গল্পের/উপন্যাসের নামঃ নুপূর | |
লেখকঃ | তাসমিয়া তাসনিন প্রিয়া |
বইয়ের নামঃ | অজানা |
ধরণঃ | রহস্য ও গোয়েন্দা গল্প |
প্রথম প্রকাশঃ | অজানা |
সংগ্রহকারীঃ | এম. এন. আর. দুর্জয় |
ওয়েবসাইটে প্রকাশকঃ | এম. এন. আর. দুর্জয় |
মূলসূত্রঃ | Facebook.Com |
তৃষা বাবা মায়ের একমাত্র সন্তান।বাবা সরকারী চাকুরী করে আর মা গৃহিনী।তৃষা এবার এস.এস.সি পরিক্ষা দিয়েছে।তাই দীর্ঘ ছুটির সুবাদে পরিবার সহ গ্রামের বাড়ি বেড়াতে যাবে তৃষার পরিবার।তৃষা এই প্রথম যাচ্ছে তার দাদু বাড়ি।উজানপুরে তার দাদুর বাড়ি।সেখানে তাদের বিশাল বাড়ি,বলতে গেলে রাজমহল।তবে অনেক পুরনো বাড়ি।তৃষার পূর্বপুরুষ জমিদার ছিলো।বর্তমানে সেখানে তৃষার দাদু,দাদা আর চাচা,চাচি থাকেন।তৃষা চাচা,চাচির কোন সন্তান নেই তাই তৃষাকে মেয়ের মত ভালোবাসেন। অনেক বছর পর বেড়াতে আসায় সবাই খুশি হন কিন্তু তার সাথে অজানা আশংকা কাজ করে তৃষার দাদুর মাঝে।
_কেমন আছো মা বাবা?(তৃষার বাবা)
_ভালো।তৃষাকে নিয়ে কেনো এলি এখানে?প্রয়োজন হলে আমরা যেতাম(তৃষার দাদি)
_বাদ দাও এসব কথা মা,অনেক পুরনো কথা এসব.চলো ভিতরে চলো(তৃষার বাবা)
.
তৃষা ওর দাদির কথা কিছু বুঝলো না তাই ওর মায়ের কাছে জিঙ্গেস করে।কিন্তু ওর মা ও বেপারটা এড়িয়ে যায়।
.
দুপুরে খাওয়া শেষে একটু বিশ্রাম নেয় তৃষা।বিকেলে একাই বাড়ির চারপাশ দেখতে বের হয়।যেহেতু পুরনো বাড়ি তাই তৃষার আগ্রহ বেশি।তৃষা চারপাশ দেখছিলো।হঠাৎ মাটিতে তাকিয়ে তৃষার দৃষ্টি থমকে যায়।
.
হঠাৎ মাটিতে তাকিয়ে তৃষার দৃষ্টি থমকে যায়।একটা নুপুর পড়ে আছে মাটিতে।তৃষা নুপুরটা দেখার জন্য হাতে নেয়।এমন সময় তৃষাকে ওর মা ডাক দেয়।তৃষা নুপুরটা হাতে নিয়েই বাড়ির দিকে হাটা দেয়.
অন্যদিকে,তৃষা নুপুরটা সাথে নেওয়ায় আড়াল থেকে কেউ অট্টহাসি দেয়।কিন্তু সে শব্দ তৃষার কানে পৌছাঁয় না।তার আগেই তৃষা বাড়ি চলে যায়।
.
_কোথায় গিয়েছিলি একা?এখানকার পথঘাট সবই তো তোর অজানা(তৃষার মা সিমা)
_এই কাছেই গেছিলাম মা।বাড়ির চারপাশ একটু দেখছিলাম(তৃষা)
_তোমার একা যাওয়া উচিত হয়নি দিদিভাই(তৃষার দাদু মজিদ)
_সরি দাদু,আর একা কোথাও যাবোনা.
_ঠিক আছে.তোর হাতে ওটা কি?(সিমা)
_ওহ এইটা একটা নুপুর.বাড়ির পিছনে যে ঘর আছে তার সামনে পেয়েছি.
