Ads Golpo.Best Kobita.Best

search

ফেলুদার গোয়েন্দাগিরি | পর্ব - ১


মুল গল্পের
 নামঃ
ফেলুদা - ১ | ফেলুদার গোয়েন্দাগিরি | সত্যজিৎ রায়
মুল বইয়ের
নামঃ
এক ডজন গপ্‌পো, ১৯৭০
পাহাড়ে ফেলুদা, ১৯৯৬
মূলসূত্রঃEBanglaLibrary.Com

পর্ব - ১ | পর্ব - ২ | পর্ব - ৩ | পর্ব - ৪ | পর্ব - ৫ | পর্ব - ৬ | পর্ব - ৭ | এক পাতায় সম্পূর্ণ

রাজেনবাবুকে রোজ বিকেলে ম্যাল্‌-এ আসতে দেখি। মাথার চুল সব পাকা, গায়ের রং ফরসা, মুখের ভাব হাসিখুশি। পুরনো নেপালি আর তিব্বতি জিনিস-টিনিসের যে দোকানটা আছে সেটায় কিছুক্ষণ কাটিয়ে বাইরে এসে বেঞ্চিতে আধঘণ্টার মতো বসে সন্ধে হব-হব হলে জলাপাহাড়ে বাড়ি ফিরে যান। আমি আবার একদিন ওঁর পেছন পেছন গিয়ে ওঁর বাড়িটাও দেখে এসেছি। গেটের কাছাকাছি যখন পৌঁছেছি, হঠাৎ আমার দিকে ফিরে জিজ্ঞেস করলেন, ‘কে হে তুমি, পেছু নিয়েছ?’ আমি বললাম, ‘আমার নাম তপেশরঞ্জন বোস।’ ‘তবে এই নাও লজেঞ্চুস’ বলে পকেট থেকে সত্যিই একটা লেমন-ড্রপ বার করে আমায় দিলেন, আর দিয়ে বললেন, ‘একদিন সকাল সকাল এসো আমার বাড়িতে— অনেক মুখোশ আছে; দেখাবো।’
সেই রাজেনবাবুর যে এমন বিপদ ঘটতে পারে, তা কেউ বিশ্বাস করবে?
ফেলুদাকে কথাটা বলতেই সে খ্যাক করে উঠল।
‘পাকামো করিসনে। কার কিভাবে বিপদ ঘটবে না-ঘটবে সেটা কি মানুষকে দেখলে বোঝা যায়?’
আমি দস্তুরমতো রেগে গেলাম।
‘বা রে, রাজেনবাবু যে ভাল লোক, সেটা বুঝি দেখলে বোঝা যায় না? তুমি তো তাকে দেখোইনি। দার্জিলিং-এ এসে অবধি তো তুমি বাড়ি থেকে বেরোওইনি। রাজেনবাবু নেপালি বস্তিতে গিয়ে গরিবদের কত সেবা করেছেন জান?’
‘আচ্ছা বেশ বেশ, এখন বিপদটা কী তাই শুনি। আর তুই কচি খোকা, সে বিপদের কথা তুই জানলি কী করে?’
কচি খোকা অবিশ্যি আমি মোটেই না, কারন আমার বয়স সাড়ে তের বছর। ফেলুদার বয়স আমার ঠিক ডাবল।
সত্যি বলতে কি— ব্যাপারটা আমার জানার কথা নয়। ম্যাল-এ বেঞ্চিতে বসেছিলাম— আজ রবিবার, ব্যান্ড বাজাবে, তাই শুনব বলে। আমার পাশে বসেছিলেন তিনকড়িবাবু, যিনি রাজেনবাবুর ঘর ভাড়া নিয়ে দার্জিলিং-এ গরমের ছুটি কাটাতে এসেছেন। তিনকড়িবাবু ‘আনন্দবাজার’ পড়ছিলেন, আর আমি কোনওরকমে উঁকিঝুঁকি মেরে ফুটবলের খবরটা দেখার চেষ্টা করছিলাম। এমন সময় হাঁপাতে হাঁপাতে ফ্যাকাসে মুখ করে রাজেনবাবু এসে ধপ করে তিনকড়িবাবুর পাশে বসে গায়ের চাদরটা দিয়ে কপালের ঘাম মুছতে লাগলেন।



তিনকড়িবাবু কাগজ বন্ধ করে বললেন, ‘কী হল, চড়াই উঠে এলেন নাকি?’
রাজেনবাবু গলা নামিয়ে বললেন, ‘আরে না মশাই। এক ইনক্রেডিবল ব্যাপার!’
ইনক্রেডিবল কথাটা আমার জানা ছিল। ফেলুদা ওটা প্রায়ই ব্যবহার করে। ওর মানে ‘অবিশ্বাস্য’।
তিনকড়িবাবু বললেন, ‘কী ব্যাপার?’
‘এই দেখুন না।’
রাজেনবাবু পকেট থেকে একটা ভাঁজ করা নীল কাগজ বার করে তিনকড়িবাবুর হাতে দিলেন। বুঝতে পারলাম সেটা একটা চিঠি।
আমি অবিশ্যি চিঠিটা পড়িনি, বা পড়ার চেষ্টাও করিনি; বরঞ্চ আমি উলটো দিকে মুখ ঘুরিয়ে গুনগুন করে গান গেয়ে এমন ভাব দেখাচ্ছিলাম যেন বুড়োদের ব্যাপারে আমার কোন ইন্টারেস্টই নেই। কিন্তু চিঠিটা না পড়লেও, তিনকড়িবাবুর কথা আমি শুনতে পেয়েছিলাম।



‘সত্যিই ইনক্রেডিবল। আপনার উপর কার এমন আক্রোশ থাকতে পারে যে আপনাকে এভাবে শাঁসিয়ে চিঠি লিখবে?’
রাজেনবাবু বললেন, ‘তাই তো ভাবছি। সত্যি বলতে কি, কোনদিন কারও অনিষ্ট করেছি বলে তো মনে পড়ে না।’
তিনকড়িবাবু এবার রাজেনবাবুর দিকে ঝুঁকে ফিসফিস করে বললেন, ‘হাটের মাঝখানে এ সব ডিসকাস না করাই ভাল। বাড়ি চলুন।’
দুই বুড়ো উঠে পড়লেন।

পর্ব - ১ | পর্ব - ২ | পর্ব - ৩ | পর্ব - ৪ | পর্ব - ৫ | পর্ব - ৬ | পর্ব - ৭ | এক পাতায় সম্পূর্ণ

0 Response to "ফেলুদার গোয়েন্দাগিরি | পর্ব - ১"

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন

মোট পৃষ্ঠাদর্শন