড়ি পেয়ে যাবেন।
.
ভদ্রলোকের কথামতো এগোতে লাগলাম। কালভার্ট পাড় হয়ে জঙ্গলের রাস্তা পেয়ে গেলাম। আর জঙ্গল পাড়ি দিয়ে মহাসড়কে পৌঁছে গেলাম। একটা বাসে উঠে নিজের বাড়ির দিকে যেতে লাগলাম। মাথাটা এখনো ব্যথা করছে। এখনো মনে করতে পারছি না রাতে কি ঘটেছিলো। আর কিভাবেই বা আমি এতদূরে এলাম। প্রায় এগারোটার দিকে বাসায় পৌঁছে গেলাম। বাসায় পৌঁছেই গোসল সেরে নিলাম আগে। বাসায় কাউকে দেখতে পেলাম না। সবাই গেছে কোথায়!
.
কি এমন ঘটলো যে রাতের সব ঘটনা আমি ভুলে গেলাম নিমিষেই। মাথায় খুব প্রেসার পড়ছে। বাড়িতেও কেউ নেই। কি ঘটছে কিছুই বুঝতে পারছি না। সবকিছু কেমন যেনো ধোঁয়াশা লাগছে। ঠিক সেই মুহুর্তে নিজের টেবিলের উপরে মোবাইলটা বেজে উঠলো। মেসেজের টোনটা বেজে উঠতেই টেবিলের উপর থেকে দ্রুত ফোনটা হাতে নিলাম। মেসেজটা অপেন করেই দেখলাম সেখানে লিখা "কাল রাতে গার্লফ্রেন্ডের সাথে নিশ্চয়ই সময়টা খুব ভালো কেটেছে। মনে হচ্ছে জীবনটা খুব সুখেই কাটাচ্ছো তুমি। তোমার সব সুখ ধুলোয় মিশিয়ে দেবো আমি। আমি বেচেঁ থাকতে তুমি কখনোই সুখি হবেনা মিস্টার খালিদ। লিজাকে তোমার কাছ থেকে কেড়ে নেবোই। "
.
মেসেজটা দেখেই আতকে উঠলাম আমি। শিহাবের মেসেজ ছিলো। আমাকে হুমকি দিচ্ছে। এরকম হুমকি আগে কখনো দেয়নি। আগে যা ক্ষতি করতো সব না জানিয়েই করতো। ইদানীং হুমকি দিচ্ছে। নিশ্চয়ই আমাকে বিপদে ফেলার বড় কোনো ফাঁদ তৈরি করছে। কিন্ত কাল রাতে আমি লিজার সাথে ছিলাম! কিভাবে সম্ভব! আমার তো কিছুই মনে পড়ছে না। এতকিছু না ভেবে লিজার নাম্বারে ফোন দিলাম। লিজা ফোন রিসিভ করতেই বললাম ..
--কাল রাতে কি ঘটেছিলো লিজা?
--এই ছেলে ফোন রিসিভ করতেই কেউ এভাবে প্রশ্ন করে ভয় পেয়ে গেছিলাম তো।
--ন্যাকামি না করে জলদি বলো কাল রাতে কি ঘটেছিলো। আমি কি তোমার সাথে ছিলাম?
--ওহ খালিদ, তুমি ভুলোমনা জানতাম কিন্ত এতটা! কাল রাতের এতসব স্মরণীয় মধুর স্মৃতি গুলো তুমি এত তাড়াতাড়ি কি করে ভুলতে পারো!
--তুমি কি নিশ্চিত! কাল রাতে আমি তোমার সাথে ছিলাম?
--একি! তোমার কি হয়েছে বলোতো! তোমার ভয়েস এরকম শোনাচ্ছে কেন!
--প্লিজ লিজা যা জিজ্ঞেস করছি তার উত্তর দাও।
--কাল রাতে আমরা একসাথে ফুচকা খেয়েছিলাম। তারপর সিনেমা দেখতে গেছিলাম। আর সবকিছু পালিয়ে করেছি। মাঝরাতে তুমি আমাকে বাড়িতে পৌঁছে দিয়ে নিজেও বাড়িতে চলে গেছিলে।
--দ্যাটস ইট?
--তুমি কি আর এটুকুতেই শান্ত হও নাকি। সিনেমা দেখার সময় তুমি আমাকে কিস করেছিলে। বলোতো কি হয়েছে তোমার! এসব ঘটনা তুমি ভুলে গেলে কি করে? কিছু হয়েছে কি? তুমি কি অসুস্থ?