_ওটা এক্ষনি আমাকে দাও আর তোমার দাদির কাছে গিয়ে গল্প করো(মজিদ)
_ওকে দাদু(তৃষা ঘর থেকে চলে যায়)
_সিমা কালই তোমরা শহরে চলে যাবে।আমি আর কাউকে হারাতে চাইনা(মজিদ)
_বাবা এসব অনেক বছর আগের কথা।তাছাড়া সামান্য একটা নুপুর ই তো।আপনি ভয় পাবেন না।তৃষার সাথে এখনো সেই রক্ষাকবজ আছে(সিমা)
_তবু ও কালকেই তোমরা যাচ্ছ(মজিদ রেগে)
_ওকে বাবা।
.
সব কথা শুনে দড়জার আড়ালে থাকা কারো মুখে হাসি ফোটে।
.
পরেরদিন,
তৃষা অনেক খুশি উজানপুর এসে তাই ওর বাবা কয়েকদিন থাকার কথা মজিদ কে বলেন।অনেক চেষ্টার পর মজিদ রাজি হয়।
অন্যদিকে,
_মনে হচ্ছে আরো কার্যকর প্লান তৈরি করতে হবে।ওরা এখানে যেনো কখনো না আসে সেই ব্যবস্থা করতে হবে(আগন্তুক ১)
_হ্যাঁ,আমি সবকিছু ভেবে রেখেছি।এতদিনের প্লান ওই মেয়ের জন্য কিছুতেই শেষ হতে দেওয়া যাবেনা।প্রয়োজনে ওকে ও দিশার মতো শেষ করে দেবো।(আগন্তুক ২)
.
দুজনেই সবার আড়ালে গভীর ষড়যন্ত্রের জাল বুনতে থাকে।
,,
ক্রিং ক্রিং
_হ্যালো তৃষা.কেমন আছিস?(সিয়াম)
_ভালো.তুমি?আচ্ছা শোন তুমি কি উজানপুর আসতে পারবে?(তৃষা)
_হ্যাঁ,কিন্তু কেনো?সবাই ঠিক আছে তো?
_আরে সবাই ঠিক আছে,এখানে আমি রহস্যের গন্ধ পাচ্ছি।তুমি তো এসব কেস ভালো পারো।দেখি এখানে এসে কি করো।
_ওকে,ডিটেলস বল।
_আগে আসো তারপর সব বলছি।আর কাউকে রহস্যের কথা কাউকে বলবেনা।
_ওকে.কাল আসছি বাই।
টুট টুট
|এতক্ষন তৃষা সিয়ামের সাথে কথা বলছিলো।ওরা পাশাপাশি ফ্লাটে থাকে।সিয়াম ইন্টার ২য় বর্ষে পড়ে।অনেক মেধাবী ছাত্র। গোয়েন্দাগিরি করা ওর এক প্রকার শখ|
_কার সাথে কথা বলছিলি?(সিমা)
_সিয়াম ভাইয়া কল দিছিলো।বললো আমাদের এখানে কাল আসবে।
_ওহ আচ্ছা,
.
পরেরদিন,সিয়াম বাসা থেকে উজানপুরের উদ্দেশ্যে রওনা দেয়।২ঘন্টা পর তৃষাদের বাড়ি পৌছেঁ।সিমা সিয়ামকে নিজের ছেলের মতোই ভালোবাসে।সিয়াম খুব মিশুক টাইপের ছেলে তাই খানিক্ষনের মধ্যেই সবার সাথে ভাব জমিয়ে ফেলে।কিন্তু তৃষার চাচা ও চাচি সিয়ামের আসায় মোটেও খুশি না।
দুপুরে খাওয়া দাওয়ার পর তৃষা ও সিয়াম গল্প করে।
_এখন কি রহস্য আছে এখানে?(সিয়াম)
_সেটা ঠিক আমি ও জানি না।(সেদিনের নুপুর পাওয়ার ঘটনা বলে)তুমি কয়েকদিন থাকো বুঝে যাবে।দাদি,দাদু সবাই আমাকে হারানোর ভয়ে আছে।আরো কিছু লুকাচ্ছে।
_আচ্ছা.শোন আমার পরীক্ষা তাই যা করার তারাতারি করতে হবে.আমার মাথায় একটা প্লান এসেছে।এর মাধ্যমে আমরা সব জানতে পারবো।তুই পারবি তো?
