Ads Golpo.Best Kobita.Best

search

দ্যা ব্যাড ইভিনিং | খালিদ হাসান | পর্ব - ৫



মুল গল্পের
 নামঃ
দ্যা ব্যাড ইভিনিং | খালিদ হাসান
মুল বইয়ের
নামঃ
অজানা
মূলসূত্রঃFacebook.com

পর্ব - ১ | পর্ব - ২ | পর্ব - ৩ | পর্ব - ৪ | পর্ব - ৫ | এক পাতায় সম্পূর্ণ

সোজা ওয়াশরুমে চলে গিয়ে হাতমুখ ধুয়ে নিলাম। বের হওয়ার সময় খেয়াল করলাম আমার শার্ট টা শুকাতে দেয়া। প্রফেসরের শার্ট টা খুলে নিজের শার্ট টা গায়ে পড়ে নিলাম।
.
ঘড়িতে তাকিয়ে দেখতে লাগলাম সময়টা। আমি এখনো অতীতে রয়েছি। ঘন্টার কাঁটা একটা ছুই ছুই করছে। তার মানে এখন ১ তারিখ। অর্থাৎ ১লা এপ্রিল। এখন খুজেঁ বের করতে হবে কিভাবে এই লুপকে থামিয়ে দেয়া যায়। কোনো না কোনো উপায় তো নিশ্চয়ই আছে।
.
পুরো বাড়িটা হন্য হয়ে খুঁজতে লাগলাম প্রফেসর ভিক্টর কোথায় গবেষণার কাজ করে। এমন কিছুই খুজেঁ পেলাম না টাইম মেশিনের ব্যপারে। বাড়ির ভেতরে কোনো ল্যাব ও পেলাম না যেখানে গবেষণা করা হয়। বিষয়টা ভাবনায় ফেলে দিলো আমাকে। তাহলে এই সমস্যার সমাধান এখন কিভাবে করবো আমি! সারাজীবন টাইম ট্রাভেল করে অতীতে বিচরণ করে কাটিয়ে দেয়ার সুযোগ নেই আমার। তাঁর উপর লিজা খুন হয়েছে, প্রফেসর ভিক্টর খুন হয়েছে। অনেক জটিল সমস্যা তৈরি হয়ে গেছে। সব কিছুকে একটা সমাধানে নিয়ে আসতে হবে। এমন কিছু করতে হবে যার মাধ্যমে সব সমস্যার সমাধান হয়ে যাবে। সবকিছু পূর্বের মতো হয়ে যাবে। মনে হবে যেনো কোনোকিছুই ঘটেনি। কিন্ত কিভাবে তা সম্ভব! আমি জানিনা আমি কি করবো কিন্ত আমাকে পারতেই হবে।
.
পরক্ষণেই একটা বুদ্ধি মাথায় এলো। শুরু থেকেই সব ঘটনা পাল্টে দেয়া যাবে খুব সুন্দরভাবে। দৌড়ে বাড়ির বাইরে বের হলাম মেইন দরজা খুলে। দৌড়ে যেতে লাগলাম প্রফেসরের বেডরুমের জানালার দিকে। প্রফেসরের লাশের স্তুপ থেকে সদ্য খুন করা টাটকা লাশটা উঠিয়ে নিলাম কাঁধে। আবার বাড়ির ভেতরে চলে গেলাম। লাশটা লিফটের সামনে রেখে আবারও বাড়ির বাইরে চলে গেলাম। কালভার্টের দিকে দৌড়াতে গিয়ে চোখ গেলো খালপাড়ে ভেলাটার দিকে। অন্ধকার আর কুয়াশায় আবছা দেখলাম কিছু একটা ভেসে আসছে ভেলাটার দিকে। কাছে যেতেই বুঝতে পারলাম একটা লাশ। ভেলার কাছাকাছি চলে গেলাম।
.
পানির কাছাকাছি গিয়েই দেখলাম রাত আটটায় খুন হওয়া লিজার টাটকা লাশটা ভেলার পাশে উপুড় হয়ে ভাসছে। চুলগুলো ছড়িয়ে আছে। ফার্স্ট খালিদও ভাসতে ভাসতে এই জায়গায় এসেছিলো আর লিজার লাশটাও এখন ভাসতে ভাসতে এখানে এসে আটকে গেছে। অথচ লিজাকে আমি অনেক দূরে ফেলেছিলাম তবুও স্রোতের ধাক্কার কারণে তাঁর লাশটা এদিকেই এসে গেছে। আমিতো ভেবেছিলাম সেটা কালভার্টের নিচেই পড়ে আছে তাই সেদিকেই যাচ্ছিলাম। ভালোই হলো এখানে পেয়ে। লাশটা পানি থেকে উঠিয়ে কাঁধে উঠিয়ে নিলাম। এটাও নিয়ে গিয়ে লিফটের পাশে রেখে দিলাম।
.
সুইচ টিপে লিফটের দরজা অন করলাম। লাশ দুটোকে লিফটের ভেতরে ঢুকিয়ে নিজেও ঢুকে গেলাম ভেতরে। দরজা বন্ধ হয়ে গেলো খপ করেই। লেডি ভয়েসটা টাইম সেট করতে বললেই বিকাল ৪ টা সেট করে দিলাম।
কারণ এবার আরো আগে যেতে হবে। খালিদ এবং লিজা যেনো এসেই বুঝতে পারে এই স্থানে তাদের বিপদ রয়েছে সেই ব্যবস্থা করতে হবে। "start" বাটনে ক্লিক করতেই লিফট কাঁপাকাঁপিছ শুরু হলো। এরপর লিফটের দরজা খুলতেই লাশদুটো ঠেলে বাইরে পাঠিয়ে দিলাম। আমি বের হতেই লিফটের দরজা বন্ধ হয়ে গেলো।
ঘড়িতে সময় বিকেল ৪ টা। আমি তাহলে রাত ১ টা থেকে বিকেল ৪ টায় এলাম আবারও। ৫ টার আগেই কাজ শেষ করতে হবে কেননা ৫ টার সময় আমি একবার ট্রাভেল করেছিলাম। আর কোনো সত্ত্বার মুখোমুখি হয়ে ঝামেলা পাকাতে চাচ্ছিনা এখন।
.