--না, আসলে ..
--কি হয়েছে আমাকে খুলে বলো।
--মনে হয় আমি রাতে খুব খারাপ একটা দুঃস্বপ্ন দেখেছিলাম তোমাকে নিয়ে।
--হ্যাঁ তা তো দেখবেই। আমাকে নিয়ে তো কম চিন্তা করোনা। তা কি দেখলে?
--কি দেখেছি তার কিছুই মনে করতে পারছি না। মনে হয় আমি তোমাকে হারিয়ে ফেলেছিলাম অথবা কেউ তোমাকে আমার থেকে আলাদা করে দিয়েছিলো।
--এটুকুতেই এত টেনশনে পড়ে গেছো। বাস্তবে হলে কি করবে শুনি!
--বাস্তবে তা ঘটার আগেই আমি নতুন সিদ্ধান্ত নেবো।
--তাই নাকি! কি করবে শুনি!
--আজ আমরা পালিয়ে যাবো লিজা। আমরা দূরে কোথাও চলে যাবো।
--একি! একটা দুঃস্বপ্ন দেখে মাথা খারাপ হয়ে গেলো নাকি! কি বলছো ভেবে বলছো তো!
--শিহাব আমাদের পেছনে লেগেছে। আমাদের পালাতেই হবে এখন। আমি দুইটার দিকে আসছি তোমাকে নিতে। প্রস্তুতি নাও।
--কিন্ত ..
--যদি দুজন একসাথে কাটাতে চাই তাহলে এটাই এখন একমাত্র পথ। কোনো কিন্ত বলার সময় নেই। না পালালে কখনোই আমরা এক হতে পারবো না এটা তুমি ভালো করেই জানো।
.
লিজাকে কোনো কথা বলার সুযোগ না দিয়েই ফোনটা কেটে দিলাম। বাবার মোটর বাইকের চাবিটা চুরি করে বাইক নিয়ে বের হলাম লিজাকে তুলে নেয়ার উদ্দেশ্যে। শিহাব বা আমাদের পরিবারের কেউ টের পাওয়ার আগেই আমাদের চলে যেতে হবে অনেক দূরে।
.
লিজা নির্ধারিত জায়গায় দাঁড়িয়ে ছিলো। তুলে নিয়ে বাইকটার গতি বাড়িয়ে দিলাম। কোনো কথা না বলে শুধু একটাই চিন্তা দূরে কোথাও চলে যেতে হবে। প্রায় দুই ঘন্টা বাইক চালানোর পর হঠাৎ ব্রেক কষে দিলাম। লিজা অবাক হয়ে জিজ্ঞেস করলো..
--কি হলো থামলে কেন! পালাবে না আর!
--আরে দেখছোনা সামনে মামুরা দাঁড়িয়ে আছে।
লিজাও সামনে তাকালো। দূরে পুলিশের লোকেরা বাইক আটকে লাইসেন্স চেক করছে। এই রাস্তা দিয়েই সকালে বাসায় ফিরেছিলাম। বাম পাশে জঙ্গলের ভেতর দিয়ে কাঁচা রাস্তাটা চোখে পড়লো। সোজা সেদিকেই বাইক নামিয়ে দিলাম। লিজা প্রশ্ন করলো..
--একি জঙ্গলে নামলে কেন!
--আমাদের সাথে কোনো লাইসেন্স নেই। নেই কোনো হেলমেট। পালাবার আগেই পুলিশের এইসব ঝামেলায় ফেসে গেলে পরিবারের হাতে ধরা পড়তে বেশি সময় লাগবে না।
.
লিজা আর কথা বাড়ালো না। আমি কাঁচা রাস্তা দিয়ে বাইক টানতে লাগলাম। রাস্তাটা পরিচিত। আর একটু এগোলেই ছবির মতো সুন্দর জায়গাটা নজরে পড়বে। যদিও এই জায়গায় কি করে আমি এসেছিলাম সেটা এখনো মনে করতে পারিনি। লিজা বলে উঠলো তখনই ..
--আমরা বিয়ে করবো কবে?
--আজ না হলে কাল।
--কাল করি। আজ মার্চের ৩০ তারিখ। কাল এপ্রিলের ১ তারিখ। কালকে করলেই ভালো হবে। সবাই এপ্রিল ফুল পালন করবে আর আমরা পালন করবো বিবাহ বার্ষিকী। কি বলো!
--হ্যাঁ ভালো বলেছো।
.
