Ads Golpo.Best Kobita.Best

search

দ্যা ব্যাড ইভিনিং | খালিদ হাসান | পর্ব - ৩


মুল গল্পের
 নামঃ
দ্যা ব্যাড ইভিনিং | খালিদ হাসান
মুল বইয়ের
নামঃ
অজানা
মূলসূত্রঃFacebook.com

পর্ব - ১ | পর্ব - ২ | পর্ব - ৩ | পর্ব - ৪ | পর্ব - ৫ | এক পাতায় সম্পূর্ণ

ঘড়ি থেকে চোখটা সরিয়ে মিলাতে লাগলাম টাইম ট্রাভেলের ব্যপারটা। ঘড়িতে ৮ টা পার হয়েছে। আর আমি টাইম ট্রাভেল করে সেই সন্ধ্যার সময়েই ফিরে এসেছি যখন আমি লিজাকে কিস করছিলাম। আমার সামনে দাঁড়িয়ে আছে খালিদ আর লিজার অতীত সত্ত্বা। আর আমি এসেছি ভবিষ্যৎ থেকে। ব্যপারটা গোলমেলে হয়ে গেছে কিছুটা। কিন্ত খুব বেশি জটিল নয়। এক রাজ্যে দুই রাজার রাজত্ব চলেনা। এখন খুব সহজ একটা কাজ করতে হবে। আমার অতীত সত্ত্বাকে আক্রমণ করে খুন করে তার জায়গাটা আমাকে নিতে হবে। এছাড়া আর কোনো উপায় নেই এখন।
.
চোখটা আচমকা বুক পকেটে যেতেই বুঝতে পারলাম পকেটে একটা কালো রুমাল রাখা। প্রফেসর ভিক্টর রুমালটা রেখে ভালোই করেছেন। রুমালটা পকেট থেকে বের করে মুখে বেঁধে নিলাম যাতে লিজা আমার চেহারা দেখতে না পায়। ছুড়িটা হাতে নিয়ে আমার অতীত সত্ত্বার খালিদের পেছনে দাঁড়িয়ে গেলাম আমি। সে লিজাকে জড়িয়ে ধরে ভালোবাসার বিনিময়ে মশগুল হয়ে আছে। এটাই মোক্ষম সময়।
.
সজোরে ছুড়িটা বসিয়ে দিলাম তাঁর পিঠে। ব্যথায় কুকিয়ে উঠলো সে। লিজা ভয় পেয়ে দূরে সরে গেলো। চিৎকার করে উঠলো লিজা। আমি ছুড়িটা বের করে নিলাম। খালিদ ঘুরে তাকালো আমার দিকে। আমার রুমাল বাঁধা মুখটা দেখে সে চিনতে পারেনি আমাকে। রুমাল না থাকলে নিশ্চয়ই বুঝে যেতো তাঁর সামনে তাঁরই ভবিষ্যৎ সত্ত্বা দাড়িয়ে আছে আর তাকে আক্রমণ করছে। কলারটা চেপে ধরলাম খালিদের। লিজা চিৎকার করতে গিয়েও পারছে না। অতিরিক্ত ভয়ে তার গলা দিয়ে আওয়াজ বের হচ্ছেনা। আমি আমার অতীত খালিদের দিকে তাকিয়ে বলে উঠলাম ..
--তোমাকে মরতে হবে খালিদ। এই চমৎকার সন্ধ্যা তোমার জন্য নয়, এটা আমার জন্য। গুড ইভিনিং খালিদ।গুড ইভিনিং ফর মি।ব্যাড ইভিনিং ফর ইউ।
.