_ok বলো কি প্লান!
_শোন.
_Ok পারবো.তাহলে কাল হবে।এখন চলো আমাদের বাড়িটা তোমাকে দেখাই।
_Ok চুনা চলো(তৃষা দুষ্টমি করে)
.
_মা সিয়াম ভাইয়াকে সাথে নিয়ে আমাদের বাড়িটা একটু ঘুরে দেখবো?
_হুম.তবে সাবধানে।পুরনো বাড়ি তো বিপদ আপদ হতেই পারে
_ওকে আন্টি(সিয়াম)
,
সিয়ামকে নিয়ে তৃষা পুরো বাড়ি ঘুরে দেখতে লাগলো।হঠাৎ একটা ঘরের দরজার সামনে এসে ওরা দাড়ায়।দরজার সামনে ১টা নুপুর রক্তমাখা অবস্থায় পড়ে আছে।
,,,
সিয়াম নুপুরটা হাতে নিয়ে পর্যবেক্ষন করে।অনেক পুরানো নুপুর কিন্তু রক্তের দাগ একদম তাজা।হয়ত ২/৩ঘন্টার আগে হবে।
_এটাই কি সেই নুপুর?
_না,এটা না।
তৃষা আর সিয়াম কথা বলছিলো এমন সময় যে ঘরের দরজার সামনে নুপুর পেয়েছিলো সেই ঘর থেকে একটা মেয়েলি কন্ঠের আওয়াজ শুনতে পায় ওরা।
,
_আমি যা শুনছি তুমি ও কি তাই শুনতে পাচ্ছ?(তৃষা)
_হুম ভয় পেওনা।আমাকে দড়জাটা খুলতে সাহায্য করো(সিয়াম)
তৃষা একটা ভারী পাথর সিয়ামকে এনে দেয়।সিয়াম সেটা দিয়ে দরজার তালা ভেঙ্গে ফেলে।তারপর সাবধানে ঘরে প্রবেশ করে।
_'বাচঁবি না তুই,এই বংশের কোন মেয়ে সন্তানকে বাচঁতে দেবোনা আমি'
_কে তুমি?(সিয়াম)
.
কোন উওর পাওয়া গেলোনা।সিয়াম এসব অশরীরি তে বিশ্বাস করেনা।তাই ভালোকরে ঘরটা দেখতে থাকে।বুক সেলফের দিকে তাকিয়ে একটা রহস্যের হাসি দেয় সিয়াম।তৃষা তো ভয়ে চুপসে গেছে।সিয়ামের হাত যে তৃষা ধরে আছে সেটা ও খেয়াল নেই।
_ঊফ আস্তে ধরো,হাতটা তো ভেঙ্গেই যাবে(সিয়াম মজা করে)
_সরি।প্লীজ এখান থেকে চলো,ভয় করছে।
_ধুর পাগলি কিসের ভয়?আচ্ছা চল।আর হাতটা ধরে থাকো,প্রতিষ্ঠিত হই তারপর আন্টিকে বলে এই হাত সারাজিবনের জন্য আমার করে নেবো😍...