লিজার লাশটা কাঁধে তুলে নিয়ে কালভার্টের দিকে যেতে লাগলাম। মেইন দরজা খুলে সোজা কালভার্টের প্রান্তের দিকে যেতে লাগলাম। লিজার লাশটা রাস্তার পাশে ফেলতে হবে এবার। ফার্স্ট খালিদ আর লিজা এসেই যেনো লাশটা দেখতে পারে। আর দেখেই যেনো বুঝতে পারে এখানে থাকাটা তাদের জন্য নিরাপদ নয়। তাহলেই তাঁরা এই জায়গা থেকে সরে যাবে আর ঘটনাগুলো পরিবর্তন হয়ে যাবে।
.
রাস্তার পাশে দাঁড়িয়ে লাশটা কাঁধ থেকে ফেলতেই সেটা রাস্তার নিচে গড়িয়ে পড়তে লাগলো। না লাশটাকে তো নিচে ফেলতে দেয়া যাবেনা। লাশটা গড়িয়ে নিচে পড়ে একদম খালেপাড়ের ঝোপের আড়ালে চলে গেছে।
ঝোপের দিকে এগিয়ে গেলাম আমিও। লাশটা তুলতে হবে। কিন্ত ঝোপের আড়ালে উকি দিয়েই আমার চোখ ছানাবড়া হয়ে গেলো। লিজার লাশ দিয়ে জায়গাটা পরিপূর্ণ হয়ে আছে আর সেগুলোর উপর মাছি ভন ভন করছে। ভয়ে আঁতকে উঠলাম আমি। এটাই বুঝি ঘটবার বাকি ছিলো। রাত ৮ টায় খুন হওয়া লাশটা আমি টাইম ট্রাভেল করে অতীতে অর্থাৎ বিকেল ৪ টায় এনেছি। আর সেজন্যই বিকেল ৫ টায় ট্রাভেল করার পর আমি এই লাশের স্তুপ দেখতে পেয়েছিলাম সেইসাথে গন্ধ। এজন্য রাত ৮ টায় অর্থাৎ লিজার মৃত্যুর আগেই তাঁর লাশ দেখতে পেয়েছিলাম তখন। কি ঘটছে এসব! যা পরিবর্তন করতে যাচ্ছি সেটাই যেনো পূর্বের ঘটিত ঘটনা হয়ে যাচ্ছে।
.
লাশটা ফেলে রেখেই বাড়ির দিকে দৌড় দিলাম। বাড়িতে ঢুকেই প্রফেসরের লাশটা কাঁধে নিয়ে বাড়ির বাইরে বের হলাম। বেডরুমের জানালার দিকে গিয়ে আর একটু দূরে তাকাতেই দেখলাম প্রফেসরের অনেকগুলো লাশের স্তুপ। লাশটা কাঁধ থেকে সেই স্তুপে ফেলে দিলাম। এখানেও একই ঘটনা খেয়াল করলাম। প্রফেসরের খুন হয়েছিল রাত বারোটার দিকে আর সেই লাশ টাইম ট্রাভেল করে বিকেল ৪ টায় অর্থাৎ অতীতে নিয়ে এসেছি। আর তাই রাতে প্রফেসরকে খুন করার আগেই আমি এখানে স্তুপ করা লাশগুলোর কটু গন্ধ পেয়েছিলাম। যা পরিবর্তন করতে চেয়েছিলাম তা করতে গিয়েই বুঝলাম সেটা পূর্বেরই ঘটনা। আমি যে একই ঘটনারই বার বার পুনরাবৃত্তি করছি তা এখানকার লাশের স্তুপ দেখলেই বুঝা যাচ্ছে। প্রতিবার খুন হওয়া লাশগুলো আমি টাইম ট্রাভেল করে বিকেল ৪ টায় নিয়ে এসে এখানে স্তুপ করেছি।
.
হাত ঘড়িতে সময়টা দেখলাম। একটু পরেই ৫ টা বেজে যাবে। তখন আমার অতীত সত্ত্বা ট্রাভেল করে এই সময়ে আসবে। তাঁর আগেই আমাকে টাইম মেশিনটা ধ্বংস করতে হবে। এই ঘটনাগুলো পরিবর্তন যোগ্য নয়। এই ঘটনাগুলোকে চিরতরে থামিয়ে দিতে হবে।
.
আচমকা বেডরুমের জানালায় চোখ যেতেই দেখলাম জানালাটা ভালো আছে। সচ্ছ কাঁচের ভেতর দিয়ে ভেতরে তাকাতেই দেখলাম প্রফেসর ভিক্টর ঘুমে বিভর হয়ে আছেন। অথচ এই সময়ে সে জানালা দিয়ে বাইরে তাকালে দেখতে পেতো তাঁরই লাশের স্তুপ। আজ রাতে তিনি খুন হবেন তারপর সেই লাশ ট্রাভেল করে আবারও এই সময়ে নিয়ে এসে স্তুপ করা হবে এখানেই। কি ঘটছে এসব! না, এইসব ঘটনাকে থামাতেই হবে।
.
ভাবতে ভাবতেই মেইন দরজার দিকে গেলাম। বাড়ির ভেতরে ঢুকে লিফটের দিকে অগ্রসর হলাম। টাইম মেশিনটা ধ্বংস করে দিলে আদৌ কি কোনো সমস্যার সমাধান হবে! নাকি উল্টো বড় সমস্যার সৃষ্টি করবে! আমি জানিনা কি ঘটবে কিন্ত একটা শেষ চেষ্টা করে দেখা উচিৎ।
.