কথাটা বলেই তার বুকে ছুরি চালাতে যাবো এমন সময় লিজা আমাকে ধাক্কা দিয়ে সরিয়ে দিলো। আমি ধাক্কা খেয়ে খালিদকে আঘাত করতে ব্যর্থ হলাম। আমি জানি লিজা কেন এমন করছে। সে তো আমাকে এখনো দেখেনি মুখে রুমাল বাঁধা তাই। তা নাহলে চোখের সামনে দুজন খালিদকে দেখে সে নিজেই কনফিউজড হয়ে যেতো। আমি তাল সামলে নিয়ে লিজাকে ধাক্কা দিয়ে নিচে ফেলে দিলাম। আগে খালিদের ম্যাটারটা সলভ করি লিজাকে পরে বুঝিয়ে বলা যাবে।
.
আমি আমার অতীত খালিদের মুখেও ছুরি চালিয়ে দিলাম। দিকবিদিক জ্ঞ্যান হারিয়ে শুধু মাথায় একটা চিন্তাই কাজ করতে লাগলো। নিজের অতীত সত্ত্বাকে খুন করতে হবে আর তার জায়গাটা আমাকে নিতে হবে। লিজা শুধু আমার হবে আমার অতীত সত্ত্বার নয়। মুখের বিভিন্ন জায়গায় ছুরির আঘাতে রক্তাক্ত করে দিতে লাগলাম । এরপর তাকে দুই হাতে ধরে কালভার্ট এর রেলিং এর উপরে বসিয়ে দিলাম।আমার অতীত সত্ত্বা একদম শক্তিহীন হয়ে গেছে। নিশ্চয়ই একটু পরে মারা যাবে।
.
তাকে বসিয়ে দিয়ে হাঁটুতে ছুরির আঘাত করতে যাবো এমন সময় লিজা এসে আবারও ধরে ফেললো আমাকে। আমাকে লিজা পেছন থেকে জাপটে ধরায় আর আঘাত করতে পারলাম না। লিজার থেকে নিজেকে ছাড়িয়ে নিতে লাগলাম আমি। লিজার থেকে নিজেকে ছাড়িয়ে নিয়ে লিজাকে জাপটে ধরে বলতে লাগলাম..
--আমি খালিদ, লিজা আমাকে দেখো আমি তোমার খালিদ। ও নকল খালিদ, আমি আসল খালিদ। আমার মুখ থেকে রুমালটা সরালেই তুমি আমাকে চিনতে পারবে।
.
ঠিক সেই মুহুর্তে রেলিং থেকে নিচে পড়ে গেলো আমার অতীত সত্ত্বা।পানিতে পড়ার সাথে সাথে ঝুপ করে একটা শব্দ হলো। লিজা আরো চিৎকার দিতে লাগলো আমার কথা কিছুতেই শুনছে না সে। ঠিক সেই মুহূর্তে ঠাস করে একটা শব্দ হলো। মনে হলো বাজ পড়লো। লিজা আমার বুকে ঢলে পড়লো তখনই । লিজাকে জড়িয়ে ধরে পিঠে হাত দিতেই হাতের আঙ্গুলে অনুভব করলাম রক্ত। কেউ একজন লিজাকে শুট করেছে কালভার্ট এর প্রান্ত থেকে। লিজা আর নিঃশ্বাস নিচ্ছেনা। এ আমি কি দেখছি! আমার লিজা মরে গেছে। ভয়ে গায়ের সব লোম দাড়িয়ে গেছে আমার। চিৎকার করে বলে উঠলাম ..
--শিহাব, আমি তোমাকে ছাড়বো না। সব সমস্যার মূলে তুমি আছো। আমি তোমাকে খুন করবোই শিহাব।
.