,
তৃষা সিয়ামের কথায় লজ্জা পেয়ে দৌড়ে নীচতলায় চলে যায়।রাতে সবাই একসাথে খাওয়া দাওয়া করে ঘুমিয়ে পড়ে।
সকালবেলা,
অনেক বেলা হয়ে যায় কিন্তু তৃষা এখনো নাস্তা করতে আসছে না দেখে সিমা তৃষার ঘরে যায়।কিন্তু তৃষা ঘরে নেই।সারাবাড়ি খুজেঁ ও তৃষাকে পাওয়া যায়না।তবে তৃষার ঘরে রক্তমাখা নুপুর পায় মজিদ।এবার সবার চোখে পানি তবে দুজনে খুব খুশি,কিন্তু সেটা প্রকাশ করছে না তারা।সিমা চিৎকার করে কাদঁছে,মজিদ তার ছেলেকে কথা শোনাচ্ছে আর নিরবে চোখের পানি ফেলছে।
_তোকে বলেছিলাম এখান থেকে যা,দেখলি কি হলো?চিনতে পেরেছিস,এই সেই নুপুর যা দিশার মৃত্যুর সময় ওর ঘরে পেয়েছিলাম।২১ বছর পর সেই ঘটনার পুনরাবৃত্তি হবে আবার(মজিদ)
_নিশ্চুপ..
_দাদু কিছু মনে না করোনা,তোমরা কি বলছো কিছু বুঝতে পারছি না.প্লীজ খুলে বলো(সিয়াম)
_কি হবে আর বলে?পারবে আমার তৃষাকে এনে দিতে?
_চেষ্টা করবো দাদু।বলো,
_শোনো তবে,প্রায় ২২ বছর আগের কথা।তখনো আমাদের নাচ ঘরে নাচনেওয়ালী দিয়ে নাচ করানো হত।আমার বাবা তখনো বেচেঁ ছিলেন।আমরা ছিলাম ২ভাই আর ১বোন।আমি,আজাদ আর দিশা।তারপর একদিন সকালে বাড়ির সামনের গাছে ১টা মেয়ের ঝুলন্ত লাশ পাই।
_তারপর কি হলো!
_তারপর লাশ দেখতে যাই।লাশটা ছিলো আমাদের নাচঘরের নাচনেওয়ালী শিলার।আমরা সবাই বেশ অবাক হয়েছিলাম।কারন মেয়েটা সবসময় হাসিখুশি থাকতো।সে আত্নহত্যা করবে সেটা অভাবনীয়।ওর হাতে ১টা চিঠি পেয়েছিলাম তাতে লেখা ছিল শিলা আবার ফিরে আসবে এবং প্রতিশোধ নিবে।আর হ্যাঁ এই নুপুর শিলার পায়ে সবসময় থাকতো।এ ঘটনার পর থেকে বাবার শারীরিক অবস্থা দিনে দিনে খারাপ হয়।তাই বাবা সম্পত্তির দলিল আমার হাতে দেন।দিশাকে বাবা খুব ভালোবাসতেন তাই অর্ধেক সম্পত্তি ওর নামে করে দেন আর বাকি আমাদের দুই ভাইয়ের নামে।আজাদ আমাদের রক্তের কেউ না তবুও বাবা ওকে ছেলের মতোই ভালোবাসতেন।অন্য
দিকে,প্রতিদিন বাড়িতে ভুতুরে কান্ড শুরু হয়।কখনো লাশের পচাঁ গন্ধ,কখনো নাচের শব্দ।আমরা বুঝতে পারি শিলা ফিরে এসেছে।তাই আজাদ একজন হুজুরকে এনে শিলার আত্তাকে নাচঘরে বন্দি করে।হয়ত বন্দি করতেই পারেননি কারন তার কয়েকদিন পর বাবার অস্বাভাবিকভাবে মৃত্যু হয়।তার কয়েক মাস পর ১দিন দিশাকে খুজে পাচ্ছিলাম না,২দিন পর ঘরেই ওর লাশ পাই।দুজনের লাশের পাশেই এই নুপুর পেয়েছিলাম।এবার বুজতে পেরেছ
_হুম।সরি দাদু তৃষা দোতলার উওর দিকের ঘরে আছে।নুপুরের রহস্য জানতে আমরা এই নাটক করেছি।
.
_এসবের মানে কি সিয়াম?(সিমা)
_সরি আন্টি.
_কি!উত্তর দিকের ঘর মানে তো নাচঘর!(তৃষার দাদি)
.