সুইচে চাপ দিয়ে লিফটের দরজাটা খুলে সোজা ভিতরে ঢুকে গেলাম। ঢুকতেই লিফটের দরজাটা খপ করে বন্ধ হয়ে গেলো আবার। পিঠে কাটা জায়গাটা থেকে খুব ব্যাথা অনুভব করছি এখনো। পাত্তা দিলাম না। লেডি ভয়েসটা বলে উঠলো..
"সেট ইওর টাইম"
.
সেটারও কোনো পাত্তা দিলাম না। মনিটরে টাইম সেট করার নির্দেশ দিচ্ছে। কীবোর্ডের দিকে তাকালাম। বাটন গুলো সুক্ষ্মভাবে খেয়াল করতে লাগলাম। নাম্বার বাটনগুলোর বামপাশে স্টার্ট বাটন আর ডানপাশে শুধু একটা লাল বাটন। বাটনে কোনো নাম উল্লেখ করা নেই। তাহলে এই বাটনের কাজ কি ছিলো!
.
চারকোণা ঘরটার চতুরদিকে তাকাতে লাগলাম। একটা ছোট্ট ব্রিফকেজ চোখে পড়লো এবার। এক কোণায় পড়ে আছে সেটা। নিশ্চয়ই গুরুত্বপূর্ণ কিছু একটা থাকতে পারে ভেতরে। এর আগে টাইম ট্রাভেল করার সময় এতটা উদ্বিগ্ন ছিলাম কোনোকিছু ভালোভাবে খেয়াল করা হয়নি। আমার সবকিছু খেয়াল করা উচিৎ ছিলো। ব্রিফকেসটা হাতে তুলে নিতেই কিছু কাগজ নিচে পড়ে গেলো। ব্রিফকেসটা খোলাই পড়ে ছিলো তা খেয়াল করিনি। হাতল ধরে তুলতেই মুখ খুলে কাগজগুলো পড়ে গেছে। একটা কাগজে চোখ যেতেই তার উপর চোখ দুটো আটকে গেলো আমার।
.
টাইম মেশিনের ব্যবহার বিধি উল্লেখ করা হয়েছে সেখানে। রঙ্গিন কাগজটা তুলে নিতেই দেখলাম সেখানে কীবোর্ড এর বাটনগুলোর ইউজার ম্যানুয়াল দেয়া হয়েছে। চোখ বুলাতে লাগলাম লিখাগুলোর উপর।
নাম্বার বাটন গুলোতে নির্দেশ করে বলা হয়েছে, "নাম্বার কী গুলো প্রেস করে নির্দিষ্ট সময় নির্ধারণ করে নিন। অবশ্যই সেই সময় নির্ধারণ করুন যে সময়ে আপনি যেতে চান।"
স্টার্ট বাটন নির্দেশ করে লেখা হয়েছে "সময় নির্ধারণ করার পর স্ক্রিনে তাকিয়ে দেখুন সময় ঠিক আছে কিনা। এরপর স্টার্ট বাটনে ক্লিক করুন। আপনার ভ্রমণ শুরু হয়ে যাবে।"
এবার লাল বাটনের ব্যপারটা চোখে পড়লো আমার। সেখানে নির্দেশ করে লেখা হয়েছে "ভ্রমণ শেষ হলে টাইম মেশিনে ফিরে আসুন। লাল বাটনে প্রেস করুন এবং বর্তমান সময়ে ফিরে আসুন"
.
ব্যপারটা খেয়াল করে মনে মনে খুশি হলাম আমি। অবশেষে মুক্তির পথ পেয়ে গেছি। বর্তমানে ফিরতে হবে এই বাটনটা ব্যবহার করেই। কত সহজ একটা ব্যপার ছিলো অথচ আমি চিন্তায় হয়রান হয়ে যাচ্ছিলাম। যাইহোক কাজটা শুরু করি। ব্রিফকেসে কাগজটা রেখে দিয়ে কীবোর্ডের দিকে এগিয়ে গেলাম। আঙ্গুল চালানোর জন্য আর সময় নিলাম না। আঙ্গুলের ডগা সোজা চলে গেলো লাল বাটনে।
.
বাটনে প্রেস করার সাথে সাথে লিফট কাঁপাকাঁপি শুরু করে দিলো। বুঝে গেলাম আমি বর্তমান সময়ে ফিরে যাচ্ছি এবার। না জানি কত সময় টাইম ট্রাভেল করার পর অবশেষে বর্তমান সময়ে যাচ্ছি আমি। একটু পরেই কাঁপাকাঁপি থেমে যেতেই আমি বের হওয়ার জন্য প্রস্তুতি নিলাম।
.
অবশেষে বর্তমানে আসা গেলো। বিষয়টা দুঃস্বপ্নের চেয়েও ভয়ংকর ছিলো।
কিন্ত একটু পরেই খেয়াল করলাম লিফটের দরজা খুলছে না। ঘাবড়ে গেলাম একটু। সমস্যা কি! এখন কি বর্তমানে এসেও ঝামেলা পোহাতে হবে নাকি!
.
বীপ বীপ শব্দ কানে এলো। সেটা শুনেই চোখটা সোজা কীবোর্ডের উপরের স্ক্রিনে চলে গেলো। একটা লেখা ভেসে আছে। সেটা ভাসছে আবার ভ্যানিস হচ্ছে। বীপ বীপ শব্দটা লেখাটার জন্যই আসছে। লেখাটা পড়ে ফেললাম। সেখানে লেখা ইংরেজিতে "Error Fail Error"।
.
ফিমেল ভয়েসটা বলে উঠলো এবার "You lost your time. Try agin another time."
.