মনে হলো শিহাব আমাকেও গুলি করবে কিন্ত গুলির শব্দ আর এলোনা। আমাকে খুঁজতে হবে শিহাবকে। ও নিশ্চয়ই আশেপাশে কোথাও আছে। লিজার মৃত দেহটার দিকে তাকাতেই বুকটা হাহাকার করে উঠলো আবার। শিহাব নিশ্চয়ই আমাদের মেরে ফেলার প্লান করেই এসেছে। ভাবনায় পড়ে গেলাম আমি। কি করবো এখন! শিহাবের প্লান এমনও হতে পারে, লিজাকে খুন করে সেই খুনের দায় আমার উপর চাপিয়ে দেবে। কারণ সবাই জানে লিজাকে নিয়ে আমিই পালিয়েছি আর দুজন একসাথেই পালিয়েছি। সুযোগটা ভালোই কাজে লাগিয়েছে শিহাব। তাই দৌড়ে শিহাবকে খুঁজতে গেলাম আমি কালভার্ট এর প্রান্তে। গিয়েই দেখলাম আমার বাইকটা এখনো সেখানে দাড় করিয়ে রাখা। চারদিকে তাকাতে লাগলাম শিহাবকে খুজেঁ পাওয়ার জন্য। কিন্ত আশেপাশে আর কাউকে পেলাম না। শিহাব কোথায় পালিয়ে যাবে!
.
মাথায় আরো একটা চিন্তা চলে এলো। শিহাবের এই পরিকল্পনা কিছুতেই সফল হতে দেয়া যাবেনা। যদি কেউ জেনে যায় লিজা মরে গেছে তাহলে খুনের দায়টা আমার উপরই আসবে। তাই শিহাবকে খুঁজা বাদ দিয়ে প্রমাণ লোপাট করতে ব্যস্ত হলাম আমি। বাইকটা নিয়ে খালপাড়ে নেমে গেলাম। খালের স্রোতে ভাসিয়ে দিলাম সেটা। আমার এমন কোনো চিহ্ন যেনো না থাকে এখানে। সবকিছু লোপাট করতে হবে যাতে এমন মনে হয় আমি আর লিজা এখানে কখনোই আসিনি।
.
বাইকটা স্রোতের জলে ভাসিয়ে দিয়ে আবারও কালভার্ট এর দিকে চলে গেলাম। সাথে করে নিয়ে আসা ব্যাগটাও ফেলে দিলাম খালের জলে। লিজার মৃত দেহটা পড়ে আছে নিথর হয়ে । সেটাকে ঘাড়ে তুলে নিলাম। হাঁটতে লাগলাম কালভার্ট এর প্রান্তের দিকে। কিন্ত কিছুদূর গিয়েই মনে হলো খালিদের মতো একেও স্রোতের জলে ভাসিয়ে দেয়াই ভালো হবে। কালভার্ট এর রেলিং এর উপর লিজাকে বসিয়ে ধাক্কা দিয়ে লিজার মৃত দেহটা নিচে ফেলে দিলাম। জলের ধারায় মৃত দেহ গুলো হারিয়ে গেলে আর কোনো প্রমাণ থাকলো না। এখন আমাকে পালাতে হবে। পালিয়ে গিয়েই বাঁচা সম্ভব। এমন কোথাও যেতে হবে যেখানে গেলে শিহাব বা অন্যকেউ জানবে না।
.
কথাগুলো ভাবতে ভাবতেই মাথায় চলে এলো নতুন ভাবনা। যদি টাইম ট্রাভেল করে আমি অতীতে আসতে পারি তাহলে নিশ্চয়ই আমি আবারও টাইম ট্রাভেল করে আবারও সেই সময়ে এসে লিজাকে বাঁচাতে পারি। ব্যপারটা ভাবতেই আবারও একটা আশা পেলাম বেচেঁ থাকার। আমার লিজাকে মরতে দেয়া যাবেনা। তাকে টাইম ট্রাভেল করে ফিরিয়ে আনা সম্ভব। আমি যদি দুইজন হয়ে যেতে পারি টাইম ট্রাভেল করে তাহলে লিজাও দুইজন হয়ে যাবে। লিজাকে আমার বাঁচাতেই হবে। যে ঘটনাগুলো ঘটে গেলো সেই ঘটনাগুলোর পরিবর্তন করতে হবে সেই সময়ে ফিরে গিয়েই।
.