আবারও নিশ্চুপ দুজনে। জঙ্গলের রাস্তা দিয়ে বাইকটা ছুটে চলেছে দুরন্ত গতিতে। একটু এগোতেই কালভার্ট টা চোখে পড়লো আমার। ঠিক তখনই লিজা বলে উঠলো..
--আমার কিন্ত ভীষণ ভয় করছে।
লিজার মুখে কথাটা শুনে বাইক থামিয়ে ফেললাম আমি।"ভয়" শব্দটা শুনতে খুব বিরক্তিকর লাগে।আর লিজা বার বার এইসব কথা বলছে আর আমার মেজাজটা খারাপ করে দিচ্ছে। বাইক হঠাৎ করে থামিয়ে দেয়ায় একটু অবাক হয়েছে লিজা। আবারও বলে উঠলো..
--কি হলো! থামালে কেন? নাকি পেট্রোল শেষ? এজন্যই লোকে বলে যেখানে বাঘের ভয় সেখানেই সন্ধ্যা হয়!
আমি রাগত স্বরে জবাব দিলাম..
--তোমার কি মনে হয়না তুমি একটু বেশি বেশি ভয় পাচ্ছো! আর পেট্রোল ভরপুর আছে। তুমি খামোখা ভয় করোনাতো।
--ভয় পাবোনা তো কি? আমি কখনোই আমার পরিবারের সাথে এমন দুঃসাহস দেখাইনি।
--তো আমি দেখিয়েছিলাম বুঝি?
--মাঝপথে থামলে কেন তাহলে? নাকি ডিসিশন বদলাবে?
--না।তার দরকার নেই। জায়গাটার দিকে তাকিয়ে দেখেছো একবার?
.
আমার প্রশ্নটা শুনে লিজা এবার একটু নড়েচড়ে বসলো।চারদিকে তাকিয়ে দেখতে লাগলো।আমি বললাম ..
--বাইক থেকে নেমে পড়ো।
লিজা চারদিকে তাকাতে তাকাতে বাইক থেকে নেমে গেলো।
--জায়গাটা তো অনেক সুন্দর।আগে থেকেই চিনতে নাকি জায়গাটা?
--না চিনতাম না। অপরিচিত জায়গা তাই বাইক নিয়ে আর সামনে এগোতে চাচ্ছি না। কেননা একটু পরেই সন্ধ্যা ঘনিয়ে আসবে। অন্ধকারে পথ ভুলে যেতে পারি।
--এরকম জায়গায় কেন এলে তাহলে! তুমি সবসময় ভুল সিদ্ধান্ত নাও। একটা কাজও তুমি পূর্ব পরিকল্পনা মাফিক করোনা।
--উপস্থিত বুদ্ধি সবচেয়ে ভালো উপায়।
--হয়েছে হয়েছে। এখন কি তুমি রাতটা এখানেই কাটাতে চাইছো?
.
লিজার মুখে বিরক্তির ছাপ দেখে হ্যাঁ বলার সাহস হলোনা আমার।বাইক থেকে নেমে আমিও চারদিকে তাকাতে লাগলাম।মহাসড়ক থেকে হঠাৎ করে একটা চোরা রাস্তা দিয়ে জঙ্গলে ঢুকে পড়লাম।এরপর জঙ্গলের ছোট রাস্তা দিয়ে এই পথে এসে গেলাম।রাস্তাও চিনিনা।আর উদ্দেশ্য জানা নেই।তবে নিশ্চয়ই দূরে কোথাও যেতে হবে আমাদের।বাড়ি থেকে পালানোর পর নিশ্চয়ই পরিবারের লোকজন আগে আশেপাশের কাছের পরিচিত জায়গাগুলোতেই খুঁজবে।তাই আমাদের দূরের অপরিচিত জায়গায় যেতে হবে।সেই উদ্দেশ্যেই ছুটে চলেছি দুজনে।দুজনের প্রেম অনেকদিনের। শত বাধাবিপত্তি ছিলো এই প্রেমকে ঘিরে।দুই পরিবারের কেউই মেনে নেবেনা আমাদের ভালোবাসা।পরিবার থেকে প্রেম মেনে না নিলে সচরাচর প্রেমিক যুগলেরা যে দুঃসাহসিক পথ অবলম্বন করে সেই থিওরি আমরাও এখন প্রয়োগ করছি।অতপর অনেকটা পথ পাড়ি দেয়ার পর এখন আমাদের একটু বিশ্রাম নেয়ার পালা।
.