হোয়াট! মজা করছে নাকি! সময় হারিয়ে গেছে মানে! আবার ট্রাই করা উচিৎ। শেষে কিনা একটা লাল বাটনই জিন্দেগীর ভেতরে লাল বাতি জ্বালিয়ে দিচ্ছে। লাল বাটনটাতে আবারও প্রেস করলাম।
.
একই ঘটনা পুনরায় ঘটলো। লিফট কাঁপাকাঁপি করে থেমে গিয়ে আবারও "Error Fail Error" দেখাচ্ছে। লেডি ভয়েসটা তখনই আবারও বলে উঠলো
"You lost your time. Try agin another time."
চিৎকার করে বলে উঠলাম
--আমি জানি একই কথা তুমি বারবার বলবে।
.
লিফটের দরজা খুলার চেষ্টা করলাম। নাহ ভেতর থেকে দরজা খোলার কোনো সিস্টেম নেই। দরজা খুলতে হলে টাইম ট্রাভেল শুরু করতে হবে। কিন্ত না আর টাইম ট্রাভেল করা যাবেনা। এমনিতেই একটা লুপের ভেতরে ঘুরছি আমি। এর থেকে বের হতে হবে আমাকে।
.
ব্রীফকেসের ভেতরে আবারও চোখদুটো গেলো আমার। উপায় তো খুজেঁ বের করতেই হবে আমাকে। আগের রঙ্গিন কাগজটা বের করে ফেললাম। প্রথম পাতায় টাইম মেশিনের ব্যবহার দেয়া। কাগজটা উল্টিয়ে পেছনের অংশে চোখ দিতেই দেখলাম উপরে বড় করে লেখা "সময় ভ্রমনের নিয়মাবলী"। লেখাগুলো পয়েন্ট আকারে দেয়া। এগুলো পড়লে হয়তোবা কোনো উপায় বের করা যাবে। পড়তে লাগলাম সেগুলো।
.
১. সময় ভ্রমণে যতটা সম্ভব কম সময় নিন। দ্রুত টাইম মেশিনে ফিরে এসে লাল বাটন প্রেস করে বর্তমান সময়ে ফিরে আসুন।
২. যদি সময় বেশি নেন তাহলে শুধু অবলোকন করুন। প্রভাব দেখানোর চেষ্টা করবেন না। হিতে বীপ‌রিত হতে পারে।
৩. প্রকৃতি তার আপন নিয়মে চলছে আর আপনি সেখানে ভিন্ন সময় থেকে আসা একজন আগন্তুক। সেই সময়ে আপনি অস্তিত্বহীন। তাই প্রভাব না দেখানোই বুদ্ধিমানের কাজ। প্রকৃতির নিয়ম ভঙ্গো হলে আপনার সাথেও প্রকৃতি নতুন খেলা খেলতে পারে।
৪. আর যাই করুন নিজের সত্ত্বা থেকে দূরে থাকুন। এটাই সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ কাজ। নিজের অতীত বা ভবিষ্যৎ সত্ত্বা থেকে দূরত্ব বজায় রাখুন। তা না করলে সবচেয়ে বড় ক্ষতিটা আপনারই হবে।
৫. শুধুমাত্র একবার ভ্রমণ করে বর্তমানে ফিরে আসুন এটা খুব সহজ একটা কাজ। তাহলে ভ্রমণের নিয়মকানুন গুলো সুশৃঙ্খল থাকবে । ভুলেও জাম্প করবেন না। অর্থাৎ বর্তমানে ফিরে না এসে নতুন ভ্রমণ শুরু করবেন না। এতে লুপের সৃষ্টি হতে পারে।
এবার জেনে নেয়া যাক লুপের সৃষ্টি হলে কি ঘটতে পারে। যদিও বিষয়টা পরীক্ষা করার কোনো উপায় নেই তবুও আন্দাজ করে বলা যায় সময় ভ্রমণে তৈরি হওয়া লুপ সময়ের মধ্যে একটা বিশৃঙ্খলা সৃষ্টি করে দেয়। সময় নিজে থেকেই যখন বুঝতে পারে একটা বিশৃঙ্খলা সৃষ্টি হয়েছে তখন নিজে থেকেই সে এটাকে লুপ বানিয়ে একই স্থানে সীমাবদ্ধ করে দেয়। এজন্য আপনি ভিন্ন ভিন্ন নিজের অতীত ভবিষ্যৎ সত্ত্বা গুলোর সাথে একই সময়ের গন্ডিতে আটকে যেতে পারেন। এর ফলে আপনার অনুভূতি কি হবে তা জানা নেই কারো। আর আপনার সাথে কী ঘটবে সেটাও আন্দাজ করার মতো নয়। তবে এটুকু বলা যায় আপনি যখন জানতে পারবেন আপনি একই সময়ে বার বার বিচরণ করছেন তখন এটা নরক যন্ত্রণার মতোই যন্ত্রনাদায়ক হয়ে উঠবে। আর আপনি বার বার চেষ্টা করতে থাকবেন এর থেকে বের হয়ে আসার জন্য। আদৌ তা সম্ভব কিনা জানা নেই। বার বার ভ্রমণের ফলে টাইম মেশিন অকেজো হয়ে যেতে পারে। আপনার স্মৃতি শক্তি নষ্ট হয়ে যেতে পারে। শারীরিক পরিবর্তন হতে পারে। আপনি মারাও যেতে পারেন। তবে আপনার সতর্কতা অবলম্বন করা উচিৎ যাতে এমনটা আপনার সাথে না ঘটে। এটা আসলেই যন্ত্রনাদায়ক। তাই সময়ের নিয়ম ভঙ্গের চেষ্টা না করাই উত্তম এতে প্রকৃতির নিয়ম ভঙ্গো হয়। আপনার উচিৎ হবে শুধু নিজেকে আড়াল করে বিচরণ করা। স্মৃতিময় সময়গুলোতে ঘুরে আসতে পারেন অথবা পারেন শত্রুর গতিবিধি জেনে আসতে। তবে অবশ্যই প্রভাব দেখানোর চেষ্টা করা উচিৎ হবেনা। সেটার দরকার হলে বর্তমানে ফিরে এসে করুন। আপনার যাত্রা শুভ হোক।
.