কথাগুলো ভাবতে ভাবতেই আবারও বাড়িটার দিকে দৌড় দিলাম কালভার্ট অতিক্রম করে। শিহাবকে পড়ে খুজঁতে হবে আগে লিজাকে বাঁচাতে হবে। বাড়িটার ভেতরে যেতেই দেখলাম দরজা খোলাই আছে। কিন্ত ভেতরে যেতেই প্রফেসর ভিক্টরের সামনে পড়ে গেলাম। তিনি আমাকে দেখেই বলে উঠলেন ..
--হেয়, হু আর ইউ? তুমি তো দেখি বড় মাপের চোর! আমার ঘরের দরজা কিভাবে খুললে তুমি!
আমি প্রফেসর ভিক্টরের দিকে তাকিয়ে বুঝলাম লোকটা গোসল করে কেবলই বাথরুম থেকে বের হলো। হাত ঘড়িটার দিকে তাকালাম আমি। এখন সময় ৯ টার কাছাকাছি। কিন্ত প্রফেসর ভিক্টরের সাথে আমার সাক্ষাৎ হয়েছিলো অনেক পরে। তা প্রায় রাত ১১ টার দিকে অর্থাৎ ভবিষ্যতে। কারণ আমি এখন টাইম ট্রাভেল করে অতীতে আছি। তার মানে উনি এখন আমাকে চিনেন না। উনি আমাকে চিনবেন আরো পরে। তাই মুখ থেকে রুমালটা না খুলেই বলে উঠলাম।
--আমি আপনার টাইম মেশিনটা ব্যবহার করতে চাচ্ছি।
আমার কথা শুনেই প্রফেসর ভিক্টর বলে উঠলেন ..
--হাউ ডেয়ার ইউ! একেতো চোরের মতো তালা ভেঙ্গে ঘরে ঢুকেছো আর এখন আমার সবচেয়ে মূল্যবান জিনিস ব্যবহার করতে চাইছো। ওয়েট ওয়েট ! হোয়াট! তুমি আমার টাইম মেশিনের ব্যপারে কি করে জানলে!
.
প্রফেসরের কথায় বুঝে গেলাম লোকটার সাথে কথা বলে সময় নষ্ট করা ঠিক হবেনা। বলে উঠলাম ..
--আমার লাইফটা হেল করে দিয়ে এখন আমাকেই চোর বলা হচ্ছে!
--হোয়াট ডু ইউ মিন! কে তুমি!
আমি আর কথা বাড়ালাম না। সোজা তার নাকে ঘুষি মেরে দিলাম। ঘুষি খেয়ে উনি নাক চেপে ধরে রইলেন। উনাকে জড়িয়ে ধরে বেডরুমের দিকে গিয়ে ফেলে দিয়ে বের হলাম। ঠিক সেই মুহুর্তে কানে শব্দ পেলাম কেউ একজন দৌড়ে ঘরে প্রবেশ করেছে। ঘর থেকে বের হতেই দেখলাম লিফটের দরজাটা ঘপ করে বন্ধ হয়ে গেলো। নিশ্চয়ই কেউ আমার আগেই ঢুকে গেছে।
.
আমিও লিফটের দিকে দৌড়ে গেলাম। সুইচ চাপতেই লিফটের দরজা খুলে যেতেই দেখলাম কেউ নেই সেখানে। তাহলে কি ভুল দেখলাম আমি! আমি আর এ ব্যপারে না ভেবে লিফটে ঢুকে গেলাম। দরজাটা খপ করে বন্ধ হতেই লেডি ভয়েসটা টাইম সেট করতে বললো। এতকিছু ভাব্বার সময় নেই। আগের টাইমটা সেট করে দিলাম।
অর্থাৎ আবারও সেই রাত ৮ টার সময়। লিজাকে বাঁচাতে হবে সেই সময়ে গিয়েই। লিফট কাঁপাকাঁপি করে দরজা খুলে যেতেই বেড়িয়ে গেলাম বাইরে। ঠিক সেই মুহুর্তে মনে হলো আমি এর আগেও টাইম ট্রাভেল করে একই সময়ে এসেছি। তার মানে আবারও আমার অতীত সত্ত্বাও এই সময়েই লিফট থেকে বের হবে। আমি বের হতেই লিফটের দরজা বন্ধ হয়ে গিয়ে সেটা আবারও খপ করে খুলে গেলো। আমি যদি সেকেন্ড টাইম ট্রাভেল করে থাকি তাহলে ফার্স্ট ট্রাভেলার এখন চলে আসবে। একই সময় সেট করাটা বড্ড ভুল হয়ে গেলো।
.