সবাই নাচঘরের উদ্দেশ্যে দোতলায় যায়।
অন্যদিকে,
তৃষা নাচঘরের প্রতিটা জিনিস খুটিঁয়ে দেখছে।তৃষার চারপাশে যে এক অতৃপ্ত আত্না ঘুরে বেরাচ্ছে সেটা ও বুজতে পারে না।শিলার আত্না তৃষাকে মনে মনে ধন্যবাদ জানায় কারন তৃষার জন্য আজ ওর আত্নার মুক্তি হয়েছে।হঠাৎ বাইরে থেকে সবার চিৎকার শুনে তৃষা দরজা খুলে দেয়।
_মা তুই ঠিক আছিস(সিমা তৃষাকে জড়িয়ে ধরে)
_হ্যাঁ আমি তো একদম ঠিক আছি।তোমরা শান্ত হও(তৃষা)
_অনেক হয়েছে আর না।কাল সকালেই আমরা এখান থেকে চলে যাচ্ছি(তৃষার বাবা)
...
তৃষাকে সবকিছু খুলে বলে সিয়াম।আর ১টা দিন সময় আছে ওদের হাতে।এর মধ্যেই সব জানতে হবে ওদের।
_শত্রু ঘরেই আছে।একটু নজর রাখলেই সব জানতে পারবি।তোর মনে আছে সেদিন যে শব্দটা আমরা শুনেছিলাম?ওটা কোন আত্নার আওয়াজ ছিলো না।বুকশেলফের ভিতরে একটা ফোন লুকানো ছিলো।সেটাই ছিলো ওই শব্দের উৎস।
_তার মানে কেউ আমাদের ভয় দেখিয়ে কার্য হাসিল করতে চায়,এইত?
_হ্যাঁ,ঠিক তাই(সিয়াম)
_তাহলে কি করবে এখন?
_তোমার চাচার দিকে নজর রাখতে হবে।
_কি!কেনো?
_যা বলছি তাই করো..
_কি বলছো এসব?উনি আমাকে খুব ভালোবাসেন।হতে পারে উনি আমার আপন চাচা না তবু ও এরকম কাজ উনি করতেই পারেন না(তৃষা)
_তৃষা আবেগ দিয়ে চিন্তা না করে বিবেক দিয়ে ভাবো।তাছাড়া আমার ওপর কি ভরসা নেই তোমার?(সিয়াম তৃষার হাতে হাত রেখে)
_হুম,অনেক ভরসা করি।ওকে এখন থেকে নজর রাখছি।
_হুম..
.
সারাদিন তৃষা ওর চাচার দিকে নজর রাখে।তেমন সন্দেহজনক কিছু চোখে পড়েনা তৃষার।সন্ধ্যার দিকে তৃষা ওর চাচার ঘরের সামনে দিয়ে যাচ্ছিলো।এমন সময় কিছু কথা শুনে তৃষা দরজার আড়ালে দাড়িয়ে যায়।
_তুমি এসব করা বন্ধ করো.আমি আর তোমার সাথে নেই।তাছারা শিলার আত্না হয়ত মুক্তি পেয়ে গেছে।ও ছাড়বেনা তোমাকে।কারন তোমার বাবার পাপের সাজা তোমাকেই দিবে(তৃষার চাচি)
_আহ চুপ করো তো।বাবা যা করেছে আমার জন্যই তো করে চেয়েছিলো।সব সম্পত্তি আমাদের করার জন্য ই তো পরিকল্পনা করে প্রথমে শিলাকে খুন করে।তারপর শিলার আত্নার অজুহাতে দিশাকে খুন করে।আর ওই নুপুরটা লাশের পাশে রাখায় সবাই ভেবেছে এটা শিলার কাজ।হা হা।তবে শিলার আত্না যে সত্যি ফিরে আসবে সেটা ভাবেনি বাবা(চাচা)
_সম্পত্তির লোভ ছেড়ে দাও।আমরা যেমন আছি ভালো আছি।সময় থাকতে এসব থেকে সরে এসো।
_বকবক না করে,কিভাবে তৃষাকে মারা যায় সেটা ভাবো.তৃষা না থাকলে ওর বাবা আর মা তো পাগল হয়ে যাবে।আর মজিদ কে হ্যান্ডেল করা ব্যাপার না(তৃষার চাচা)
_কি সব বলো?উনি তোমার চাচা হন।আমি নেই তোমার সাথে(তৃষার চাচি)
_কিসের চাচা?আমার বাবা ওনার আপন কেউ না।আর তুমি সাহায্য না করলে করতে হবে না কিন্তু আমার পথের কাঁটা হয়ে দাড়ালে তার পরিণতি খারাপ হবে।
.