পুরো লেখাটা পড়ার পর মাথাটা ঘুরে গেলো আমার। আমি প্রতিটা নিয়ম ভঙ্গো করেছি আর আমার সাথে সেটাই ঘটছে। আমি সময়ের বলয়ে আবদ্ধ হয়ে গেছি। সময় নিয়ে খেলতে গেছিলাম এখন সময় আমাকে নিয়ে খেলছে। আবদ্ধ লিফটের ভেতরে চিৎকার করে উঠলাম আমি সেই চিৎকারের শব্দ আমারই কানে জোড়ালো হয়ে প্রতিধ্বনি হলো। জীবনটাকে নরকে ফেলে দেয়ার জন্য নিশ্চয়ই একটা টাইম মেশিনই যথেষ্ট ছিলো। সব রাগ টাইম মেশিনের উপর গিয়ে ঠেকেছে। এটা কোনো টাইম মেশিন নয়। এটা একটা নরকের দরজা। সব নষ্টের মূলে এই বস্তুটা। এই নারকীয় বস্তুটাকে ধ্বংস করে দিতে হবে।
.
ব্রীফকেসটা হাতে নিয়ে সজোরে কীবোর্ডের উপরে আঘাত করতে লাগলাম। আর গালাগালি দিতে লাগলাম। মাথা প্রচন্ড খারাপ হয়ে গেছে। দুই তিনবার আঘাত করার সাথে সাথে লিফট কাঁপাকাঁপি শুরু হয়ে গেলো। এত জোরে কাঁপতে লাগলো যে আমি ধাক্কা খেয়ে দূরে পড়লাম। লোহার দেয়ালে ধাক্কা খেয়ে পড়ে গিয়েই সেন্সলেস হয়ে গেলাম।
.
.
জ্ঞান ফিরতেই মাথায় প্রচন্ড ব্যথা অনুভব হলো। আমার সাথে কি ঘটেছে তা মনে করার চেষ্টা করলাম। কিছুই মনে করতে পারছি না। মনে হলো খুব খারাপ একটা দুঃস্বপ্ন দেখছিলাম এতক্ষণ। কিন্ত স্বপ্নে কি দেখেছি কিছুই মনে করতে পারলাম না। চোখটা সামনে যেতেই দেখলাম একটা চারকোণা আবদ্ধ ঘরে পড়ে আছি আমি। দরজাটা খোলা রয়েছে। উঠে দাঁড়ালাম আমি। মাথাটা ভীষণ ব্যথা করছে। দরজা দিয়ে বের হতেই খপ করে সেটা আবারও বন্ধ হয়ে গেলো। পেছনে ঘুরে তাকাতেই দেখলাম একটা লিফট। এখানে আমি কিভাবে এলাম কিছুই মনে করতে পারলাম না। বাড়িটার দিকে তাকিয়ে দেখলাম কিছুক্ষণ। কোথায় আছি আমি কিছুই বুঝতে পারছি না। সদর দরজার দিকে এগিয়ে যেতে লাগলাম। দরজাটা খোলাই রয়েছে দেখলাম। বের হয়ে গেলাম বাইরে। বাড়ির সামনে জঙ্গল ঝোপঝাড়ে পরিপূর্ণ। পাখ পাখালির কিচিরমিচির আর সূর্যের কিরণের সাথে শিশিরকণার মিলন মেলা এক অপূর্ব পরিবেশ তৈরি করেছে। এ যেনো এক স্বপ্নপুরীতে আছি আমি। সামনে একটা খরস্রোতা খাল বয়ে চলেছে । খালের দিকে এগিয়ে যেতেই দেখলাম কেউ একজন খালের পারে বড়শির ছিপ হাতে মাছ ধরায় ব্যস্ত। ব্যপারটা খেয়াল করে সেদিকে এগিয়ে গেলাম।
.
একটু কাছে যেতেই লোকটা আমার দিকে ফিরে তাকালো। আমাকে দেখেই বলে উঠলো..
--আপনি কি পথভুলে গেছেন?
আমি উত্তর দিতে পারলাম না। আমিতো অনেক কিছুই ভুলে গেছি। অনেক কিছুই মনে করতে পারছি না। লোকটা আবারও জিজ্ঞেস করলো.
--একটু দেখবেন ঘড়িতে কয়টা বাজে?
লোকটার প্রশ্নে আমার চোখ হাত ঘড়িতে গেলো। দেখে নিয়ে উত্তর দিলাম ..
--৮ টা বাজে।
লোকটা আবারও মাছ ধরায় মনোযোগ দিলো। অথচ আমার মনে হচ্ছে আমি তাঁর বাড়ি থেকেই বের হলাম অথচ সে আমাকে চিনে না। কিন্ত আমি কিভাবে এলাম এখানে! জিজ্ঞেস করে বসলাম লোকটাকে..
--এখান থেকে মহাসড়ক কতদূর?
লোকটা আবারও আমার দিকে ফিরে তাকালো। কিছুক্ষন আমার দিকে তাকিয়ে থেকে বললো..
--বুঝেছি পথ ভুলে গেছেন। জানতাম সেটা। এখানে তো কেউ আর ইচ্ছে করে আসেনা পথ ভুলেই আসে। তা যাবেন কোথায়?
.
আমি আমার ঠিকানাটা তাকে বলতেই উনি বললেন ..
--কালভার্ট দিয়ে খাল পাড় হয়ে নিবেন। তারপর জঙ্গল সামনে পড়বে। কাঁচা পথে এগোতে থাকবেন জঙ্গলের মাঝ দিয়ে। পথের শেষে মহাসড়ক মিলবে। রাস্তায় আপনার ঠিকানায় অনেক গাড়ি পেয়ে যাবেন।
.