লিফটের দরজা আবার খুলে যেতেই আমি লুকানোর জন্য প্রফেসরের বেডরুমের দিকে দৌড় দিলাম। প্রফেসর এই টাইমে বাথরুমে শাওয়ার নিচ্ছেন। হাত ঘড়িতে সময় দেখলাম ৮ টা বাজে। এখন তাই তাই হবে যা যা পূর্বে ঘটেছিলো। আমি এখন তৃতীয় খালিদ। প্রথম খালিদ রয়েছে কালভার্টে লিজার সাথে। আর সেকেন্ড খালিদ নিশ্চয়ই লিফট থেকে বেরিয়ে আমার পায়ের শব্দ শুনেছে। আমি দরজাটা ভিড়িয়ে দিয়ে দরজার আড়ালে লুকিয়ে গেলাম। সেকেন্ড খালিদ সোজা বেড রুমে চলে এলো। দরজাটা খুলেই বলে উঠলো ..
--চেষ্টা ভালো ছিলো প্রফেসর। কিন্ত আমি বুঝে গেছি। আমার জীবন মরন সমস্যার মধ্যে এমন বোকা বানানোর মজা না করলেও পারতেন।
কথাটা বলেই সে ওয়াশরুমের দিকে যেতে যেতে যেতে বললো ..
--আপনার বিড়াল তাড়ানো শেষ হয়নি এখনো! লুকিয়ে না থেকে বেরিয়ে আসুন।
.
আমি দরজার পাশের টেবিলে টর্চ ছুরি আরো কিছু জিনিস দেখলাম। কয়েকটা পকেটে নিয়ে দৌড় দিলাম মেইন দরজার দিকে। আমার এখন বাড়ির বাইরে যেতে হবে। দুপদাপ আওয়াজ করে দৌড়াতে গিয়েই মনে হলো সেকেন্ড খালিদ আমার উপস্থিতি টের পেয়েছে। তাই বাড়ির ডানপাশের ঝোপের আড়ালে লুকিয়ে পড়লাম।
.
সেকেন্ড খালিদ বাড়ির ডানপাশে আমার দিকেই আসছে কিন্ত আমি ঝোপের আড়ালে থাকায় আমার অবস্থান টের পেলোনা সে। যেতে লাগলো বাড়ির জানালার দিকে। আমিও ঝোপ থেকে মাথা তুলে দেখলাম সেখানে রুমালে মুখ বাঁধা একজন দাড়িয়ে আছে। জানালার কাচঁ দিয়ে বাড়ির ভেতরের দিকে তাকিয়ে আছে সে। এটাই শিহাবের চামচা টা। এবার নিশ্চয়ই সেকেন্ড খালিদ তাকে খুন করবে। ঠিক তাই হলো যা একটু আগে আমি করেছিলাম । সেকেন্ড খালিদ পেছন থেকে তাঁর পিঠে ছুরিটা ঢুকিয়ে দিলো। এবার হুঙ্কার করে বলতে লাগলো ..
--কি বলেছিলে তখন শিহাব? এখন কথাটা ফেরত নেবার সময় হয়েছে। এখন সময়টা আমার জন্যই গুড। ব্যাড ফর ইউ। বল লিজা কোথায়?