তৃষা ওর চাচা-চাচির এমন বার্তালাপ শুনে অবাক হয়ে যায়।যেনো নিজের কানকে ও বিশ্বাস করতে পারছে না।দরজার দিকে কেউ আসতেছে বুঝতে পেরে তৃষা দরজার কাছ থেকে চলে যায়।সিয়ামের কাছে সব খুলে বলে।
.
_আমি ঠিক এটাই সন্দেহ করেছিলাম।তার মানে শিলার আত্না এখনো আছে।তবে সে তোমার ক্ষতি করবেনা।কারন,তোমার যদি খারাপ চাইতো তবে সেদিন নাচঘরেই তোমার ক্ষতি করতে পারতো.(সিয়া_আমি ঠিক এটাই সন্দেহ করেছিলাম।তার মানে শিলার আত্না এখনো আছে।তবে সে তোমার ক্ষতি করবেনা।কারন,তোমার যদি খারাপ চাইতো তবে সেদিন নাচঘরেই তোমার ক্ষতি করতে পারতো.(সিয়াম)
_হুম ঠিক বলেছো.(তৃষা)
_চলো নাচঘরে চলো.সাবধানে কেউ যেনো দেখতে না পায়.
_এই রাতে সেখানে যাবে?না মানে,,
_কিছু হবে না পাগলি.চলো আমার সাথে(সিয়াম তৃষার হাত ধরে নিয়ে নাচঘরের দিকে যায়)
..
অন্যদিকে,
তৃষার মা সব জামাকাপড় গুছিয়ে নেয়।সকালে শহরে ফিরে যাবে তৃষারা।
.....
তৃষা আর সিয়াম নাচঘরে পৌছেঁ.সিয়াম ঘরের সবকিছু নিখুতভাবে পর্যবেক্ষন তৃষা আর সিয়াম নাচঘরে পৌছেঁ.সিয়াম ঘরের সবকিছু নিখুতভাবে পর্যবেক্ষন করে।
_তৃষা আমার মনে হয় শীলার আত্না এখানেই আছে।চলো আমরা তাকে ডাকি।
_কিন্তু আমরা তো দুজন!চক্রে তো চারজন দরকার।তাহলে কিভাবে সম্ভব?
_চক্র না এমনি একমনে ডাকবো.আমার বিশ্বাস শিলা সাড়া দিবে।
.
সিয়াম কথা শেষ করার আগেই নাচঘরের দরজা বন্ধ হয়ে যায়।ঘরের ভিতর জ্বলে ওঠে অনেক মোমবাতি।তৃষা আর সিয়াম অবাক হয়।কিছুক্ষনের মধ্যে ওদের সামনে এক অবয়ব হাজির হয়।তৃষা ভয়ে সিয়ামকে জড়িয়ে ধরে।অবয়বটি কথা বলে,
_আমি ই শিলা.বলো তৃষা জানতে চাও?তোমার কাছে আমি কৃর্তঙ্গ.ধন্যবাদ(শিলা)
_আ আমার কাছে আপনার কিসের কৃর্তঙ্গতা?(তৃষা ভয় জড়িত _আ আমার কাছে আপনার কিসের কৃর্তঙ্গতা?(তৃষা ভয় জড়িত কন্ঠে)
_আজ তোমার জন্যই তো আমি ওই বাক্স থেকে মুক্তি পেয়েছি।সেদিন যে বাক্সটা তুমি খুলেছিলে তার ভিতরেই আমি বন্ধি ছিলাম(শীলা)
_আচ্ছা বুজলাম।তাহলে আপনি কিছুদিন আগে নুপূরের মাধ্যমে কিভাবে সবাইকে ভয় দেখিয়েছেন?(সিয়াম)
_না আমি কিছু করিনি।আর আমার কাছে নুপূর নেই।তাছাড়া,আমি এখনো এই ঘরের বাইরে বেড় হতে পারিনা।যতক্ষন দরজায় ওই তাবিজ লাগানো থাকবে ততক্ষন আমি এই ঘরেই সীমাবদ্ধ।
_তাহলে এসব চাচা ই করেছেন!