ভদ্রলোকের কথামতো এগোতে লাগলাম। কালভার্ট পাড় হয়ে জঙ্গলের রাস্তা পেয়ে গেলাম। আর জঙ্গল পাড়ি দিয়ে মহাসড়কে পৌঁছে গেলাম। একটা বাসে উঠে নিজের বাড়ির দিকে যেতে লাগলাম। মাথাটা এখনো ব্যথা করছে। এখনো মনে করতে পারছি না রাতে কি ঘটেছিলো। আর কিভাবেই বা আমি এতদূরে এলাম। প্রায় এগারোটার দিকে বাসায় পৌঁছে গেলাম। বাসায় পৌঁছেই গোসল সেরে নিলাম আগে। বাসায় কাউকে দেখতে পেলাম না। সবাই গেছে কোথায়!
.
কি এমন ঘটলো যে রাতের সব ঘটনা আমি ভুলে গেলাম নিমিষেই। মাথায় খুব প্রেসার পড়ছে। বাড়িতেও কেউ নেই। কি ঘটছে কিছুই বুঝতে পারছি না। সবকিছু কেমন যেনো ধোঁয়াশা লাগছে। ঠিক সেই মুহুর্তে নিজের টেবিলের উপরে মোবাইলটা বেজে উঠলো। মেসেজের টোনটা বেজে উঠতেই টেবিলের উপর থেকে দ্রুত ফোনটা হাতে নিলাম। মেসেজটা অপেন করেই দেখলাম সেখানে লিখা "কাল রাতে গার্লফ্রেন্ডের সাথে নিশ্চয়ই সময়টা খুব ভালো কেটেছে। মনে হচ্ছে জীবনটা খুব সুখেই কাটাচ্ছো তুমি। তোমার সব সুখ ধুলোয় মিশিয়ে দেবো আমি। আমি বেচেঁ থাকতে তুমি কখনোই সুখি হবেনা মিস্টার খালিদ। লিজাকে তোমার কাছ থেকে কেড়ে নেবোই। "
.
মেসেজটা দেখেই আতকে উঠলাম আমি। শিহাবের মেসেজ ছিলো। আমাকে হুমকি দিচ্ছে। এরকম হুমকি আগে কখনো দেয়নি। আগে যা ক্ষতি করতো সব না জানিয়েই করতো। ইদানীং হুমকি দিচ্ছে। নিশ্চয়ই আমাকে বিপদে ফেলার বড় কোনো ফাঁদ তৈরি করছে। কিন্ত কাল রাতে আমি লিজার সাথে ছিলাম! কিভাবে সম্ভব! আমার তো কিছুই মনে পড়ছে না। এতকিছু না ভেবে লিজার নাম্বারে ফোন দিলাম। লিজা ফোন রিসিভ করতেই বললাম ..
--কাল রাতে কি ঘটেছিলো লিজা?
--এই ছেলে ফোন রিসিভ করতেই কেউ এভাবে প্রশ্ন করে ভয় পেয়ে গেছিলাম তো।
--ন্যাকামি না করে জলদি বলো কাল রাতে কি ঘটেছিলো। আমি কি তোমার সাথে ছিলাম?
--ওহ খালিদ, তুমি ভুলোমনা জানতাম কিন্ত এতটা! কাল রাতের এতসব স্মরণীয় মধুর স্মৃতি গুলো তুমি এত তাড়াতাড়ি কি করে ভুলতে পারো!
--তুমি কি নিশ্চিত! কাল রাতে আমি তোমার সাথে ছিলাম?
--একি! তোমার কি হয়েছে বলোতো! তোমার ভয়েস এরকম শোনাচ্ছে কেন!
--প্লিজ লিজা যা জিজ্ঞেস করছি তার উত্তর দাও।
--কাল রাতে আমরা একসাথে ফুচকা খেয়েছিলাম। তারপর সিনেমা দেখতে গেছিলাম। আর সবকিছু পালিয়ে করেছি। মাঝরাতে তুমি আমাকে বাড়িতে পৌঁছে দিয়ে নিজেও বাড়িতে চলে গেছিলে।
--দ্যাটস ইট?
--তুমি কি আর এটুকুতেই শান্ত হও নাকি। সিনেমা দেখার সময় তুমি আমাকে কিস করেছিলে। বলোতো কি হয়েছে তোমার! এসব ঘটনা তুমি ভুলে গেলে কি করে? কিছু হয়েছে কি? তুমি কি অসুস্থ?
--না, আসলে ..
--কি হয়েছে আমাকে খুলে বলো।
--মনে হয় আমি রাতে খুব খারাপ একটা দুঃস্বপ্ন দেখেছিলাম তোমাকে নিয়ে।
--হ্যাঁ তা তো দেখবেই। আমাকে নিয়ে তো কম চিন্তা করোনা। তা কি দেখলে?
--কি দেখেছি তার কিছুই মনে করতে পারছি না। মনে হয় আমি তোমাকে হারিয়ে ফেলেছিলাম অথবা কেউ তোমাকে আমার থেকে আলাদা করে দিয়েছিলো।
--এটুকুতেই এত টেনশনে পড়ে গেছো। বাস্তবে হলে কি করবে শুনি!
--বাস্তবে তা ঘটার আগেই আমি নতুন সিদ্ধান্ত নেবো।
--তাই নাকি! কি করবে শুনি!
--আজ আমরা পালিয়ে যাবো লিজা। আমরা দূরে কোথাও চলে যাবো।
--একি! একটা দুঃস্বপ্ন দেখে মাথা খারাপ হয়ে গেলো নাকি! কি বলছো ভেবে বলছো তো!
--শিহাব আমাদের পেছনে লেগেছে। আমাদের পালাতেই হবে এখন। আমি দুইটার দিকে আসছি তোমাকে নিতে। প্রস্তুতি নাও।
--কিন্ত ..