ব্যথায় কোকাতে কোকাতে শিহাবের চামচাটা উত্তর দিলো..
--আমি শিহাব নই।
কথাটা শুনে চমকে উঠে সেকেন্ড খালিদ ছেড়ে দিলো তাকে।
--শিহাব নও। তাহলে নিশ্চয়ই শিহাবের চামচা!
--যা ইচ্ছা ভাবতে পারো। কিন্ত একথা সত্যি। এটা আমাদের জীবনের সবচেয়ে খারাপ সন্ধ্যা।
--ইয়েস আই নো দ্যাট। কিন্ত আমার জন্য নয় শুধু তোমার জন্য। আর সন্ধ্যাটাকে খারাপ করেছো তুমি নিজেই। বল কুত্তার বাচ্চা শিহাব কোথায়? আর কতজনের দল নিয়ে আমাকে মারতে এসেছিস? সব কটাকে মেরে ফেলবো আজ।
আমি তাদের কথোপকথন শুনতে শুনতে পকেটে হাত দিয়ে টর্চ লাইট টা খুজেঁ পেলাম। টর্চ বের করতেই সুইচে চাপ লেগে জ্বলে উঠলো সেটা। আচমকা টর্চের আলো তাদের দিকে ফোকাস হতেই সেকেন্ড খালিদ টের পেয়ে গেলো আমার অবস্থান। শিউরে উঠলাম আমি। তাহলে তখন আমি যাকে শিহাব ভেবেছিলাম যে টর্চের আলো ফেলেছিলো সেটা আমি নিজেই ছিলাম। অর্থাৎ আমার ভবিষ্যৎ সত্ত্বা যেটা এখন আমি বর্তমানে। কি হচ্ছে এসব!
.
আমার পালাতে হবে এখন। নাহলে সেকেন্ড খালিদ আমাকে দেখে ফেলবে। রাগের মাথায় আমাকেই আক্রমণ করে দিতে পারে শিহাব ভেবে। তাই টর্চটা সাথে সাথে পকেটে ঢুকিয়ে নিয়ে দুপদাপ পায়ের আওয়াজে ঝোপে খস খস আওয়াজ তুলে নিজের অবস্থান বদলাতে লাগলাম। বুঝে গেলাম আগেই। এইবার সেকেন্ড খালিদ কালভার্ট এর দিকে দৌড়াবে লিজার উদ্দেশ্যে। দৌড়ানোর সময় পেছন থেকে সেকেন্ড খালিদের হিংস্র রাগান্বিত কন্ঠ ভেসে এলো ..
--নিশ্চয়ই শিহাব। আমি আর তাকে ছাড়ছি না। পালিয়ে লাভ নেই। সবাইকে মারবো আজ।
.
সেকেন্ড খালিদ যেহেতু কালভার্ট এর দিকে দৌড়াবে রাস্তা দিয়ে সেহেতু আমাকে রাস্তা দিয়ে যাওয়া যাবেনা। মনে পড়ে গেলো তখনই। খালপাড়ে একটা কলাগাছের ভেলা রয়েছে যেটা আমি জ্ঞান ফিরার পর দেখেছিলাম।
.
আমি খালপাড়ে গিয়ে সত্যিই ভেলাটা পেয়ে গেলাম। খালপাড়ে নেমে যেতেই খেয়াল করলাম দুপদাপ আওয়াজ তুলে সেকেন্ড খালিদ কালভার্ট অনুসরণ করে দৌড়াচ্ছে।
.