এখন আমাদের পেছনে ঘন জঙ্গল।আশেপাশে বড় বড় গাছগুলো মাথা উচুঁ করে দাড়িয়ে আছে।এরকম জঙ্গলে বাঘ ভাল্লুকের ভয় নেই। তবে অন্ধকারে ভয়টা এমনিতেই এসে যায়।পেছনের জঙ্গল থেকে চোখ সরিয়ে লিজা সামনের রাস্তায় তাকালো।সামনে একটা খরস্রোতা ছোট খাল বয়ে চলেছে।নিশ্চয়ই পাহাড়ী কোনো ঝড়নার পানি এই খাল দিয়ে বয়ে চলে যায়।বর্ষা মৌসুম না হয়েও খাল পানিতে টইটম্বুর। তবে খাল পার হওয়ার জন্য খালের উপর সুন্দর একটা কালভার্ট দেখা যাচ্ছে।তার ওপাশে উচুঁ উচুঁ পর্বত গুলো দাড়িয়ে আছে।প্রকৃতির এক অপূর্ব লীলাভূমির কোল ঘেঁষে সৌন্দর্য অবলোকন করছি আমরা।লিজা অবাক হয়ে বলে উঠলো ..
--এটাতো দেখি স্বপ্নপুরী।তুমি নিশ্চয়ই প্ল্যান করেই এখানে আমাকে এনেছো।জায়গাটা কল্পনার চেয়েও একটু বেশি সুন্দর।
আমার চোখের দিকে তাকালো লিজা। বললো..
--সত্যি করে বলো তো, এটা তোমার পূর্ব পরিকল্পনা ছিলোনা?
যদিও জায়গাটার ব্যপারে আমি একদমই অবগত নই তবুও

লিজাকে ইমপ্রেস করার জন্য মিথ্যা ক্রেডিট নিয়ে একটা গর্বসূচক হাসি দিয়ে বললাম ..
--তোমার প্রেমিককে এখনো চিনতে পারলে না লিজা? আমি কতটা রোমান্টিক তুমি আজও বুঝলে না।
--হাহাহা। জানতাম জানটুস। কিন্ত জানোতো, এত কিছু মনে হয় সুখের হবেনা।আমার খুব ভয় করছে এখনো।টেনশনে মাথা ঘুরছে।
--পাগল মেয়ে, ওইসব ভুলে যাও এখন। মনে করো পৃথিবী তে এখন শুধু তুমি আর আমি আছি আর আছে এই প্রাকৃতিক সৌন্দর্য। আমাদের এখন উপভোগ করার সময়। টেনশনে মাথা ঘুরাবার সময় নয়।
.
কথাটা বলেই দুজনে দুজনার হাত ধরে কালভার্ট টার দিকে এগিয়ে যেতে লাগলাম।কালভার্ট এর উপরে গিয়ে কংক্রিটের রেলিং এ হেলান দিলাম আমি।লিজা আমার হাত ধরে পাশে দাড়ালো।সন্ধ্যা ঘনিয়ে আসছে।সূর্য অস্ত যাওয়ার জন্য প্রস্তুত হচ্ছে।লিজা প্রশ্ন করলো..
--কি ঠিক করলে? এই নির্জন জায়গাতেই রাত কাটাবে নাকি?
--ভয় পাচ্ছো কেন? আমি সব পরিকল্পনা করে এসেছি।
--ভয় পাবোনা! এইসব নির্জন জায়গা দিনের বেলা সুন্দর লাগলেও রাতের বেলা ভয়ংকর হয়ে উঠবে না তার কি গেরান্টি আছে!
.
লিজার কথাটা শুনে আসলেই একটু চিন্তা হতে লাগলো। কথাটা ফেলে দেয়ার মতো নয়।বিশেষ করে সন্ধ্যা হতে হতেই খুব খারাপ পরিস্থিতির তৈরি হয়ে যাবে। কিভাবে কাটাবো রাতটা জানিনা। যদিও সময়টা খুব খারাপ যাবে। তবুও ঘড়িতে সময়টা দেখে নেয়া উচিৎ এখন কয়টা বাজে।

পর্ব - ১ | পর্ব - ২ | পর্ব - ৩ | পর্ব - ৪ | পর্ব - ৫ | এক পাতায় সম্পূর্ণ

0 Response to "দ্যা ব্যাড ইভিনিং | এক পাতায় সম্পূর্ণ"

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন

মোট পৃষ্ঠাদর্শন