--যদি দুজন একসাথে কাটাতে চাই তাহলে এটাই এখন একমাত্র পথ। কোনো কিন্ত বলার সময় নেই। না পালালে কখনোই আমরা এক হতে পারবো না এটা তুমি ভালো করেই জানো।
.
লিজাকে কোনো কথা বলার সুযোগ না দিয়েই ফোনটা কেটে দিলাম। বাবার মোটর বাইকের চাবিটা চুরি করে বাইক নিয়ে বের হলাম লিজাকে তুলে নেয়ার উদ্দেশ্যে। শিহাব বা আমাদের পরিবারের কেউ টের পাওয়ার আগেই আমাদের চলে যেতে হবে অনেক দূরে।
.
লিজা নির্ধারিত জায়গায় দাঁড়িয়ে ছিলো। তুলে নিয়ে বাইকটার গতি বাড়িয়ে দিলাম। কোনো কথা না বলে শুধু একটাই চিন্তা দূরে কোথাও চলে যেতে হবে। প্রায় দুই ঘন্টা বাইক চালানোর পর হঠাৎ ব্রেক কষে দিলাম। লিজা অবাক হয়ে জিজ্ঞেস করলো..
--কি হলো থামলে কেন! পালাবে না আর!
--আরে দেখছোনা সামনে মামুরা দাঁড়িয়ে আছে।
লিজাও সামনে তাকালো। দূরে পুলিশের লোকেরা বাইক আটকে লাইসেন্স চেক করছে। এই রাস্তা দিয়েই সকালে বাসায় ফিরেছিলাম। বাম পাশে জঙ্গলের ভেতর দিয়ে কাঁচা রাস্তাটা চোখে পড়লো। সোজা সেদিকেই বাইক নামিয়ে দিলাম। লিজা প্রশ্ন করলো..
--একি জঙ্গলে নামলে কেন!
--আমাদের সাথে কোনো লাইসেন্স নেই। নেই কোনো হেলমেট। পালাবার আগেই পুলিশের এইসব ঝামেলায় ফেসে গেলে পরিবারের হাতে ধরা পড়তে বেশি সময় লাগবে না।
.
লিজা আর কথা বাড়ালো না। আমি কাঁচা রাস্তা দিয়ে বাইক টানতে লাগলাম। রাস্তাটা পরিচিত। আর একটু এগোলেই ছবির মতো সুন্দর জায়গাটা নজরে পড়বে। যদিও এই জায়গায় কি করে আমি এসেছিলাম সেটা এখনো মনে করতে পারিনি। লিজা বলে উঠলো তখনই ..
--আমরা বিয়ে করবো কবে?
--আজ না হলে কাল।
--কাল করি। আজ মার্চের ৩০ তারিখ। কাল এপ্রিলের ১ তারিখ। কালকে করলেই ভালো হবে। সবাই এপ্রিল ফুল পালন করবে আর আমরা পালন করবো বিবাহ বার্ষিকী। কি বলো!
--হ্যাঁ ভালো বলেছো।
.
আবারও নিশ্চুপ দুজনে। জঙ্গলের রাস্তা দিয়ে বাইকটা ছুটে চলেছে দুরন্ত গতিতে। একটু এগোতেই কালভার্ট টা চোখে পড়লো আমার। ঠিক তখনই লিজা বলে উঠলো..
--আমার কিন্ত ভীষণ ভয় করছে।
লিজার মুখে কথাটা শুনে বাইক থামিয়ে ফেললাম আমি।"ভয়" শব্দটা শুনতে খুব বিরক্তিকর লাগে।আর লিজা বার বার এইসব কথা বলছে আর আমার মেজাজটা খারাপ করে দিচ্ছে। বাইক হঠাৎ করে থামিয়ে দেয়ায় একটু অবাক হয়েছে লিজা। আবারও বলে উঠলো..
--কি হলো! থামালে কেন? নাকি পেট্রোল শেষ? এজন্যই লোকে বলে যেখানে বাঘের ভয় সেখানেই সন্ধ্যা হয়!
আমি রাগত স্বরে জবাব দিলাম..
--তোমার কি মনে হয়না তুমি একটু বেশি বেশি ভয় পাচ্ছো! আর পেট্রোল ভরপুর আছে। তুমি খামোখা ভয় করোনাতো।
--ভয় পাবোনা তো কি? আমি কখনোই আমার পরিবারের সাথে এমন দুঃসাহস দেখাইনি।
--তো আমি দেখিয়েছিলাম বুঝি?
--মাঝপথে থামলে কেন তাহলে? নাকি ডিসিশন বদলাবে?
--না।তার দরকার নেই। জায়গাটার দিকে তাকিয়ে দেখেছো একবার?
.
আমার প্রশ্নটা শুনে লিজা এবার একটু নড়েচড়ে বসলো।চারদিকে তাকিয়ে দেখতে লাগলো।আমি বললাম ..
--বাইক থেকে নেমে পড়ো।
লিজা চারদিকে তাকাতে তাকাতে বাইক থেকে নেমে গেলো।
--জায়গাটা তো অনেক সুন্দর।আগে থেকেই চিনতে নাকি জায়গাটা?
--না চিনতাম না। অপরিচিত জায়গা তাই বাইক নিয়ে আর সামনে এগোতে চাচ্ছি না। কেননা একটু পরেই সন্ধ্যা ঘনিয়ে আসবে। অন্ধকারে পথ ভুলে যেতে পারি।
--এরকম জায়গায় কেন এলে তাহলে! তুমি সবসময় ভুল সিদ্ধান্ত নাও। একটা কাজও তুমি পূর্ব পরিকল্পনা মাফিক করোনা।
--উপস্থিত বুদ্ধি সবচেয়ে ভালো উপায়।
--হয়েছে হয়েছে। এখন কি তুমি রাতটা এখানেই কাটাতে চাইছো?