আমিও ভেলাটা ভাসিয়ে দিলাম খালের জলে। খরস্রোতা খালটা খুব বেশি প্রশস্ত নয়। পাড় হতে বেশি সময় লাগবে না। বাঁশের লাঠিটা ব্যবহার করে ওইপাড়ের দিকে যেতে লাগলাম। দূরে তাকাতেই দেখলাম কালভার্ট টা আমার খুব কাছাকাছি। আসলে তা খুব বেশি দূরে নয়। যতটা দূরে ভেবেছিলাম। যখন আমি খালের ঠিক মাঝখানে তখনই খেয়াল করলাম ভেলা টা কোথাও আটকে গেছে। পকেট থেকে টর্চটা বের করে জ্বালাতে যাবো এমন সময় স্রোতের ধাক্কা লাগলো ভেলাতে। তাল সামলাতে না পেরে টর্চটা সাথে সাথে হাত থেকে খালের পানিতে পড়ে গেলো টুপ করে ..
তখনই শুনতে পেলাম কালভার্ট থেকে দুজন ছেলেমেয়ের কথোপকথন ভেসে আসছে ..
--কি হলো! ভয় পেলে নাকি!
কথাটা বললো আমার প্রথম সত্ত্বা অর্থাৎ ফার্স্ট খালিদ। লিজাও উত্তর দিলো তখনই ..
--খালিদ,মনে হলো খালের মাঝখানে এইমাত্র আমি একটা আলো জ্বলতে দেখলাম। যেটা জ্বলে উঠার সাথে সাথেই নিভে গেলো।
লিজার কথাটা শুনে শিউরে উঠলাম আমি।
তখন লিজার কথাটা গুরুত্ব দেইনি আমি কিন্ত গুরুত্ব দিলে জানতে পারতাম আমারই ভবিষ্যৎ সত্ত্বা খালের মাঝখানে টর্চ জ্বালিয়েছিলো তখন।
তারা অন্ধকারে আমাকে স্পষ্ট দেখতে পায়নি। ফার্স্ট খালিদ বলে উঠলো..
--এখনো ভয়ে উল্টাপাল্টা দেখছো! তুমি চোখ বন্ধ করোতো। আমার বিশ্বাস তুমি চোখ বন্ধ করলেও অনেক কিছু দেখবে। আসলে তুমি কিছুই দেখছো না নিজের চোখে, তোমার মস্তিষ্ক এইসব উল্টাপাল্টা জিনিস দেখাচ্ছে।
--না খালিদ, বিশ্বাস করো আমার মনে হচ্ছে আমি ঠিক দেখেছি ..
.
তাদের কথোপকথন শুনতে শুনতে খেয়াল করলাম তারা একে অপরের কাছাকাছি এসে গেছে। আমি শুধু অন্ধকারে তাদের আবছায়া দেখতে পাচ্ছি। দুটো আবছায়া মূর্তি একদম কাছাকাছি এসে ভালোবাসার বিনিময় করার জন্য প্রস্তুত এখন। তখনই আবারও লিজার কন্ঠস্বর ভেসে এলো ..
--কি করছো খালিদ ..
ফার্স্ট খালিদ উত্তর দিলো ..
--কোনো কথা নয় ..
শুরু হয়ে গেলো তাদের আলিঙ্গন। আমি ভেলাটা দ্রুত নিয়ে যেতে লাগলাম পাড়ের দিকে। কিন্ত পাড়ে যাওয়ার আগেই খেয়াল করলাম সেখানে তিনটা আবছায়া। সেকেন্ড খালিদ তাদের কাছাকাছি অবস্থান নিয়েছে। সে তাদের দেখে অবাক হয়ে নিজের ঘড়িটার দিকে তাকালো এবার। তারপরেই পকেট থেকে রুমালটা বের করতে লাগলো। মুখে বাঁধতে লাগলো রুমালটা। আচমকা আমার চোখদুটোও ঘড়ির দিকে গেলো। এটাই সেই সময়! এখনই সেকেন্ড খালিদ ফার্স্ট খালিদকে ছুরি দিয়ে আঘাত করবে। থার্ড খালিদ হিসেবে আমার উচিৎ হবে তাদের আশা ছেড়ে দিয়ে লিজাকে উদ্ধার করা। এই ঘটনাগুলো বদলে দিতে হবে। এটা আমাকে করতেই হবে। দ্রুত ভেলা পারে উঠিয়ে নিলাম আমি। রাস্তায় উঠে দেখতে পেলাম নিজের বাইকটা দাড় করানো। এরপর কালভার্ট এর দিকে যেতে লাগলাম আমি। গিয়েই দেখতে পেলাম সেকেন্ড খালিদ আর ফার্স্ট খালিদের মধ্যে লড়াই চলছে। লিজা সেকেন্ড খালিদকে আটকানোর চেষ্টা করছে। ফার্স্ট খালিদ একদম মৃত প্রায় অবস্থা। পকেটে হাত দিতেই মোক্ষম অস্ত্রটা পেয়ে গেলাম আমি। টেবিলের উপরে টর্চের সাথে রিভলভার টাও পেয়েছিলাম। বের করে নিলাম সেটা। শিহাবকে খুন করবো বলে জিনিসটা সাথে নিয়েছিলাম। এখন এটা অনেক কাজে লাগবে।
.