_হ্যাঁ,তৃষা এ সবকিছু তোমার চাচা আর তার বাবা করেছে।
.
_কি?চাচার বাবা?মানে আজাদ দাদু?তা কি করে সম্ভব?উনি তো অনেক বছর আগেই নিরুদ্দেশ হয়েছেন(তৃষা)
_সব ধোকা.ও এখান থেকে দূরে আছে আমার থেকে বাচাঁর জন্য।আর ওখান থেকেই কলকাঠি নাড়ছে।সম্পত্তির লোভ ওকে পশুর চেয়ে নিকৃষ্ট করেছে(শিলা)
_আপনার হাত থেকে বাচাঁর জন্য কেনো পালাবে?একটু ক্লিয়ার করে বলুন প্লীজ(সিয়াম)
_আমি আজাদ কে ভালোবাসতাম।কিন্তু ও আমার সাথে প্রতারনা করে।পরে বলে একজন নাচনেওয়ালীকে ব্যবহার করা যায় তাকে বউ করা যায় না।এর কিছুদিন পর আমি গর্ভবতী হই।এই খবর আজাদ বেশ ভালো ভাবে মেনে নেয়।কিন্তু ওটা যে ওর চাল ছিলো তা আমি বুজিনি।একদিন রাতে বাগানে আমাকে দেখা করতে বলে।আমি খুশি মনে বাগানে যাই।সেটা ছিলো সবচেয়ে বড় বোকামি।বাগানে যাবার পর ওর আসল রূপ বুজতে পারি।কিন্তু ততক্ষনে আমাকে ও মারার চেষ্টা করে।এক পর্যায় ও আমাকে শ্বাসরোধ করে খুন করে।তারপর গাছের সাথে লাশ ঝুলিয়ে দেয়।এতে সবাই ভাবে আমি আত্নহত্যা করেছি।(শিলা)
_সত্যি আপনার সাথে অনেক অবিচার হয়েছে।কিন্তু তৃষার ফুফু দিশাকে কে কেনো খুন করলেন?
_আমি কাউকে খুন করিনি।সবকিছু আজাদের চক্রান্ত ছিলো।আমার নুপূর এর সাহায্যে ও নিজের কাজ হাসিল করেছে।যেনো সবাই ভাবে ওটা আমার কাজ।
_কিন্তু দিশাকে কেনো খুন করে?
_সম্পত্তির জন্য।শুনেছিলাম দিশার নামেই সম্পত্তির অর্ধেক লেখা ছিলো।আর দিশাকে শেষ করে দেওয়ায় সেই সম্পত্তির অর্ধেক পায় আজাদ।আর এখন পড়ে আছে তৃষার পিছনে(শিলা)
_হ্যাঁ,তৃষা সন্ধ্যার সময়ে ওর চাচার সব কথা শুনে ফেলেছে।অনেক ধন্যবাদ আপনাকে।
_ধন্যবাদ দেওয়ার কিছু নেই।দয়া করে আমার জন্য আর একটু সাহায্য করো।
_অবশ্যই.বলুন কি করতে হবে!
_এই ঘরের দরজায় যে তাবিজ বেধেঁ রাখা আছে সেগুলা সরিয়ে দাও তাহলে আমি এই বদ্ধঘর থেকে মুক্তি পাবো আর আমার প্রতিশোধ নিতে পারবো।
_ঠিক আছে।আমরা আসছি এখন।
.