.
লিজার মুখে বিরক্তির ছাপ দেখে হ্যাঁ বলার সাহস হলোনা আমার।বাইক থেকে নেমে আমিও চারদিকে তাকাতে লাগলাম।মহাসড়ক থেকে হঠাৎ করে একটা চোরা রাস্তা দিয়ে জঙ্গলে ঢুকে পড়লাম।এরপর জঙ্গলের ছোট রাস্তা দিয়ে এই পথে এসে গেলাম।রাস্তাও চিনিনা।আর উদ্দেশ্য জানা নেই।তবে নিশ্চয়ই দূরে কোথাও যেতে হবে আমাদের।বাড়ি থেকে পালানোর পর নিশ্চয়ই পরিবারের লোকজন আগে আশেপাশের কাছের পরিচিত জায়গাগুলোতেই খুঁজবে।তাই আমাদের দূরের অপরিচিত জায়গায় যেতে হবে।সেই উদ্দেশ্যেই ছুটে চলেছি দুজনে।দুজনের প্রেম অনেকদিনের। শত বাধাবিপত্তি ছিলো এই প্রেমকে ঘিরে।দুই পরিবারের কেউই মেনে নেবেনা আমাদের ভালোবাসা।পরিবার থেকে প্রেম মেনে না নিলে সচরাচর প্রেমিক যুগলেরা যে দুঃসাহসিক পথ অবলম্বন করে সেই থিওরি আমরাও এখন প্রয়োগ করছি।অতপর অনেকটা পথ পাড়ি দেয়ার পর এখন আমাদের একটু বিশ্রাম নেয়ার পালা।
.
এখন আমাদের পেছনে ঘন জঙ্গল।আশেপাশে বড় বড় গাছগুলো মাথা উচুঁ করে দাড়িয়ে আছে।এরকম জঙ্গলে বাঘ ভাল্লুকের ভয় নেই। তবে অন্ধকারে ভয়টা এমনিতেই এসে যায়।পেছনের জঙ্গল থেকে চোখ সরিয়ে লিজা সামনের রাস্তায় তাকালো।সামনে একটা খরস্রোতা ছোট খাল বয়ে চলেছে।নিশ্চয়ই পাহাড়ী কোনো ঝড়নার পানি এই খাল দিয়ে বয়ে চলে যায়।বর্ষা মৌসুম না হয়েও খাল পানিতে টইটম্বুর। তবে খাল পার হওয়ার জন্য খালের উপর সুন্দর একটা কালভার্ট দেখা যাচ্ছে।তার ওপাশে উচুঁ উচুঁ পর্বত গুলো দাড়িয়ে আছে।প্রকৃতির এক অপূর্ব লীলাভূমির কোল ঘেঁষে সৌন্দর্য অবলোকন করছি আমরা।লিজা অবাক হয়ে বলে উঠলো ..
--এটাতো দেখি স্বপ্নপুরী।তুমি নিশ্চয়ই প্ল্যান করেই এখানে আমাকে এনেছো।জায়গাটা কল্পনার চেয়েও একটু বেশি সুন্দর।
আমার চোখের দিকে তাকালো লিজা। বললো..
--সত্যি করে বলো তো, এটা তোমার পূর্ব পরিকল্পনা ছিলোনা?
যদিও জায়গাটার ব্যপারে আমি একদমই অবগত নই তবুও লিজাকে ইমপ্রেস করার জন্য মিথ্যা ক্রেডিট নিয়ে একটা গর্বসূচক হাসি দিয়ে বললাম ..
--তোমার প্রেমিককে এখনো চিনতে পারলে না লিজা? আমি কতটা রোমান্টিক তুমি আজও বুঝলে না।
--হাহাহা। জানতাম জানটুস। কিন্ত জানোতো, এত কিছু মনে হয় সুখের হবেনা।আমার খুব ভয় করছে এখনো।টেনশনে মাথা ঘুরছে।
--পাগল মেয়ে, ওইসব ভুলে যাও এখন। মনে করো পৃথিবী তে এখন শুধু তুমি আর আমি আছি আর আছে এই প্রাকৃতিক সৌন্দর্য। আমাদের এখন উপভোগ করার সময়। টেনশনে মাথা ঘুরাবার সময় নয়।
.
কথাটা বলেই দুজনে দুজনার হাত ধরে কালভার্ট টার দিকে এগিয়ে যেতে লাগলাম।কালভার্ট এর উপরে গিয়ে কংক্রিটের রেলিং এ হেলান দিলাম আমি।লিজা আমার হাত ধরে পাশে দাড়ালো।সন্ধ্যা ঘনিয়ে আসছে।সূর্য অস্ত যাওয়ার জন্য প্রস্তুত হচ্ছে।লিজা প্রশ্ন করলো..
--কি ঠিক করলে? এই নির্জন জায়গাতেই রাত কাটাবে নাকি?
--ভয় পাচ্ছো কেন? আমি সব পরিকল্পনা করে এসেছি।
--ভয় পাবোনা! এইসব নির্জন জায়গা দিনের বেলা সুন্দর লাগলেও রাতের বেলা ভয়ংকর হয়ে উঠবে না তার কি গেরান্টি আছে!
.
লিজার কথাটা শুনে আসলেই একটু চিন্তা হতে লাগলো। কথাটা ফেলে দেয়ার মতো নয়।বিশেষ করে সন্ধ্যা হতে হতেই খুব খারাপ পরিস্থিতির তৈরি হয়ে যাবে। কিভাবে কাটাবো রাতটা জানিনা। যদিও সময়টা খুব খারাপ যাবে। তবুও ঘড়িতে সময়টা দেখে নেয়া উচিৎ এখন কয়টা বাজে।

0 Response to "দ্যা ব্যাড ইভিনিং | খালিদ হাসান | পর্ব - ৫"

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন

মোট পৃষ্ঠাদর্শন