লক্ষ্য করলাম কালভার্ট এর মাঝখানে। সেকেন্ড খালিদ ফার্স্ট খালিদকে রেলিং এ বসিয়ে দিয়েছে। ছুরি চালাতে গেলেই লিজা মুখে রুমাল বাঁধা সেকেন্ড খালিদকে জাপটে ধরেছে পেছন থেকে। সেকেন্ড খালিদ দ্রুত নিজেকে ছাড়িয়ে নিলো। লিজাকে জাপটে ধরে বলতে লাগলো..
--আমি খালিদ, লিজা আমাকে দেখো আমি তোমার খালিদ। ও নকল খালিদ আমি আসল খালিদ। আমার মুখ থেকে রুমালটা সরালেই তুমি আমাকে চিনতে পারবে।
.
কথাটা শেষ না হতেই ফার্স্ট খালিদ রেলিং থেকে নিচে পড়ে গেলো ..
এটাই সময় শুভ কাজের। এবার সেকেন্ড খালিদকেও মেরে ফেলা যাক। তাহলে লিজা আমার। গুলিটা সেকেন্ড খালিদের উদ্দেশ্যে চালাতেই তাদের নড়াচড়ার কারণে লিজা গুলির সামনে এসে গেলো। পিঠ ফুরে বুলেট লিজার শরীরের অভ্যন্তরে ঢুকে গেছে। সেকেন্ড খালিদ লিজাকে জাপটে ধরলো তখনই।
.
আর আমি বুঝে গেলাম গুলিটা তখন শিহাব করেনি লিজাকে। গুলিটা থার্ড খালিদ অর্থাৎ আমি নিজেই করেছিলাম। কি হচ্ছে এখানে! সময়টা কেন এত বিষাক্ত লাগছে এখন! আমি উত্তর জানিনা। কিন্ত সময়ের এই বেড়াজাল থেকে কিভাবে রেহাই পাবো আমি! কিভাবে মুক্তি মিলবে আমার!
.
ভাবতে ভাবতেই দেখলাম সেকেন্ড খালিদ আমার দিকেই তেড়ে আসছে।
চিৎকার করে বললো সে ..
--শিহাব, আমি তোমাকে ছাড়বো না। সব সমস্যার মূলে তুমি আছো। আমি তোমাকে খুন করবোই শিহাব।
আমি সেকেন্ড খালিদকে শুট করতে গিয়েই দেখলাম বুলেট একটাই ছিলো আর কাজ করছে না রিভলভার। পালাতে হবে আমাকে যত দ্রুত সম্ভব । সেকেন্ড খালিদের হাতে ধরা পড়া যাবেনা কিছুতেই। কারণ সে আমাকেই শিহাব ভাবছে।

0 Response to "দ্যা ব্যাড ইভিনিং | খালিদ হাসান | পর্ব - ৩"

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন

মোট পৃষ্ঠাদর্শন