তৃষা আর সিয়াম ঘর থেকে বের হয়ে দরজার তাবিজ সরিয়ে দিলো আর সেই সাথে শুরু হলো এক অতৃপ্ত আত্নার প্রতিশোধ।
পরেরদিন সকালে,
তৃষারা সবাই বাড়ি যাবার জন্য রেডি হয়।যখন সবাইকে বিদায় জানিয়ে দরজার দিকে এগোয় তখনি এক ব্যাক্তি দরজা দিয়ে এক প্রকার দৌড়ে বাড়ির ভিতর প্রবেশ করে।আচমকা এমন ঘটনায় সবাই আতঁকে ওঠে।মজিদ যেনো বড় শক খায়..
_আজাদ তুই?তুই বেচেঁ আছিস?কোথায় ছিলি এত বছর!(মজিদ)
_আমাকে ক্ষমা করে দে ভাই।আমি এত বছর শিলার হাত থেকে বাচাঁর জন্য লুকিয়ে ছিলাম।কিন্তু কথায় আছে না,পাপ বাপকে ও ছারে না।ঠিক তেমনি শিলার আত্না আমাকে ছারবেনা(আজাদ)
_কি বলছিস তুই কিছুই বুজতে পারছিনা.
_আমি বলছি সব(সিয়াম সবকিছু খুলে বলে সবাইকে)
_ছি ছি আজাদ আমার বাবা তোকে রাস্তা থেকে এনে এই বাড়ির ছেলের মর্যাদা দিয়েছিলো তার প্রতিদান তুই এইভাবে দিলি?আর তোর ছেলে শান্ত যাকে কিনা তৃষা আপন চাচার চোখে দেখতো সেই তৃষাকে খুন করতে চেয়েছিলো!অবশ্য ছেলে ও তো বাবার মতোই হবে।(মজিদ)
.
মজিদ কথা শেষ করার সাথে সাথে প্রচন্ড বাতাস শুরু হয়।কিছুক্ষেন মধ্যে শিলার আত্না উপস্থিত হয়।সবাই চমকে যায়।আজাদ দৌড়ে দরজার দিকে পালানোর চেষ্টা করে কিন্তু শিলা আজাদকে ধরে ফেলে।অনেক আকুতি মিনতি করে আজাদ।কিন্তু হঠাৎ করে আজাদকে নিয়ে শিলা অদৃশ্য হয়ে যায়।শান্ত প্রচুর পরিমানে ঘামছে।
_এত বছরের পাপের শাস্তি পেলো আজাত।এটাই ওর প্রাপ্য ছিলো।আর শান্ত এখনো সময় আছে নিজেকে বদলে ফেলো।(মজিদ)
_আমাকে ক্ষমা করে দে তৃষা।আমি ভালো হয়ে যাবো।(শান্ত)
_হ্যাঁ,এবার থেকে সত্যিকারে ভালোবাসতে শেখো।তোমাকে খুব ভালোবাসি চাচ্চু(তৃষা)
_হুম.
.
সবকিছু মিটমাট হয়ে যায়।তৃষারা আরো কয়েক দিন পর শহরে চলে যায়।
কিছুদিন পর,,
তৃষা কলেজে ভর্তি হয়।সিয়াম এইচ.এস.সি পরিক্ষায় ভালো রেজাল্ট করে অনার্সে ভর্তি হয়।মাঝে মাঝে দেখা করা,ফোনে কথা বলা এভাবে ভালোই কাটছে দিন।তৃষার পরিবার এবং সিয়ামের পরিবার ওদের সম্পর্কের ব্যাপারে জানে।তাই ওদের বিয়ে ঠিক করে ফেলে।তৃষা HSC দেবার পর ওদের বিয়ে হবে।
সিয়াম লেখাপড়ার পাশাপাশি ওর বাবার অফিসে কাজ করে।।
.......
দেখতে দেখতে তৃষা Hsc পরিক্ষা ও দিয়ে ফেলে....
কয়েক দিন পর,
তৃষা আর সিয়ামের বিয়ে হয়ে যায়।। সুখে জিবন -যাপন করে ওরা।
----------সমাপ্ত-------
0 Response to "নুপূর | তাসমিয়া তাসনিন প্রিয়া"
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন